সমাজ আদৃত লেখক-জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর কিশোর গল্প “উড়াল পাখি”

340
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর কিশোর গল্প “উড়াল পাখি”

উড়াল পাখি

জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

পাখি ওড়ে পাখির মতোন। নীল আকাশে দুই ডানা মেলে যেভাবে পতপত করে ওড়ার কথা সেও ঠিক ঠিক সেভাবেই ওড়ে। উড়তে উড়তে পাখি নিজের বাড়ন্ত শরীরের কথা ভাবে। এই শরীরটা যেন পাখির নয়; অন্যকারো! চোখ, মুখ, বুক, হাত-পা সবকিছু যেন বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে। যে পাখির এতোদিন একটা মাত্র মন ছিলো; সেই পাখির এখন মনের কোন অভাব নেই। শুধু এখানেই শেষ নয়; পাখির প্রতিটি মনের হাজার হাজার চোখ আছে। প্রতিটি চোখের কোটি কোটি দরজা-জানালা আছে। প্রতিটি দরজা-জানলা খোলার জন্য আলাদা আলাদা তালা-চাবি আছে। বিস্ময়ে পাখির মাঝেমধ্যে ঘোর লাগে। তবে সেই ঘোরলাগাও পাখি উপভোগ করতে ছাড়ে না। ছাড়তে চায় না। পাখি ইচ্ছেমতো তাদের উপভোগ করে।

