আজও তোর অপেক্ষায়
অন্তরা ঘোষ।
আমার পেঁচি,
আজ বহুদিন পর তোর সাথে মন খুলে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। তাইতো তোকে চিঠি লিখতে বসেছি। চিন্তা করিস না রে, এই চিঠি তোর কাছে পৌঁছাবে না। এই দশ বছরে তোকে লেখা গোটা চল্লিশেক চিঠির সাথে এই চিঠিটাও ওই কাঠের উপর হাতির দাঁতের কারুকার্য করা বাক্সটায় জায়গা করে নেবে। এই বাক্সটা একদিন তোকে দেবো বলে কিনেছিলাম দেরাদুন থেকে.. দেওয়ার আর সুযোগ হয়নি.. তার আগেই তো..
সে যাক গে.. পাগলী , কেমন আছিস বল… আমি কিন্তু অনেক অভ্যাস বদলালেও বহুদিন আগে তোকে ডাকা আমার এই স্নেহের সম্মোধন গুলো বদলাতে পারিনি। তোর ওই বেনারসি শাড়ির মতন জমকালো পোশাকি নাম ” চন্দ্রাবলী” বলে ডাকা আমার কোনদিনই পোষাবে না। ওটা তোর বরের জন্যই থাক। আমি যে ওই নামে আমার পাগলিকে খুঁজে পাইনা।
মাঝে মাঝে বড্ড একা লাগে জানিস। তুই হয়তো শুনলে বলতিস ” অভি’দা তুই এখনো বিয়ে করিস নি”!
না রে পাগলি, বিয়েটা আর করা হল না.. কি করে করি বলতো.. আর একটা ‘তুই’ পেলাম না যে ” !
আচ্ছা পেঁচি , তোর মনে পড়ে আমাদের সেই ছোটবেলার দিনগুলোর কথা… তুই ছিলি বছর পনেরোর একটা মেয়ে.. আর আমি তো ছিলাম তোর থেকে বছর তিনেক বড়। নতুন এসেছিলি তোরা এই পাড়ায়, আমার স্কুলে ভর্তি হলি। এত শান্ত কেবলি টাইপের ছিলি.. কিন্তু কি করে যেন আমার সাথেই বেশি বন্ধুত্ব হয়ে গেল ! একসাথে স্কুলে যাওয়া.. একসাথে বসে টিফিন খাওয়া.. রাজ্যের গল্প করা.. আমার সাইকেলের পিছনে বসে বাড়ি ফেরা.. মনে আছে তোর ? সেই বয়সেই আমরা প্রেমে পড়েছিলাম কিনা জানিনা.. প্রেমের অনুভূতি বোঝার মত বয়স তখনো হয়নি বোধহয় … কিন্তু কেন জানি না তোর সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগতো। মাঝেমাঝেই মামার বাড়ি চলে যেতিস তুই.. তখন যেন স্কুলে আসার উৎসাহটাই হারিয়ে ফেলতাম.. ভীষণ মিস করতাম তোকে.. টিফিনের সময়টা বড্ড বেশি ফাঁকা লাগত।
আমি তখন ক্লাস ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠার পথে, তুই নাইনে। আমার প্রতি এক অদ্ভুত অধিকারবোধ জন্মে গেছিল তোর। মনে আছে একবার আমি আর তুই বসে টিফিন খাচ্ছি আর নানান রাজ্যের গল্প করছি.. এমন সময় আমাদের ক্লাসের রুমা এলো আমার কাছে অঙ্ক বুঝতে।
অঙ্কে আমি বরাবরই ফুল মার্কস পেতাম সে তো তুই জানতিস। আমার পাশেই খাতা নিয়ে বসে পড়ল রুমা। আমিও ওকে অঙ্ক বোঝাতে লাগলাম। দুবার আমাকে বললি খেয়ে নিতে। কিন্তু আমি তো তখন অঙ্ক বোঝাতে ব্যস্ত। হঠাৎ অনুভব করি টেবিলের তলাতে আমার পায়ের উপর বেশ জোরে চাপ। ব্যথা লাগলেও আঁতকে উঠতে পারলাম না রুমা পাশে বসে আছে বলে। আরও একটা অঙ্ক আমার দিকে এগিয়ে দিল রুমা। দেখলাম তুই হঠাৎ উঠে আমাকে কিছু না বলে গটগট করে ক্লাসে চলে গেলি।
