বিশিষ্ট কবি-খাতুনে জান্নাত এর সাম্প্রতিক ১০টি কবিতা

438
বিশিষ্ট কবি- খাতুনে জান্নাত এর সাম্প্রতিক ১০টি কবিতা

খাতুনে জান্নাত এর সাম্প্রতিক ১০টি কবিতা
১।স্পর্শ ২। আত্ম পরিচয় ৩। পরকীয়া উঠোন ৪। প্রশ্ন ৫। আলোকিত জাহান্নাম ৬। সারেগামা ৭। সজীব আন্দোলন ৮। পাশাপাশি ৯।মানবতাবাদ ১০। টুকিটাকি-৬

স্পর্শ-
তোমার ঠোঁটের কাছে শহীদ হয়ে যাই, বাহুতে বিলীন
দুঃখগুলো মুছে যায় স্পর্শের ইরেজারে।
কাল ভেসে থাকে আকালের গুন হটিয়ে।
রাশি রাশি সন্ধ্যাফুল
ঘন আঁধারের ভেতর হাসিখুশি বিকেল,
সঘন খরায় বৃষ্টির কলতান।
তুমি ছুঁয়েছো,
ইচ্ছা পাহাড় হয়ে আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
তুমি বলেছো, সকালটা সুবাসে ভরপুর,
দিঘির অতলে জলের সন্তরণ; আয়নার মতো ভাসছে অতীত ভবিষ্যৎ।
কান্না ঝরছে শিশির হয়ে
গল্পগুলো অলংকারে মন্দ্রিত,
কবিতাগুলো চোখ,
প্রেমের সংগীত যেন আত্মা!
হাতের তালুতে হাত বাঁধা হলে
কে আর খুঁজে পায় জ্বলন দহন!
তোমার আকাশ চোখে আমি এক তারা।
হৃদয় ভালোবাসার সমুদ্রে এক সোনালি মাছ।

আত্ম পরিচয়
পিতাকে খুঁজতে খুঁজতে ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি
যা কিছু অর্জন সবই ভুল পরিচয়ে
অচেনা অভিক্ষেপে হাত পা ছড়িয়ে সরে পড়ে
কোথায় কোন শস্যদানার ভেতর আমাদের পরিচয় লুকানো রয়েছে?
কোথায় কোন জলসাঘর সাক্ষী রেখেছিল জন্মের কান্নার?
শুধু হাসি, অট্টহাসি দিগন্তে মিলিয়ে যায়।
লাঙ্গলের ফলায় বা কোদালের কোপে ছিঁড়ে ফেলা মাটি
কামারের হাঁপরের ভাপে জেগে উঠা আগুন
জ্বলছি তো জন্ম থেকে বিভেদ আগুনে
পাথর সভ্যতা চরায় জংধরা পা
মাতাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলার কাহিনি বিধৃত কোথায় জানাতে পারেনি কেউ!
অর্ধেক পরিচয় নিয়ে অর্ধ-অঙ্গও দৌড়াতে গিয়ে প্রায়ই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে নক্ষত্র, খসে পড়ে হাতে ধরা আলোর মশাল।
ছুটতে ছুটতে এডিসনের মতো উঠে পড়ি ট্রেনে
ট্রেন চলতে থাকে অচেনা অভিমুখে।
ফেরার দরোজা বন্ধ হয়ে যায়
জানাও হয় না কোনোকিছু।

পরকীয়া উঠোন

পড়ে আছি সভ্যতার ক্রুশকাঠে যিশুর জীবন
শিল্পের মাঠে গড়াগড়ি শুকনো ঠুনকো তৃণ
ইচ্ছারা আকর্ষি বাড়াতে বাড়াতে নুয়ে পড়ে বহু আগে
তবু্ও ঘুরছি পাতা বাহারের অলিন্দে
ফুল ফোটানোয় অভিপ্রায়।
তুমি আসো ভালোবাসার মলম লাগিয়ে গুম হয়ে যাও।
প্রতিদিনের ভগ্নতা আর দমনে নিঃস্ব চিৎকার গ্লাসে গ্লাসে পান করি।
কারো মেরুদন্ড ভাঙার মড়মড় শব্দ শুনতে পাই।
কারও গলিত মাংসের গন্ধে দলিত হয় শ্বাসযন্ত্র।
চিরহরিৎ শ্যামলতায় বাস করে রুক্ষতা
শব্দেরা নিজস্ব ট্রেনে চড়ে চলে যায় অচেনা গঞ্জের দিকে
অনুভুতি আঙুল কামড়ে বসে থাকে পরকীয়া উঠোনে।

