“চিঠি ”থেকে সাহিত্য এসেছে । গভীর আবেগ ধরে রাখে । কারো মন ভাঙ্গে কারো গড়ে । এ চিঠি সাহিত্যের মাপ কাঠিতে আজও সেরা । লিখেছেন সাহিত্যের সারথি রুমকি আনোয়ার

877
“চিঠি ”থেকে সাহিত্য এসেছে । গভীর আবেগ ধরে রাখে । কারো মন ভাঙ্গে কারো গড়ে । এ চিঠি সাহিত্যের মাপ কাঠিতে আজও সেরা । লিখেছেন সাহিত্যের সারথি রুমকি আনোয়ার

চিঠি

         রুমকি আনোয়ার

প্রিয়তম এ চিঠি যখন লিখছি তখন তুমি গভীর ঘুমে অচেতন । মুখে মৃদু হাসি বুঝি লেগে আছে । ডীম লাইটের নীল আলো অদ্ভুত এক আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে ঘরময় । খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে রাস্তার সোডিয়াম লাইটের ভূতুড়ে আলো । ক্রমাগত স্মৃতি হাতড়ে ফিরছি । কেন জানি নে মনে হয় জীবনটাই স্মৃতির প্রলেপ মাখা পলি মাটি । সেই যে ছোট্টটি , স্কুল ব্যাগ কাঁধে প্রায় ই পড়ে যেতুম । মুনমুন , শৈলী , মিথিলা মনে পড়ে আর কত নাম । ঘুম থেকে উঠতে প্রায় ই দেরী হতো । আজও অনেক কিছুতেই দেরী হয় । দূরাগত ট্রেনের হুইসেল আর গীর্জার ঘণ্টা ধ্বনি জানিয়ে গেলো রাত্রির দ্বিপ্রহর পেরিয়ে এসেছি । আচ্ছা , মনে পড়ে প্রায় ই বলতে তুমি জীবন একটা রেল গাড়ি যার ধাপে ধাপে কেবল স্টেশন কিন্তু গন্তব্য জানা নেই । রাবেয়া ম্যাডাম , রঞ্জিত স্যার টিফিন পিরিয়ড হৈ হুল্লুর । এক টাকার তেতুলের গোল্লা আচার । পাশের বাড়ির বিলাতি কুকুরের নিশুতি কান্না । রোজকার মত আজও আমার জ্বর । পারদ ১০৪ ছুঁয়ে গেছে । স্নান সেরে এলুম তুমি জেগে থাকলে কি রাগটাই না করতে । মনে আছে কি তোমার প্রথম দেখায় বলেছিলে বলত কৃষ্ণচূড়া লাল হয় কেন ? অবাক হয়ে তাকিয়েছিলেম । তুমি রেগে গেলে গালে লাল টোল পড়ে তাই চুরি করে নিয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়া বুঝলে । এক দিন হাত ছুঁয়ে গেলে বলেছিলে দেখো তো দীঘির জল ছুঁয়েছে কি নে । সত্যি বলছি সেদিন জল ই ছুঁয়েছিল । ব্যথার দান ফিরিয়ে দিতে তুমি দিয়েছিলে ছোট্ট একটা চিরকুট । ” পারলে আজকের চাঁদ টা শরীরে মেখে নাও ভানভাসি জোৎস্না নেমেছে ।” সে দিন হাত বাড়িয়ে জোৎস্না ছোঁয়া হয় নি । জীবনের অনেক কিছুই হয়ে উঠে না । পাহাড় ছোঁব ছোঁব বলে আজও পাহাড় ছোঁয়া হয় নি । তোমার দেয়া খামিটা পড়ে আছি । মহুয়ার গন্ধ মাখা মাতাল রাত । মাথাটা ঘুরাচ্ছে । চরণটা কি ছিল জানি নিশিথের অন্ধকারে মলয় সাগরে দূর সব ভুলে যাওয়া রোগটা আজকাল পেয়ে বসেছে । কবে না তোমাকে ভুলে যাই । কি গোস্বা করলে বুঝি তবে একশো একটা নীল পদ্ম হাতে ধরিয়ে দিব । আলতা মাখছি পা’য় । চুলে বেনুনি । কি জানি আমিও হয়ত রেনুকা দিদির মত পাগল হয়ে যাছি । শুনেছি পাবনা পাগলা গারদে আছে বিয়ে হয় নি কিন্তু কপালে সিঁদুর । এতো রাতে গেট খুলবার আওয়াজ পেলুম । রুনুর বুঝি শুটিং শেষ হলো । ওর জীবনটা শুটিং শুটিং এই গেলো ।ওর কষ্টটা বেশ বুঝতে পারি আমি । জীবন তার সূর্য দীঘল বাড়ি । পাশ ফিরলে বুঝি তুমি । মেয়ের লেপ টা সরে গেছে পায়ে পারলে টেনে দিও । পূবের আকাশটা লাল হয়ে এসেছে । কে জানে হয়ত শুরু হবে আরেকটি দুঃখী দিনের । তবুও জানি অনেকেই বলবে সুপ্রভাত । মৃতের শরীরের গন্ধ, লোবান নাকে এসে ভর করে । ঘুম কি আসবে একটা দীর্ঘ ঘুম । তুমি ঘুমোয় প্রিয় , ঘুমোয় । আমি চেয়ে থাকি বিষণ্ণ বিদায়ী চাঁদ। আর শুনো ডিম দিয়ে বেগুনের ঝুরি করা আছে সাথে রুটি । আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি আমায় ডেকো না কিন্তু । চাঁদের গ্রহনকাল লেগেছে আমার বদনে । বিদায় প্রিয়তম বিদায় ।তোমায় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু পারলুম কই আর । সব ক্ষয়ে যায় ,ক্ষয়ে যায় , ট্রেন যাচ্ছে যাচ্ছে যাচ্ছে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here