কেবল রাস্তায় হাঁটার সময় পাখির দিকে সব বয়সী পুরুষেরা যেভাবে বিধ্বংসী চোখে তাকায়; সেইসব চাহনির গভীরতা মাপার সাধ্য এখনও পাখির নাই। হয় নাই। সে শুধু এইটুকু বুঝতে পারে, এই চোখগুলো কোনো মানুষের চোখ নয়; পিশাচের চোখ! পাখির খুব ঘেন্না লাগে। মধ্যমা অংগুলি ঢুকিয়ে সেইসব বেহায়া-বেয়াদব চোখগুলোকে কোটর থেকে খুলে ফেলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু পারে না। যেটা পারে সেটা হল, মাথা নিঁচু করে রাস্তার একেবারে পাশ ঘেষে কোনোরকমে চলে আসে। এমনভাবে চলে আসে যেন ভূমিকম্প হলেও তার কিছুই যায় আসে না! আসবে-যাবে না!
পাখি রসুলপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। নতুন ভর্তি। বাবার চাকুরির সুবাদে পাখিকে ঘনঘন স্কুল পরিবর্তন করতে হয়। আজ কিশোরগঞ্জ তো কাল কোথায় পাখি জানে না। মানিকগঞ্জ অথবা নবাবগঞ্জ হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। অবশ্য পাখিদের পুরো পরিবার যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সবসময় অর্ধেক রেডি থাকে। কিছু ব্যাগ ঘুচিয়ে রাখে। এইসব কারণে পাখি সরকারি চাকরির নাম শোনতে পারে না। যাইহোক এই স্কুলে পাখির তেমন কেউ বান্ধবী নেই। ভর্তির দিন একই ক্লাসের আঁখির সাথে যতটা পরিচয় হয়েছিল, এখনও ততোটাই আছে। এরপর থেকে আঁখি সেই যে গেছে আর স্কুলে আসেনি! তবে পাখির মনে আঁখি একটা জায়গা করে নিয়েছে। নাম দুটোও কেমন যেন আগে থেকেই ঠিক করা! আঁখি-পাখি অথবা পাখি-আঁখি!!
মেয়েদের কমনরুমে প্রায় শ’দুয়েক ছাত্রীর মাঝে পাখি একা। কেউ কেউ পাখিকে দেখছে না এমনও নয়। এইতো একচিমনি সময় আগেই একটা মেয়ে পাখির দিকে আঙুল তুলে আরেকজনকে বলছিল, দেখ দেখ—মেয়েটি কী সুন্দর! একেবারে যেন আল্লাহর নিজের হাতে গড়া! কথাটি শোনামাত্র পাখি আরেকবার নিজেকে খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। তার নিজের দৃষ্টি নিজের কাছেই আবার ফিরে আসলো। না কোনো খুঁত নেই। একেবারে ১০০তে পাক্কা ১০০।
পাখিও তাদের দিকে একবার সিকিচোখ তুলেই সাথে সাথে মুখ নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। অনেকটা ইঁদুর যেমন মানুষের সাড়া-শব্দ পেলে গর্তের ভেতর চুপ করে থাকে, পাখিও তেমনি আছে। অবশ্য এমনি করে নিরবতার মাথা খাওয়া পাখির স্বভাবে নেই। অনুকূল পরিবেশ পেলে পাখিও পাখির মতোন কিচিরমিচির করতে জানে। শব্দের পালে হাওয়া দিতে জানে। এমনি সময়ে পাখি যখন নিজের ভেতর নিজেই উথাল-পাতাল করছে; ঠিক তখনই ইসরাফিল (আঃ)এর শিংগায় ২য় বার ফুঁক দেওয়ার মতোন দপ্তরী হাবুর ঘণ্টা বাজলো। শুরু হয়ে গেলো হাশরের মাঠের মতোন ধাক্কাধাক্কি। ঠেলাঠেলি। কার আগে কে ক্লাসে ঢুকবে। পাখিও বসে নেই। কোনোদিকে না থাকিয়েই দিল এক ভোঁ দৌড়। কিন্তু সেই দৌড় যে এমনি মর্মান্তিক দৌড় হবে; সেই একটি দৌড় যে পাখির মনের সব শান্তি বিনষ্টের কারণ হবে তা-ই বা কে জানত! দৌড়ের মাঝমাঝি সময়ে এসেই পাখি যেন কারো সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে গেলো। যার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলো, সেই আবার পাখিকে মাটি থেকে টেনে তুললো!
টেনে তুলতে যেয়ে পাখির বুকের উড়ন্ত পাখির সাথে আকাশের একটা মৃদু ধাক্কা লাগলো। চোখে চোখ পড়লো। কিন্তু দু’জনের কেউ কোনো কথা বললো না। নিরবে উত্তাল সাগরের শত-সহস্র ঢেউ হজম করলো! অতঃপর যে যার মতো নিজ নিজ ক্লাসের দিকে পথ মাপতে লাগলো। পথ মাপতে মাপতে পাখি একবার আকাশের দিকে তাকালো। আকাশও একবার পাখির দিকে তাকালো। দু’জনের কোটি কোটি চোখের সেকি অদৃশ্য মিলন হলো! কারো চোখের পলক যেন পড়ছেই না। তবুও তারা দু’জনেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো। পুরোক্লাস জুড়ে আকাশ পাখির কথা ভেবেছে। পাখিও আকাশের কথা ভেবেছে। কেউ কোনো কূল-কিনারা করে উঠতে পারেনি। এই অথই সাগরের গভীরতা তারা জানে না। অবশ্য তাদের জানার কথাও নয়।