…………


প্রশ্ন

জ্বলে যাচ্ছে জলজ জনম
সরে যাচ্ছে কাম ও স্মরণ
ক্ষরণের ঘুনপোকা খাচ্ছে রঙ ও তাবিজ
টেনে টেনে কাক ও পিঁপড়ের শ্রমে ঘামে নেয়ে ওঠা
চলমান বিক্ষত ও ভয়ের যাঁতাকল
রাত্রি বাতিহীন
দিন আশক্তিবিহীন
আশঙ্কার আসমান মেঘহীন
হে শিল্পের শাবক
নির্মাণ সামগ্রীর অভাবে কী
এভাবেই পড়ে রবে সম্পর্কের দীর্ঘতম বাঁধ!
সামাজিক প্রহর ছায়াহীন
মাঠ জলা ও জঙ্গল ভরে উঠছে শবদেহে
প্রেম নিবেদনহীন
শিশুদের দৃষ্টি প্রশ্নহীন
মায়েরা শব্দহীন
পরজীবি সতর্কতা কেবল গণ্ডগোল
ভুল ও ভুলের মহাবোল…

….
আলোকিত জাহান্নাম

প্রতিটি স্বপ্ন পুড়ে যাচ্ছে
পুড়ে যাচ্ছে প্রতিটি চুমু
তীর্যক সুমেরু ঝড়
কুমেরুর কু ঝরে পড়ে মাথার উপর
প্রশান্ত মনের মহাসাগরে অশান্ত মানবীয় উৎপাত।
ভিসুভিয়াস গলে গলে পড়ছে–
ইচ্ছার বাঁধের উপর মৃত্তিকার মনোঘরে।
আকাশকে বিছানা মনে করে কাত হয়ে শুলো মন
মনের শরবতে মরিচ মিশিয়ে চুকচুক পান করলো সময়…
নিমগ্নতায় চৈত্রের চিৎকার
আবাহনে শীতের ফাটা ঠোঁট বিছিয়ে
হাত ইশারায় ডাকে শুকনো ডালপালা
জিরাফের বাড়ানো গলা দীর্ঘ হচ্ছে
সময় কব্জিতে মোচড় মারছে আলোকিত জাহান্নাম।


সারেগামা

ভোরের নির্মলতা
উদারা, মুদারা, তারার আরোহী সম্মোহন
সা রে গা মা পা ধা নি র্সা…
নিঃশ্বাসের প্রলম্বিত দ্যোতনা
তরঙ্গের তটে বালুকাবেলার মন্থন
বিরহের দাহ উড়িয়ে নেয়া অবাধ্য দিন।

জীবন হেঁটে এসেছে বহু পথ
স্বরলিপির মুদ্রিত অক্ষরে নির্মীলিত পদচ্ছাপ।
অশ্রুহীন কান্নারা কলাপাতা দোলে লিখে নাম,
ঘোরের পহেলি ঘাঘড়া নাড়ায়,
জীবনের দৌড়ে মানুষ-মর্যাদা আলোড়ন…
শামুকের খোলে থাকা মুক্তি মুক্ত হোক
নুরজাহান, নুসরাত পাথর আগুন
তনু, হেনা, সেঁজুতির আত্মাহুতি সংস্কৃতি স্রোত..

র্সা নি ধা পা মা গা রে সা
অবরোহীর আরাধ্য ভজন
আহা কোভিডের চোখ রাঙানো দিনে,
আহা অকার্যকর টিকার ঋণে
ভয়কে ঢেকে রাখি সুরের আখরে
আর মানুষের আর্তস্বর …
অহং-পর-নীল নক্সায় বিলীন জান্নাত-মুনিয়া
টাকার পাহাড় বুঝি ঢেকে রাখে সূর্য!

উর্বশী খোঁপা উড়িয়ে মুনিয়া কি গান হয়েছিল?
সারে রেগা গামা মাপা পাধা ধানি নির্সা
র্সানি নিধা ধাপা পামা মাগা গারে রেসা..


