সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি ওপার বাংলার- বিকাশ চন্দ’র চারটি কবিতা “আগুন পুরুষ ” “অঙ্কুরে অমৃতে আত্মার স্মৃতি ” “জল সই”ও “জীবনের শস্য কণা”

480
সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি ওপার বাংলার- বিকাশ চন্দ’র চারটি কবিতা

বিকাশ চন্দ’র চারটি কবিতা

১। আগুন পুরুষ

দ্বিতীয়া চাঁদের কলায় কোথাও তো আছে
মাড় ভাতের অমৃত অনুভব,
হৃদ কমলের কোরকে যন্ত্রণা ও ছিল —
রক্ত বুক জানে যীশু ঈশ্বর আল্লাহ দোসর,
মাতৃস্তনের স্বাদ কে বোঝে
পরিণাম বোঝে না সর্বভুক কোঁচড়।
তুলসী তলায় সান্ধ্য প্রদীপ জ্বললে
মাথার উপর ডেকে ওঠে রাত পাখির কর্কশ ডাক,
থমকে থাকে বেড়ে ওঠে আজানের শব্দ ঋণ—
পাণিপথ কুরুপাণ্ডব দ্বৈরথ স্মৃতি ভার
পিশাচের নাচ দেখে অষ্ট প্রহর সংহার সংকেত।

পিশাচ গোলক গড়াচ্ছে বিশ্বময় স্বরূপ হীন
টলমল সাত সাগর তেরো নদী ভূত ভবিষ্যৎ ,
প্যালেস্টাইন মায়নামার মাখে প্রতিদিন ঘাম রক্ত মুক্তি—
কোথাও তো দখলদারি বৈভব খেলা মনুষ্যত্ব হীন,
রঘুপতি সেই কবে বলেছিল রাজ রক্ত খুঁজে ছিল কুল দেবী—
আহা রে ! গোত্রহীন আজন্ম আগুন স্রোত,
বড় ভয় বেড়ে ওঠে অগুনতি মানুষের সংযোগে—
অহেতুক আউড়ে চলে অতীতের রক্ত ঋণ কথা,
খেলা ঘরের বাইরে ও খেলা আতান্তরে
প্রত্ন ঘরে পূর্ণাহুতি সাজায় সর্বংসহা আগুন পুরুষ।

২। অঙ্কুরে অমৃতে আত্মার স্মৃতি

অন্ধকারের তফাৎ বোঝে শূন্যতায় আকাশ প্রদীপ
পরকিয়া আলো বোঝে চাঁদ কলা অসীম মায়া,
মায়া ময় চাঁদ টিপ মেখেছে কপালে চুম্বন রেখা—
অদ্বিতীয়া লজ্জা বেঁধেছে বাহুমূলে অপার আনন্দ,
অজানা সাধন মার্গ ছুঁয়ে বরাভয় জানে সাধন পীঠ
বিচূর্ণ আলো সময় পথ নীল অন্ধকারে মাঠের অতীত।

শরীর ছুঁলে কাঁপে প্রদীপের আলো তুলসী তলা
মর্মকথা বোঝে কি সূর্য মন্দির গীর্জা ঘণ্টা আজান,
কত প্রার্থনা গান শোনে সকাল পাখির শূন্য সাঁতার
চম্পা নদীর জলে তির তির ঢেউ মাখে গোধূলি আলো
জোড়া শালিক জানে কুঁড়ে ঘরের কান্না হাসি কথা
মন্ত্রমুগ্ধ শরীর তখন জড়োসড়ো শীতে কাঁপে বন পাতা।

স্বান্তনার ভাষা কাঁপে উধাও গাঙচিল ভেজা সমুদ্র হাওয়ায়
অতসী কেতকী বকুল জানে ফুলেদের অসহায় পরাগ রতি,
সকাল সূর্যের কাছে আয়ুকাল তপস্যায় উৎসর্গ প্রণাম
প্রতি সন্ধ্যা জানে উষ্ণতায় জ্বলে ওঠে নিবেদিত রাতের আহুতি,
মাটি ছুঁয়ে রাতের গভীরে শরীর স্নানে চলে জীবনের গান
শরীরে শরীর বেঁচে ওঠে অঙ্কুরে অমৃতে আত্মার স্মৃতি।