সেদিন বাড়ি ফেরার সময়তেও দেখি তুই আগেই বেরিয়ে গেছিস স্কুল থেকে। গটগট করে হেটে যাচ্ছিস। সাইকেল নিয়ে তোর সামনে দাঁড়ালাম। বললাম পিছনে বসতে।
ঝাঁঝের সাথে আমাকে বললি, “যা না, রুমাকে পিছনে বসা.. ও দেখতে সুন্দর.. পড়াশোনায় ভালো.. আমি তো পেঁচি “।
তোর অভিমান দেখে হেসে ফেললাম। আগুনের মত ঝলসানো রূপবতী তুই ছিলিনা… কিন্ত তোর মধ্যে তো আমি খুঁজে পেতাম চাঁদের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য যা মনকে শান্তি দেয়। কোমর অবধি কুচকানো একঢাল চুল ছিল তোর.. মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো তোর চুলের মধ্যে হারিয়ে যেতে… গায়ের রং ছিল মাজা মাজা.. আমার কিন্তু খুব ভালো লাগতো… তুই যে আমার বনলতা ..ফর্সা হলে তোকে মোটেও মানাত না.. হাসলে তোর গজদন্ত দেখা যেত.. এত মিষ্টি লাগত তোকে।
আরেকদিনের কথা মনে আছে ? তখন আমি ক্লাস টুয়েলভেই । স্কুল ছুটির পর হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। আমার ব্যাগে একটা রেনকোট ছিল। সকাল থেকে মেঘলা দেখে ছাতাও এনেছিলাম। হঠাৎ দেখি ক্লাস ইলেভেনের মোনালিসা বলছে , “অভি , আমি ছাতা নিয়ে আসিনি.. আমাকে একটু পৌঁছে দেবে প্লিজ?”
আমি তোকে বললাম ছাতা নিয়ে মোনালিসাকে পৌঁছে দিতে। তুই রাজি হলি না.. আমি ছাড়া তো কারো সাথে এত কম্ফোর্টেবল থাকতিস না।
অগত্যা আমি তোকে আমার রেনকোটটা দিয়ে দিলাম, আর মোনালিসাকে ছাতা নিয়ে পৌছে দিতে গেলাম। মোনালিসা আমার হাত ধরে চলছে। বেচারী মাঝে মাঝে মেঘের ডাকে ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম আমাদের দুজনের হাতটা ছাড়িয়ে মাঝখানে তুই ঢুকে পড়লি। রেইনকোটটা খুলে মোনালিসাকে দিয়ে বললি বাড়ি চলে যেতে। বেচারী তোর এই ব্যবহারে অবাক হয়ে গেল।
যাই হোক মোনালিসা তো চলে গেল।
তবে আজ ভাবি ভাগ্যিস সেদিন আমার আর মোনালিসার মাঝখানে এসেছিলি। তাইতো যখন বিদ্যুৎ চমকালো আর জোরে মেঘ ডাকল তুই ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলি। তখন সবে কৈশোর অতিক্রান্ত, এক সদ্য কিশোরীর শরীরের উষ্ণতা.. তার ওপর ছাতাতে কিছুই বৃষ্টি আটকাচ্ছে না ! দুজনেই ভিজে গেছি… মাথায় একটু দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো.. তোর মুখটা তুলে গোলাপের মতো নরম ঠোঁট দুটো আমার ঠোটের মধ্যে নিলাম.. তুই বাধা দিলি না্.. বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরলি আমাকে.. আমার জীবনের প্রথম চুম্বন.. এক অন্য অনুভূতি.. শিহরন.. তুই স্কুল জুতা খুলে আমার পায়ের উপর পা রাখলি… মনের মধ্যে ঝড় উঠলো..জানিস আজ এতদিন পর চোখ বুঝলে সেই প্রথম সুখানুভূতি অনুভব করি.. বাধ সেধেছিল মেঘ.. এমন গর্জন করল.. তার সাথে আবার আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি..দুজনেই চমকে ছিটকে সরে এলাম..
