শুভ ভাবনার লেখক-নাছরিন আক্তারের কিশোর গল্প“আমার বন্ধু রোবট”

467
লেখক -নাছরিন আক্তারের কিশোর গল্প “আমার বন্ধু রোবট”

আমার বন্ধু রোবট
নাছরিন আক্তার

আমার নাম মুন্না, আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। আজকয়দিন হলো আমি আর বান্টি অনেক বেশি বিখ্যাত হয়ে গেলাম। বিশেষ করে যেদিন থেকে বান্টি আর আমি বন্ধু হলাম, সেদিন থেকে আমি বিখ্যাত হয়ে গেলাম। ও তোমাদের সাথে তো বান্টির পরিচয়ই হলো না। বান্টি হলো আমার রোবট বন্ধু। তিনদিন আগে স্কুল ছুটির সময় প্রচণ্ড জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছিলো। বৃষ্টিতে পানি ও কাঁদায় রাস্তা পরিপূর্ণ । কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি একটু কমলে ভাবলাম এই সুযোগে এবার বাসায় চলে যাই। আবার বৃষ্টি বেড়ে গেলে বাসায় ফেরা মুশকিল হবে। স্কুলের মাঠ দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে হঠাৎ একটা গোল জিনিসে হোচট খেলাম। জিনিসটি ছিলো কাদায় মাখামাখি আর অনেক ভাড়ি। আমি এটাকে ফুটবল ভেবে বাড়ি নিয়ে আসলাম।
বাড়িতে এসে গোল বলের মতো জিনিসটি ভালো করে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করলাম। কি আশ্চর্য এটি দেখতে বলের মতো হলেও এত ভাড়ি যে এটা দিয়ে ফুটবল খেলা যাবে না। জিনিসটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম। দেখি বলটির উপরে এক জায়গায় চারটি গোল গোল বাটন আছে।লাল, হলুদ, নীল, সবুজ জিনিসটি দেখতে খুব সুন্দর। বলটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা বাটনে আলতো চাপ পরতেই বলটি সচল হয়ে উঠলো ও একটা আওয়াজ বের হলো, ” হ্যালো আই এম বান্টি” আমি চমকে উঠলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মনে হলো এটি নিশ্চয় একটি গোলাকৃতির রবোট। তার পর আফসোস হতে লাগলো আহা! কার যে এই রোবট! সে হয়তো খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে খুব মন খারাপ হয়েছে। খুব কষ্ট পাচ্ছে।
আমি রোবটকে বললাম – তোমাকে কে তৈরী করেছে?
রোবট বললো – আই ডো নোট নো।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভাবলাম রোবটটি তো নিজের মালিকের কথা জানে না তাহলে তাকে কিভাবে রোবটটি ফিরত দিবো? বিকালে আমি বান্টির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। সেদিন আর বাইরে খেলতে যাইনি। তারপর মনে হলো কাল স্কুলে যেয়ে জিজ্ঞেস করলেই এর মালিক কে খুঁজে পাওয়া যাবে। পরদিন স্কুলে গেলাম, হঠাৎ দেখি আমাদের দারোয়ান রহিম মামা একটি নোটিশ নিয়ে এলেন ক্লাসে, মিস তা পড়ে শুনালেন। নোটিশে লেখা ছিলো ” আমাদের স্কুলে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এসেছেন তিনি হলেন ড. আরিফুজ্জামান। তার গোল আকৃতির বলের মতো দেখতে একটি রোবট হারিয়ে গেছে। যদি কেউ পেয়ে থাকে তাহলে তাকে অফিস রুমে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
আমি নোটিশটি পেয়েই ব্যাগ থেকে রোবটটি বের করে সোজা চলে গেলাম প্রধান শিক্ষকের রুমে। ‘- স্যার আমি আসতে পারি ‘।
তিনি বললেন- এসো মুন্না।
প্রধান শিক্ষকের রুমে তখন বিজ্ঞানী ড.আরিফুজ্জামানও আছেন। আমি দুজনকে সালাম দিয়ে রোবটটি টেবিলের উপর রাখলাম ও সমস্ত কথা খুলে বললাম। রোবটটি ফিরত দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছিলো আবার মনও খারাপ হচ্ছিলো একটু একটু রোবটটির জন্য। মনে হচ্ছিলো ও আমার বন্ধু। টিফিন প্রিয়ডে বারান্দায় বসে আছি তখন পিয়ন মামাকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে আবার ডাকালেন। আমি রুমে ঢুকতেই স্যার বললেন – মুন্না তুমি একটি সৎ ও ভালো ছেলে। তোমাকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। বিজ্ঞানী বললেন – আজকালকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য, নতুন প্রজন্মের জন্য তোমার মতো একজন সৎ ও ভালো ছেলে দরকার । নাও তোমার সততার পুরস্কার হিসাবে আমার রোবট বান্টিকে তোমাকে দিলাম। আমি বললাম এটি তো আপনার কাজের জন্য। আপনি এটি নিজে রাখুন।

তিনি বললেন -আমি তোমাদের সততা যাচাইয়ের জন্য এটিকে মাঠে ফেলে রেখেছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম তোমরা এই রোবটটি পেয়ে তার মালিককে ফেরত দাও কি না! আর তাছাড়া আমার ল্যাবে আরো ২০৯ টি রোবট আছে। যা দিয়ে আমি আমার কাজ করাতে পারবো। ‘ নোটিশে লেখা ছিলো যে রোবটটি পেয়ে ফিরত দিবে তাকে পুরষ্কৃত করা হবে “.এটি হলো আমার তরফ থেকে তোমার জন্য পুরস্কার। তারপর থেকে রোবট বান্টি আমার বন্ধু ও খেলার সাথি।
আমি শিখলাম ‘ভালো কাজ করলে সবসময় ভালো হয়। ‘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here