সেদিন রাতে কারো চোখে ঘুম আসেনি। না আকাশের আর না পাখির। রাতের উপসংহারের দিকে পাখির কিছুটা তন্দ্রামতো এসেছিল। সেই তন্দ্রায় সে একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছে। একটি ছিমছাম সুন্দর গড়নের ছেলে স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে তার সাথে ধাক্কা খেয়েছে। আর কয়েকটি ছেলে অদূরে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। গাধার মতোন শিসের পর শিস দিচ্ছে। এই রকম রীতিমতো একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখার পর কারো স্কুলে যেতে ইচ্ছা হওয়ার কথা নয়। পাখিরও হয়নি। সে ব্রাশে একগাদা পরিমাণ পেস্ট মেখে বাসার ছাদের উপর গিয়ে দাঁড়ালো। তাদের ছাদ থেকে জনসাইয়ের বড় হাওর দেখা যায়৷ এখন হাওরে মাথা উপছানো জল নেই। একজন অসুস্থ রোগীর জিহবা ভেজাতে যতটুকু জল লাগে, ঠিক যেন ততোটুকু জল আছে! পাখির বয়সী কারো পক্ষে এইসব ভারী ভাবনা ভাবা উচিত নয়; সেটা জেনেও পাখি এসব নিয়ে ভাবে! চিড়া ভাজার মত পাখি ভাবনাদেরও ভাজে, ভাজতেই থাকে।
মাথার উপর কয়েকটা গাংচিল উড়ছে। পাখি অনেকদিন গাংচিল দেখে না। গাংচিল গুলোকে পাখি তার নিজের জীবনের সাথে তুলনা করে। আজ এই গাঙে তো আগামীকাল অন্য গাঙে। ঠিক এমনি যেন পাখি। আজ এখানে, কাল ওখানে। এইসব বিচ্ছিন্ন ভাবনাদের মাঝে হঠাৎ পাখির চোখ পড়ে গতকালের ধাক্কা খাওয়া সেই ছেলেটির উপর। যে কিনা পাখিদের বাসার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। পাখি দাঁড়িয়ে না থেকে এমনভাবে বসে পড়লো, যেন ছেলেটির সমস্ত গতিবিধির উপর খেয়াল রাখা যায়। ছেলেটি একবার পাখিদের বাসার সামনের দিকে যায়, আরেকবার যায় পেছনের দিকে। এদিক-ওদিক তাকায়। ভাবখানা এমন যে হারানো ছাগল অথবা কবুতর খুঁজছে! বেশ কিছুক্ষণ এমনি করার পর এক প্রকার হতাশা নিয়ে সে সদর রাস্তার দিকে হাটঁতে থাকে। যে হাঁটায় কোনো তেজ নেই, অনেকটা মৃত মানুষের মতোন সে হাঁটা। মৃত মানুষকে যেমন খাটিয়ায় করে ধীরে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়; তেমনি হাঁটা! পাখি সবকিছু বুঝতে পারে। বুঝতে না পারার মতো শিশু পাখি নয়। সবচেয়ে বড় কথা পাখি এখন নিজের শরীরের একটা আলাদা চাহিদার কথা বেশ বুঝতে শিখেছে। কেবল কাউকে বলতে পারে না। পাখি অনেকবার ভেবেছে ছেলেটিকে ডাক দিয়ে বসতে বলবে। নাম-দাম, ঠিকানা এসব কিছু জানতে চাইবে। কিন্তু পাখির ভাবনারা বুকের ভেতর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। গলা বেয়ে মুখের দিকে আসে না৷ কেউ একজন আসতে দেয় না!

