মন্দিরা লস্করের ৫ টি কবিতা
১। জিহ্বা
খুব সংক্ষিপ্ত করে হলেও
আজকাল মনের কথা বলতে পারছি না,
একটা আড়ষ্টতা জিহ্বায়
গাল ভরা বিকৃত লালায় জড়িয়ে যায় চেষ্টা।
নিস্তব্ধ সপাটে মারলে যেভাবে ফুলে উঠে অভিমান।
একটা মাঝারি কবিতা ইঙ্গিত বহ হলেও
ঢাকতে পারে না অনেক কিছু,,
চিনিয়ে দেয় ভাঁজ কিংবা খাদ।
যৌনতা নিয়ে কখনো কিছু লিখিনি
একটা কথাও শরীরকে তুলে দেখাইনি।
মুখ ফুটে
উচ্ছিষ্ট কিছু দুর্বলতা ফেলে যাচ্ছে চাহিদা।
ভাসা ভাসা নগ্নতা
আমার লকলকে চরিত্র কে লজ্জায় কাটছে দাঁতে।
২ । বাঞ্ছিত
আমাদের ঘুম নেই,
চোখের উপর জাগতিক সমারোহ,
বধির সময়
ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বাজছে দামামা।
গুমোট ঘরের ফ্যাকাশে ঘাস তুলে
কতবার নিজেকে মেলে ধরেছি বাতাসের দিকে
হলুদ রঙা পরাগের মত,
বিচ্ছিন্ন সংযোগে পাখিদের ঠোঁটে অলস বিকার ।
কি হবে আর এইসব নিমিত্ত তাড়নায়?
যদি নিঃশ্বাস মিথ্যে মনে হয়
এসো আমরা আবার সমীকরণে ফিরে যাই
সালোক সংশ্লেষের তীব্র সম্ভাবনায়।
যখনই কিছু লিখবো ভাবি গুটিয়ে ফেলি হাত,
খর তাপে শুষ্ক হাত,
লেখাগুলো ঝরে ঝরে যায়।
আবার মুখের উপর ঝুঁকে কেউ যখন নিঃশ্বাস ফেলে
গাছ হতে ইচ্ছা হয় খুব,
ইচ্ছা হয় মূলের মত গভীরে টেনে নেই।
অসম ঘুমে প্রহরী হয়ে গেছি আমরা,
দরজার কড়া পরখ করি।
যারা আগুনের মত কবিতা লেখে তারা জানে
এই সব রাত কতটা দাহ্য হয়
ঝলসে যায় ডালপালা
একেকটা সংকলন ,দাবানল।।
৩ । বারবনিতা
রাত সাতটায় জমকালো সাজে ডুবে যায় চুমকি
চোখে গাঢ় কাজল, চকচকে লিপস্টিকে।
কোনো এক ভোরের ট্রেনে সে ফেলে এসেছিলো ঘুমন্ত শৈশব,
স্নো পাউডারে আবছা দাগের মত মিলিয়ে গেলো সব।
যৌবন তার কাচের শিশি ভরা সুগন্ধি আতর
হাতে ঘষে পরখ করে লোকে,
রোজ রাতে উপুড় করে ঢেলে দেয় বিছানায়।
ঘুপচি ঘরে
নরম তোষকে, বালিশে, মখমলের চাদরে জেগে থাকে রাত বারবনিতার সাজে,
জীবন চারপায়ে দাঁড়িয়ে।
রোজ ফেরার ট্রেনে তুলে আসে বেঁচে থাকা ঘুমন্ত ভোর।
৪ । অবলম্বন
আজকাল তেমন রোদ খেলে না ঘরে
ছাউনি ঢেকেছে আগাছায়,
গাছে গাছে পরগাছা
আকর্ষ ছুটছে আরো নিবিড় ঘনত্বে।
আলোর তীব্র আকর্ষণ জেনেও
উদাসীন অন্ধকার,
কালো কালো অভিমান, বিষাদ জমিয়ে রাখে প্রতিপক্ষে।
আগে নিয়মিত রোদ আসতো,
দিনের শেষে ক্লান্ত চোখে বেরিয়ে আসতো তামাটে শরীর।
আজকাল আঁধার আসে
পাশ ফিরে দেখি না মুখ
চোখে বেমালুম শরীর।
টের পাই একটা লকলকে লতানো হাত আসে হাতের দিকে।
৫। নিরুদ্দেশ
চলে যাব
কিন্তু যাবার আগে এক মূহুর্ত সময় চেয়ে নিচ্ছি।
এই মূহুর্ত থেকে
সাই সাই করে পেছনে ছুটছে গ্রাম, শহর, গাছ, নদী এমন কি আমি তুমিও,
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের মাঝ বরাবর ছুটছে ট্রেন,
কামরায় কামরায় খোলা দরজা,
এক অদ্ভুত টানে
আমাদের ঘর, বাড়ি , গৃহস্থালী সব ঢুকে যাচ্ছে একে একে।