ভারত থেকে কলমযোদ্ধা-অগ্নিমিতা দাসের দীপাবলি উৎসবের ভিন্ন মাত্রার গল্প“ফানুস”

342
ছবি_ অমৃতা ভট্টাচার্য

ফানুস__
কলমে_ অগ্নিমিতা দাস

লি জিয়ে ছাদ থেকে মানুষ দেখছিলো। আকাশে ঘুড়ির মেলা। সন্ধ্যা হবো, হবো। মাথার ওপরে উল্টানো নীল চীনা মাটিতে লাল রঙের তুলিতে আঁকিবুকি কাটা শুরু হয়ে গেছে। নীল ক্যানভাসে লালের মিলিয়ে আসা দেখতে লি জিয়ের বড়ো ভালো লাগে। রাস্তায় শোরগোল শোনা গেলো। ওদের পাড়াটা পাঁচমেশালী। কলকাতার এইদিকটায় সব জাতের মানুষ যেনো হুড়মুড় করে এর ওর গায়ে পড়ে বাস করে। লিরা বহুদিন ধরে এখানে আছে। আজ তার বয়স বাহাত্তর ছুঁইছুঁই। এখানেই কলেজে পড়তে পড়তে এই পাড়ার ফেনের সাথে বিয়ে করে ঘরসংসার পেতেছিলো। ফেনরা সাতপুরুষ ধরে কোলকাতায় আছে। তাই তার ছেলে বাও পুরোপুরি বাঙালি। নামটাই যা ঐতিহ্য বহন করে। বাও তো মায়ের মতো মাছে ভাতে বাঙালি হয়ে দশটা পাঁচটার কেরানীগিরি করতে করতে এ্যংলো মেয়ে মার্থাকে বিয়ে করে। আজ থেকে কত বছর আগে বাবার হাত ধরে লি জিয়ে চীন থেকে এখানে এসেছিলো, তখন কতটুকু বয়স দশ কি বারো। ওদের কোন কাকার এখানে রেস্টুরেন্ট ছিলো, তার তদারকি করতে ওর বাবার আসা। সেই যে আসা তারপর বাবা এখানেই থেকে যায়। রেস্টুরেন্টে কাজ করতে করতে জুতোর দোকান খোলে। মা হারা লি সবসময় বাবার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতো। স্কুলে পড়তে পড়তেই বাবাকে সাহায্য করতো। তারপর তো তাদের বাড়ির নীচে কেক প্যস্ট্রির দোকান খোলা। তখন ওরা এই ফ্ল্যাটটায় থাকতো না। হেমন্তের বিকেল, টুক করে কে যেনো কালো উল চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। শীতশীত ভাবটা টের পেতেই লি তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। বয়স হচ্ছে, এই সময়ে হিম মাথায় লাগলেই ঠান্ডা লাগবে। এই বয়সে ছেলেবৌকে বিব্রত করতে ভালো লাগে না। ঘরে এসে কোটটা গায়ে দিয়েই দোকানে ঢুকলো। চেয়ার বসে জামিল হেডফোনে গান শুনছে।
_ কি রে, কিছু হলো তারপর থেকে? শুনবে কি করে, কানে তো গোঁজা। লি ওর ঘাড়ে কাছে এসে কান থেকে ওটা খুলতেই ধড়মড় করে উঠে জামিল বললো একটা বার্থ ডে কেক। চকোলেট।
লি ধীর পায়ে নিজের চেয়ার বসলো। আজকাল মোমো পিৎজার রমরমা, কেক টেক ওই ক্রিসমাসেই যা বিক্রি। ওর দোকানের পাশে তো বিরাট পিৎজার দোকান। অথচ আগে ওদের এই” ইয়ান কেক “শপের রমরমা ছিলো। মায়ের নামে রাখা এই কেকের দোকান থেকেই ওদের সংসারের উন্নতি। ছেলে পৈতৃক ব্যাবসায় বসলো না বলে লির কম অভিমান হয় নি। কাঁচের দরজা ঠেলে রিয়াজ ঢুকলো। হ্যান্ডসাম আর ইন্টিলিজেন্ট এই ছেলেটাকে লি খুব পছন্দ করে। ও এলে লি যেন একঝলক টাটকা বাতাস পায়। অনেক ইনফরমেশন যা ওর জানা নেই সেটা মন দিয়ে শোনে।জামিল তড়াক করে উঠে রিয়াজের ফেবারেট মাফিন আর স্ট্রবেরি জুস আনতে গেলো। এখানে এলেই রিয়াজ ওটাই অর্ডার দেয়।
_ কি ইয়ং চ্যম্প! তোমার খবর কি? আঙ্কল! মোটামুটি আমার কাজ ও অনেকটা এগিয়ে গেছে। তারপর তোমাকে নিয়ে তোমার দেশে উড়ে চলে যাবো। বলেই হো হো করে হাসতে লাগলো।