পরদিন স্কুলে আঁখির সাথে পাখির দৈবাৎ দেখা। কতোদিন পর যেন দুই মোহনার মিলনমেলা! পাখি বলল, সেই যে ভর্তি হয়ে গেলি তো গেলি, আর তোর নাম-গন্ধটি নেই।
আঁখি বলল, আর বলিস নারে। বাবা-মা কি যে বুঝে আর কি যে বুঝে না; সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। আমার বিয়ের কথা-বার্তা চলছে। পাত্র পক্ষ বলেছে মেয়েকে বেশি বাইরে দেওয়া যাবে না। এখন দিনকাল ভালো না। এই জন্য বাবা-মা আমাকে ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। ঘর আর উঠোন- এই এখন আমার পৃথিবী!
আঁখির কথা শোনে পাখি আকাশ থেকে পড়ে গেলো। বলল, এই বয়সে আবার বিয়ে কিরে? বড়জোর একটা প্রেম-টেম করতে পারিস। এরবেশি কোনোকিছু না।
আঁখি বলল, তুই কি প্রেম করিস নাকি?
পাখি মুচকি হেসে বলল, এখন করি না; তবে কোনোদিন করতেও তো পারি। কারো সাথে প্রেম করার একটা বিরাট সুবিধা হল, অন্য ছেলেরা গণহারে তোর দিকে চোখ মারবে না। ভাববে কোনো লাভ নেই। ওতো এনগেজড।
আঁখি বলল, কথাটা তুই মন্দ বলিসনি। তা কাউকে পছন্দ-টছন্দ করেছিস নাকি?
এরপর পাখি সেদিনের সমস্ত ঘটনা আঁখিকে খুলে বলল। একবিন্দুও ভ্যানিটি ব্যাগে মুড়ে রাখলো না। ছেলেটির বর্ণনা শোনে আঁখি বলল, ও তো আকাশ ভাইয়া। এই স্কুলের সবচেয়ে দামী ছাত্র। ক্লাস টেনে পড়ে। স্যাররাও অনেক সময় উনার হেলপ নেন।
গর্বে মনে মনে পাখির বুক ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগলো। এভাবে যদি আর কিছুক্ষণ ফুলতে থাকে, তাহলে পাখি গ্যাস ভর্তি বেলুনের মতোন আকাশে উড়তে থাকবে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। চলতে দেওয়া উচিতও না। পাখি নিজের মনে নিজেই লাগাম পরাতে পরাতে বলল, তুই আমাকে আকাশের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে দিতে পারবি?
আঁখি বলল, এটা কোনো ব্যাপার না; আজই পেয়ে যাবি। এখন ক্লাসে চল। ওই যে স্যার ক্লাসে ঢুকছেন।
পাখি কিছু বলল না। আঁখির বাম হাতের আঙুলগুলো চাপতে চাপতে ক্লাসের দিকে হাটঁতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে তার কেবলই মনে হতে লাগলো, সে আর একা নয়; এখন তার একটি বিশাল আকাশ আছে!!