৩। জল সই

মরুভূমি বোঝে মরুদ্দান আত্মার ভেতরে হৃদয়ে অসুখ
স্বপ্ন মেঘ বৃষ্টি মেলামেশা প্রিয় নদী মুখ মোহনা আগ্রাসী,
কতনা শরীর পাঁজর উজাড় একাকী অনেক লখীন্দর
হা মুখ ঘর বিধবা দরজা আগলে শূন্য হাতে অভিমান।

উপচানো নদী জল ডেকে ছিল চল চর আঁচলে যাই
দু’দিকেই ছিল গাছ বাগান উজান ছুঁয়ে গেছে দুঃখী ঘর,
জলের সংসারী বলেছিল ফিরে যাও শুনেছে কি ঘূর্ণি জল
ভেজা হৃদয়ে অক্ষত অক্ষর মহিমা ভালোবাসা খোঁজে।

আগুন সময় আঁতকে ওঠে হরিণী শরীরের ঘ্রাণ টানে
বুক ভাসানো জলের খেলা কোলের উৎস আলোয়,
ভাসানী সময় তোর টানে গাঙচিলের নরম পালক উত্তাপ
চেনা মানুষের ভেজা চোখ টুপটাপ খসে পড়ে জলছবি।

শুভ লগ্ন এঁকে ছিল ঠিকুজি ঘর জানে বার্ধক্য বিমুখ কথা
কুণ্ডলী পাকানো পদ্ম নাভি পুড়ে ছিল জ্বলে ছিল বুক,
ঘরে বাইরে দেহের অসুখ হাজারো জ্বলনে জ্বলে না
ও গঙ্গা জল সই ভাসাও শরীর জোয়ার ভাটি টানে ।

৪। জীবনের শস্য কণা

জীবন মৃত্যু পাশাপাশি ঘর পোড়া চিত্রলেখা ভবিষ্যতের
এসব জানে আলো আঁধার অস্তিত্ব পথের সীমায়,
অদ্ভুত সময় এখন অদল বদল টুকরো টুকরো জীবন গড়ন
পেছনে পেছনে সারিবদ্ধ বিরুদ্ধ সময় মুক্ত ভাষা ওড়ে,
অজাত শত্রু শাদা পায়রা ধরে পালকে যারা রক্ত মাখালো—
তারাও এখন চটি চাপাটি ধূতি শার্টে সুভদ্র বাবুটি !

আমাদের চেনা কালো পথ অবাক মুখোশ ধুলো মাখা অবয়ব
চেনা সকল গ্রাম এখনও জন্ম শিকড় খোঁজে আত্ম রক্ত টানে,
নৈঃশব্দ্যে শাদা থানের ঘোমটা আড়ালে ভেজা দীর্ঘশ্বাস জ্বলে
কতবার দেখেছে সে কেমন নীল পাড় শাড়ি লাল ধুলো ওড়াউড়ি,
কত না আর্তনাদ ঝিম মেরে বসে আছে মাঠে ঘাটে সবুজ প্রচ্ছদে
ছিন্নভিন্ন সময় জানতো আবারও লালসায় হাত মুঠো হবে —-
কালো পাথরের মতোই সাজাবে যূপকাষ্ঠ যতো দুর্দান্ত ভয়।

মুখের গড়নের কি দায় কে জানে বা নর কিংবা নারী
কেবলই ঘুরপাক ভূবন ডাঙ্গার মাঠ ঢিবি পাহাড় চড়াই উৎরাই,
নদী জল সমুদ্র জাগে সাক্ষী তারা যজমানি আচারে বিচারে—
যে যার মতো সৎকার বোঝে মসজিদ মন্দির গীর্জা উপাচার,
এখন রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষ মাঠ ফসলের উদগত প্রাণ—
স্বপ্ন ছোঁয়া কুটির গুলো ভেজে বারোমাসই বোনে জীবনের শস্য কণা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here