পরদিন থেকে তুই যেন কেমন করে বেশ বড় হয়ে গেলি !
মনে আছে পেঁচি , তোর জন্মদিনে প্রথম উইশটা আমাকেই করতে হতো ? তখন তো এখনকার মতো স্মার্টফোন ছিল না। থাকলেও অনেক দাম ছিল। মায়ের নোকিয়া ফোন থেকে তোকে মেসেজ করতাম। লাল রক্ত গোলাপ তোর খুব প্রিয় ছিল। পরদিন জন্মদিনের লাল গোলাপের তোড়া নিয়ে যেতাম.. হাতে তৈরি গ্রিটিংস কার্ডে তোর জন্য একটা কবিতা লিখে দিতাম। এই উপহারটুকুর জন্য তুই অপেক্ষা করতিস। আর আমি উপহার পেতাম তোর আলো ঝলমল মুখের সেই সুন্দর হাসি।
আর দুর্গাপূজার সময় চারদিন তোর আমার একসাথে ঘোরা প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে, ফুচকা খাওয়া এগুলো খুব মনে পড়ে জানিস। যখন তুই চোখ বুজে ভক্তিভরে পুষ্পাঞ্জলী দিতিস, তোর ঐ পবিত্র সরল নিষ্পাপ মুখটার দিকে আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম।মিথ্যে বলব না , মাঝে মাঝে তোর নজরদারি চোখ এড়িয়ে অন্যান্য বান্ধবীদের সাথে আড্ডাও মেরেছি। তবে বাই চান্স সেটা যদি তোর চোখে পড়ে যেত সেদিন বুঝতাম আজকের দিনটা মাটি হল। অভিমানিনীর অভিমান ভাঙাতে সেদিন বেশ বেগ পেতে হতো।
সেবার তুই ক্লাস টেনে উঠেছিস। দুর্গাপূজার সময় সপ্তমীর দিন আমি প্যান্ডেলে তোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। ঘনঘন ঘড়ি দেখছি। নির্দিষ্ট টাইমের পরেও আধ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। তখনো এলি না তুই। সেদিন তোদের সাজগোজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল। ভাবছিলাম এত সাজগোজের কি আছে ! সাজগোজ না করলে কি আমি তোকে ভালোবাসবো না! ঠিক তখনই দেখি গলির মোড়ে একটা লাল সাদা কম্বিনেশনের ঢাকাই জামদানি পরে তুই আসছিস। সেদিন জীবনে প্রথম তুই শাড়ি পরেছিস। শ্যাম্পু করা চুলটা খোলা।মাঝে মাঝে দু একটা অবাধ্য চুল কপালের ওপর এসে পড়ছে। কপালে ছোট্ট লাল টিপ। শান্ত দীর্ঘায়ত চোখে হালকা কাজলের টান — তোকে যেন আরো মোহময়ী করে তুলেছে। শাড়ি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিস।
আমার কাছে এসে মিটিমিটি হাসছিস। আমি তখনও তোকে দেখেই চলেছি। কি যে মিষ্টি লাগছিল তোকে। সুন্দর মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ.. বড্ড একান্তে পেতে ইচ্ছে করছিল তোকে। তুই বোধহয় আমার কাছ থেকে ভালো কিছু কমপ্লিমেন্ট আশা করছিলি। মুগ্ধতা কাটিয়ে বলতেই যাচ্ছিলাম এমন সময় পাড়ার অর্পিতা শাড়িটাড়ি পরে সেজেগুজে আমাকে ডাক দিয়ে বলে উঠলো, “অভিদা , বলোনা আমাকে কেমন লাগছে ” ?
বললাম, ” আরিব্বাস , তোকে তো দারুন সুন্দরী লাগছে “!