রাতের যেই যেই প্রহরে মোরগ ডাকে, সেই সেই প্রহরে পাখির কচি বুকটা দুরুদুরু করে কেঁপে উঠল। কেঁপে উঠতে লাগলো। কিন্তু ফোন দিবে কি দিবে না, কিছুতেই ঠিক করতে পারলো না। কেবলই মনে হয়েছে আমি দিবো কেন, সে দিতে পারে না৷ কিন্তু পাখির সেই সে তার ফোন নাম্বার জানে কিনা তাও পাখি জানে না। অবশেষে রাত যখন ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে চাইছে এমন সময় পাখি রিং দিলো। পাখির রিং দিতে দেরি হলো, কিন্তু আকাশের রিসিভ করতে দেরি হলো না। নির্ঘুম রাত্রির সমস্ত ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আকাশ বলল, হ্যালো কে?
পাখির বুকে এতক্ষণ যতটা ধুঁকধুঁক ছিলো, হঠাৎ করে তা হাজার হাজার গুণ বাড়তে লাগলো। তবুও সে আমতা আমতা করে কোনোরকমে বলল, আমি পাখি। সেদিন যার সাথে তুমি ধাক্কা খেয়েছিলে!
আকাশ একলাফে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরা এক নিমিষে জেগে উঠলো। বাজপড়া পাখির মতোন থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, কেমন আছ তুমি?
পাখি বলল, আমি মোটেই ভালো নেই। আমার কী হয়েছে আমি জানি না। সেদিনের পর থেকে কেবল তোমার কথা মনে হয়। একবার ঘুম আসলে ১০বার ঘুম ভেঙে যায়। তুমি কেমন আছ আকাশ?
আকাশ কী উত্তর দেবে কিছুই ভেবে পেলো না। মনে মনে বেশ কয়েকবার সাত-পাঁচ করে তারপর বলল, তুমি যেমন আছ, আমিও তেমনি আছি পাখি। ঘুম কাকে বলে এই ক’দিন আমি দেখিনি। মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে আমি আর আমার আকাশ নেই। পাখির হয়ে গেছি।
আকাশের কথা শোনে পাখি ডানা ছাড়াই আকাশে পতপত করে উড়ুক্কু পাখির মতোন উড়তে লাগলো। উড়তে উড়তে তার ইচ্ছে হলো আকাশের হৃদয়ের এককোণে একটু বসতে। অতঃপর প্রথম বন্ধনীর মতোন তার গলা জড়িয়ে ধরে বলতে, আকাশ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের মাথার উপরের বিশাল আকাশ যতোটা বড়, আমিও তোমাকে ঠিক ঠিক ততোটা ভালোবাসি। কিন্তু পাখি কিছুই বলতে পারলো না। কণ্ঠনালির ঠিক মাঝখানে এসে কাঁটা বিঁধার মতো কথাগুলোও আটকে গেলো।
অধিক শোকে যেমন মানুষ পাথর হয়; তেমনি অনেক সময় অধিক সুখেও পাহাড় হয়। পাখির কথা শোনে আকাশ যেমন অচল পাহাড়ে পরিণত হলো, তেমনি আকাশের কথা শোনে পাখিও ঢেউহীন সাগরের মতোন নিরব হয়ে গেলো। যদিও এই নিরবতা দু’জনের কাছেই মৃত্যুতুল্য। তবু্ও তারা নিথর, নিস্তব্ধ, নিসর্গ। কী বলবে আর কী বলবে না– কিছুই জামার পকেটে অথবা আঁচলের গিঁটে বাঁধতে পারলো না। হৃদয়ে হৃদয়ে কয়েক লোকমা সময় কানাকানি করার পর আকাশ বলল, গতকাল তোমাদের বাসার আশেপাশে গিয়েছিলাম। তোমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সবখানে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।
আঁখি বললো, আর কোনোদিন এসো না যেনো। বাবা জানতে পারলে আমাকে পিটিয়ে পিটিয়ে আটার রুটি বানাবে।
আকাশ বলল, তোমাকে না দেখে, তোমার সাথে কথা না বলে আমি একদিনও থাকতে পারব না। স্কুলেও কথা বলা যাবে না। সবাই জেনে যাবে।
পাখি বলল, স্কুলে কথা বলার দরকার নেই। দূর থেকেই চুপচাপ দেখো।
আকাশ বলল, এভাবে কতোদিন চলবে?
পাখি বলতে গেলো, আমি জানি না। কিন্তু বলতে পারলো না। পাখির মা তার রুমে ঢুকছেন। পাখি ফোন কেটে দিলো। নদী যেমন জল বুঝে, গায়ক যেমন গান বুঝে তেমনি নারীও নারীর মন বুঝে। পাখির মা বলল, কিরে কার সাথে এতো কথা বলিস?
পাখি জানে এখনই ধরা পড়া যাবে না। তাই ঝটপট করে জবাব দিলো, আঁখি ফোন দিয়েছিল মা। স্কুলে যাব কিনা জানতে চাইল।
পাখির মা শরীফা বেগম আর কিছুই বললেন না। এক হ্যাঁচকা টানে পাখির হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হলেন৷

পরদিন থেকে পাখির জ্বর। এমন বিজাতীয় জ্বর কেউ কোনোদিন যেমন দেখেনি; তেমনি শোনেওনি। জ্বর সাধারণত সমস্ত শরীরেই আসে। কিন্তু পাখির জ্বর কেবল তার বুকের মধ্যিখানে। অন্য কোথাও জ্বর নেই। পাখির মা তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথাযথ ভাবে হাত বুলিয়ে এ কথার নিশ্চয়তা সত্যায়ন করেছেন। পাখিও একেবারেই ভাবলেশহীন। কোনোকিছুই মুখে দিচ্ছে না; এমনকি তেমন একটা কথাবার্তাও বলছে না। এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েকটি দিন। শরীফা বেগমের কপালের বলিরেখায় বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত ভাঁজ। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না; এসব কিসের আলামত? ঝড় নাকি বৃষ্টি?
এমনি এক বন্ধ্যা সময়ে পাখির বাবা শরীফ সাহেব বাসায় প্রবেশ করলেন। হাতে একটি সরকারি খাম। শরীফা বেগম আকাশ থেকে পড়লেন না। বুঝতে পারলেন, আবারও এখান থেকে উড়াল দিতে হবে। পাখির উড়াল অথবা উড়াল পাখি!!
===============
পরিচিতিঃ সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here