সজীব আন্দোলন

দিনকাল পুড়ে গেছে অভিবাসী হাওয়ায়
যুদ্ধ এবং ধ্বংস
কেউ জানতে চায় না পরিচয়
তুমি বা আমি
মধ্যবর্তী দূরত্ব রেখে দেই।
আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত আধুনিক বিশ্ব
আমরা অন্ধ না চক্ষুষ্মান কে বলতে পারে?
আসো তার চেয়ে চক্ষুদ্বয় খুলে রাখি

নিঃশ্বাস আটকে থাকে সফেদ মাস্কে
উৎসব ও বৈশাখি ঢাকা থাকে কাফনে কাফনে

গ্রহ ও গ্রহাণু ক্রিয়াশীল মহাশূন্যতা অন্বেষণে-
মহাকাশ সৃজনে মানুষ…

অথচ বৃক্ষের চোখে কান্না
অথচ ভূমি ডুবে যাবার আর্তনাদ!
শ্রাবণে, প্লাবনে লিখে রাখা ভগ্ন সংগীত।

আসো আমরা অক্সিজেন হই
পাতায় পাতায় শিশির সিঞ্চন
আসো অশ্রু মুছি
অনাদি কালের ভাষা
আমরা কি হারিয়ে ফেলছি গ্রন্থিকতা?

চারপাশে রকেট আর মিশাইল গর্জন
মানুষ আকণ্ঠ ডোবে; ভেসে থাকে শব্দের নিয়তি?

কেবল সমব্যাথী হওয়া যথেষ্ট নয়।

লকডাউনের অনির্দিষ্ট কোয়ারেন্টাইন
আর আইসোলেশনে ভয়ার্ত সময় নিয়ে শ্বাস ফেলা সহযাত্রী,
আর যারা হাত বাড়াচ্ছে এ ধূসর পৃথিবীর দিকে
তাদের জন্য রাখি শেষ আশ্রয়-
সাহসের সজীব আন্দোলন।


পাশাপাশি

আলো অন্ধকার পাশাপাশি শু্ই
বিছানায় নরম ও ওম, শব্দময় ভয়
আলো অন্ধকার খুব ধীরে ধীরে কথা কই
দুজনের মাঝখানে শুয়ে থাকে দুর্ভোধ্য লিপিকা
আঙুল বেয়ে গলে যায় জল ও গরল
অনাদিকাল হতে অন্ধকার গুহায়
প্রস্তরযুগের মোহ, পরাবাস্তব কাল
গঙ্গার ঘাটে আর কাবার সভায়
আলো অন্ধকার পাশাপাশি হাঁটে
বৈশাখ গড়িয়ে গড়িয়ে চৈত্রের পাশে…


মানবতাবাদ

অদৃশ্য হাতে কুঁচকে যাচ্ছে সময়
চিরেচ্যাপ্টা সময়ের গদিতে
মৃত্যুর উল্লাস।
আমরা নীরব হয়ে আছি শবের মাতম
অক্ষরগুলো বরফের কুণ্ডলীতে হাসফাস করছে
এখনো যে প্রাণ কাঁপছে একটু একটু
তোমরা তাকে আর বেড়ি পরিও না…

আমার বুকের উপর ফুটেছিল যে গোলাপ
তাকে কেউ কেউ ঈর্ষার চোখে দেখে
বাতিকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছো তুমি
যে সবুজে হৃদয় আলো জ্বেলে রাখে
তার সাথে এ দুষ্টুমিটা করতে যেওনা।

পাথরের বিশ্ব কেঁপে কেঁপে উঠে
অদৃশ্য কলকব্জাগুলো মোচড় মারে
অন্ধ অধিকারভূক্ত আর
স্বার্থান্ধমহলের পরোপকারী ভাষণ শুনে ঠা ঠা করে হেসে উঠে বৃক্ষ
কেননা বৃক্ষের আঁতুড় ঘরেই জন্ম নেয় মানবতাবাদ।

………………..

টুকিটাকি-৬

১.
মৃত্যুর মতো অজস্র চোখ ঘোরে দিনের হাওয়ায়। তুমি পাতার পোশাকে কিশোরী মনটা নিয়ে উড়ছো তো উড়ছোই।
২.
নীল ওড়নাকে ঝরণা ভেবে কতজন ডুব দিল। তুমি ভাবলে অপরাজিতা ।
৩.
চারকোল দিয়ে লিখে যাও কাল, কালও তো মুখ থুবড়ে পড়ে গুহার বিহ্বরে।
৪.
চরকা ঘোরে পেট ভরে না, শূন্য হাড়ি উজাড় আকাশ কোথাও বিলাশ চোখ সরে না।
৫.
শব্দগুলো রোদ পোহাতে চায় তুমি মেনি বিড়ালের আদরে কোলে শুইয়ে রাখলে।
৬.
মানুষ কিযে খোঁজে! ভুল শব্দ হয়ে উড়ে যায় চিল। যেমন ভুল রঙের সাথে চোখের মিতালি

….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here