অর্পিতা খুশি হয়ে নানারকম গল্প করতে লাগল। আমাকে বলল ফুচকা খাওয়াতে। খাওয়াতেই হল পাড়ার দাদা বলে কথা! তুই কিন্তু খেলি না।আমি আড়চোখে তোর মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম আকাশে মেঘের ঘনঘটা। যে কোনো সময় বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে। আজকের দিনটাও বোধ হয় মাটি হলো।
অর্পিতা চলে গেলে তোর রাগ ভাঙ্গাতে আমাকে কিন্তু বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সেদিন।
রাগলে তো নাক লাল হয়ে যেত ! চোখ মুছতে মুছতে বলেছিলি,
–“তুই খুব খারাপ অভিদা। মেয়ে দেখলেই একদম গলে যাস। আমিতো তোর কেউ না। ওরাই তো সব.. যা না ওদের কাছেই যা “।
বললাম, “পাগলি তুই বুঝিস না তুই আমার কাছে কি। সেই কতক্ষণ থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি “!
তুই ফোঁস করে ওঠে বললি, “হ্যাঁ দেখলাম তো আমি তোর কাছে কতটা ইম্পর্টেন্ট। তোর জন্য শাড়ি পরে সেজেগুজে এলাম.. একবার বললি না পর্যন্ত আমাকে কেমন লাগছে… অর্পিতাকে সুন্দরী লাগছে তো.. তুই যা ওর সাথেই ঘোর। আমার কাছে আসবি না একদম।
হাত ধরে প্যান্ডেলের পিছনে নিয়ে গিয়ে বুকে টেনে নিয়ে কানে কানে বলেছিলাম, “পাগলী বুঝিস না কেন.. আমার কাছে তুই সেরা সুন্দরী”। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম তোকে। বলার সুযোগ পাইনি।.. তার আগেই তো..
অনেক কষ্টে তোর অভিমান ভাঙ্গিয়ে শান্ত করেছিলাম তোকে।
আজ ভেবে অবাক লাগে জানিস এতো ভালোবাসতিস যাকে, যার প্রতি এত অধিকারবোধ ছিল তোর তার জীবন থেকে কি করে হারিয়ে গেলি.. তার কথাটা একবার ভাবলিনা!
কলেজের ফাস্ট ইয়ারে উঠেই আমি বুঝে গেছিলাম পাগলীকে ছাড়া আমার চলবে না। সেই শৈশব থেকে অনুভূতি উপলব্ধিতে স্বপ্নে জাগরণে শুধু তুই আর তুই ছিলি।
তুইও হয়তো আমায় এমন করেই চাইতিস। না কোনদিন আনুষ্ঠানিক প্রপোজ করা হয়নি আমাদের.. কিন্তু তোর চোখ বলে দিত তুই আমাকে কতটা ভালোবাসতিস। তোর , আমার প্রতি অধিকার বোধ, অন্য কোন মেয়ের সাথে আমাকে দেখলে তোর অভিমান… প্রত্যেকদিন আমাদের দেখা হওয়া… এগুলো তো ভালোবাসাই ছিল !
আমি তখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ার, তুই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিস… হঠাৎ তোর বাবা বদলি হয়ে গেলেন জামশেদপুরে।
সেদিন বিকেলে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে তুই যখন বললি তোকে চলে যেতে হবে.. আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না… বললাম ” তুই চলে গেলে তো আমার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে যাবে পাগলী ” !
একটু চুপ করে থাকলি তুই। তারপর আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিয়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে বললি, ” কষ্ট পাস না অভিদা.. আমাদের আবার দেখা হবে.. খুব শিগগিরই.. আমি মাকে তোর কথা বলব “।
আমি বললাম, “কাকিমা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে না। তুই তো বলেছিস তোদের বাড়ি ইন্টার কাস্ট ম্যারেজে্য বিরোধী। তারপর তো আমি এখনও স্টুডেন্ট। আর কাকু কত বড় চাকরি করেন। কত ভালো পাত্র পাবেন তোর জন্য ..আমার থেকে অনেক যোগ্য “!
আমার ঠোটের উপর হাত রেখে বলেছিলি, “একদম এরকম কথা বলবি না অভিদা। আমার কাছে তুই সব। নিয়ম করে চিঠি দিবি কিন্তু “।
দেখেছিলাম তোর কাজল কালো দিঘিতে জল টলমল।
বললাম, “কাঁদছিস কেন রে পাগলি ..আমি চিঠি দেবো আর অপেক্ষা করবো তোর জন্য.. “
চোখের জল মুছতে মুছতে তুই বলেছিলি, “মনে রাখবি অভিদা , অন্য কোন পেত্নী যেন আমার জায়গাটা না নেয় “।
বলেছিলাম, ” পাগল! আমার পৃথিবীতে একটাই পেঁচি.. তাকে সামলাতে আমি হিমশিম খাচ্ছি…!কথা দিলাম আর কোনো পেঁচি আসবে না আমার জীবনে।
দেখ ,আজো সেই কথা রেখে চলেছি.. শুধু তুই কথা রাখতে পারলি না।
তুই চলে যাবার পর এক মাস বড্ড মন খারাপ করেছে তোর জন্য। তারপর নিজেকে সামলেছি।
তুই চিঠি দিয়ে ঠিকানা জানিয়েছিলি। ওখানকার কলেজে ভর্তি হয়েছিস জানতে পেরেছিলাম।
তারপর কত চিঠি দিয়েছি তোকে.. প্রথম দু’তিনটে উত্তর পেয়েছি। আর উত্তর পাইনি। জানিনা আমার চিঠি গুলো তোর হাতে পড়তো কিনা।
পাঁচ বছর কেটে গেছে। আমি প্রতি মাসে তোকে চিঠি দিতাম। উত্তর পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবুও লিখতাম। একদিন তোর দেওয়া ফোন নাম্বারে ফোনও করেছিলাম। কেউ একজন ভদ্রমহিলা উঠিয়ে ছিলেন। হয়তো কাকিমাই হবে।আমি নিজের পরিচয় দিয়ে তোকে ডেকে দিতে বলতেই রং নাম্বার বলে ফোনটা কেটে রেখে দিলেন। জানিস , আরো একদিন ফোন করেছিলাম সাহস করে। দেখলাম নাম্বারটা সুইচ অফ বলছে।
জামশেদপুর যাবার কথা অনেকবার মনে হয়েছে, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারিনি। কি মুখ নিয়ে যেতাম। তোর বাড়ির লোক যে আমাকে পছন্দই করেনা। আমি তখনো স্টুডেন্ট। তোকে যে জোর করে নিয়ে আসবো সেই জায়গাটা আমার তৈরি হয়নি। আর কিছুটা অভিমানেও যাইনি। তুই কি করে এত উদাসীন হয়ে গেলি আমার ব্যাপারে? কেন খোঁজটুকুও নেওয়ার চেষ্টা করলি না ?
তুই যে কলেজে ভর্তি হয়েছিলি সেই কলেজে আমার মাসতুতো বোন পড়তো। একদিন ওকে সব কথা খুলে বললাম। খোঁজ নিয়ে জানাল, বড্ড দেরি করে ফেললি দাদা.. ওর তো বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে ছেলে আমেরিকায় থাকে।
শুনে মন খারাপ হয়ে গেছিলো.. কিন্তু কষ্ট পাইনি জানিস… কেননা আমি আজও জানি তুই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকিস না কেন তোর মনটা শুধু আমারই আছে।
তোর মনে আছে তুই পাহাড় খুব ভালবাসতিস। বলতিস অভিদা , আমরা না পাহাড়ে একটা ছোট্ট কটেজ কিনব। ব্যালকনিতে বসে সূর্যোদয় দেখবো দুজনে।
আমি আজ পাঁচ বছর হলো সিকিমে চাকরি নিয়ে এসেছি। তোকে ছাড়া কলকাতা ভালো লাগছিলো না। পাহাড়ি এলাকায় ছোট্ট কটেজে থাকি। রোজ ব্যালকনিতে চেয়ারে বসে একা একাই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি। না ভুল বললাম একা তো না.. তুই তো থাকিস আমার সাথে… বিয়ার খেতে খেতে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখি আর তোর সাথে কত কথা বলি…
একা নই রে আমি.. পাগলি তুই সব সময় থাকিস আমার সাথে..
অনেক কথা বললাম।
আমার না পাঠানো চিঠি জমা করে রাখছি কাঠের বাক্সটায় তোর জন্য। যদি কোনদিন পাস পড়িস.. তোর হারিয়ে যাওয়া অভিদাকে খুঁজে পাবি “।
ইতি..
তোরই অভি