একসময় লি জিয়ের ও কলেজের বন্ধু ওয়াং লির মতো নিজের দেশে যাবার স্বপ্ন ছিলো। তাদের শহর আজকের কুমবিংর কাছে ছিলো। আজ ও স্মৃতির পাতায় রয়েছে আকাশে রঙিন আলোর ফুলঝুরি। নতুন বছরে ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে ও দেখতো ওই আলোর খেলা। চাইনিজ ক্যালেন্ডারের ফেব্রুয়ারি কি মার্চ মাসে “ল্যানটান “বা ” “সাংওয়ান” উৎসব। অদ্ভুত ভাবে সব কিছু আবছা হয়ে গেলেও ওই আলোর খেলা এখনো জ্বলজ্বল করে। এখনো আবছা মনে পড়ে মায়ের হাত ধরা, সবজে লাল জামা পড়ে মায়ের উজ্জ্বল হাসিমুখ। ওখান থেকে আসার সময় মায়ের কোন ছবি ও আনা হয় নি।লি অনেক খুঁজেছে। মা বোধহয় জীবনে কোন ছবি‌ই তোলে নি।ওই আলোর টানেই নিজের দেশে যেতে চেয়েছিলো, ওয়াং লি চলে গেলে ও লি জিয়ে বাবার জন্য যেতে পারে নি। বাবা হঠাৎ বাথরুমে পড়ে একদিক প্যারলাইসিস হয়ে গিয়েছিলো। তারপর তো সংসারের যাঁতাকলে পিষতে পিষতে সব শখের গলা টিপতে হলো।
স্যার, দোকান বাড়িয়ে দি‌ই। কাফি রাত হো গ্যায়া। রিয়াজ অনেকক্ষণ চলে গেছে। লি নিজের ঘরে গিয়ে দেখলো টেবিলে মার্থা যত্ন করে ডিনার সাজিয়ে গেছে। আজ ওদের অফিসের কোন কলিগের বাড়িতে পার্টি আছে , তাই ওরা খেয়ে ফিরবে। ঠিক ওই সময়ে মুঠোফোন বেজে উঠলো। না,না খাই নি, এবার খাবো। আমি ঠিক গরম করে নেবো। তোমরা এনজয় করো।
মার্থার ফোন। বড়ো ভালো যে এ তার পুত্র বধূটি।সেইরকম তার আদরের নাতনী জু । গ্র্যান্ডপা গ্র্যান্ডপা করে অস্থির করে দেয়। বিয়ে করে কোন সাত সমুদ্র তের নদীর পারে গিয়ে ও রোজ একবার ভিডিও কল করা চাই। সেইজন্য‌ই তো দাদুকে এত দামী একটা ফোন কিনে পাঠিয়েছে।নাতনী বাঙালি বিয়ে করা নিয়ে ছেলে বাধা দিলে ও লি এককথায় নসাৎ করে দেয়। স্ত্রী ফেন বড়ো বাঙালি ঘেঁষা ছিলো, হয়তো ওপর থেকে ওর ইচ্ছেয় নাতজামাই বাঙালি হয়েছে।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে লি ভাবছিলো ওর এই দেশের মাটির প্রতি টান ফেন কোনদিন ভালো চোখে দেখে নি। কতবার শখ করে ফেনকে বলতো
চলো না বাও কে ওর বাপ ঠাকুরদার দেশ দেখিয়ে আনি। ফেন মুখ ঝামটা দিয়ে বলতো দেশ দেশ করো না তো? কিসের দেশ? যে দেশ তোমাকে ভিটে মাটি ভাত বৌ সব দিয়েছে সেটা ছেড়ে কি করতে ওখানে যাবে। তার চেয়ে চলো না ইয়োরোপ ট্যুর করি। পাড়ায় , আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের কাছে স্ট্যাটাস বাড়বে। ওই চায়না শুনলে লোকে মুখ ভেটকাবেই। তাছাড়া তোমার বাবাকে ছেড়ে কোথা ও যাবার জো আছে? লির বাবা একসময় ওদের মুক্তি দিলেও ইয়োরোপ ট্যুর করানোর ক্ষমতা ওর হয় নি। বাবার বিপুল টাকার চিকিৎসার দায়ভার, ছেলেকে পড়ানো, সংসার চালিয়ে ছেলে বৌকে গোয়া, কেরালা, দিল্লী , আন্দমান ঘুরিয়েছে। মনের মধ্যে দেশের শিকড়টা গেঁথে থাকলে ও কোনদিন সেটা প্রকাশ্যে আসে নি। নাতনী জু কথা দিয়েছিলো দাদুকে সে একবার তাদের দেশের বাড়ি নিয়ে যাবে।
_ আচ্ছা দাদু! তুমি যে ওখানে যাবে, কাউকে তো চিনতে পারবে না। তোমার বাড়ি তো নেই। সব তো অচেনা। লি নাতনীকে কি করে বোঝায় নিজের মাটির কাছে যাবে। চিরবসন্তের দেশে সবুজ পাহাড়ের কোলে টলটল করা হৃদের কাছে চুপ করে বসে থাকবে। তাজা ক্যামেলিয়ার রঙিন গুচ্ছ মনকে বিবশ করবে। কিছুটা আবছা স্মৃতির পাতায় রয়েছে বাকিটা টিভিতে বা ইন্টারনেটের দৌলতে স্পষ্ট। নাতনী জু কথা রাখার চেষ্টা করে ও বেচারি পারে নি। ও নিজেই একটা ইম্পোর্ট্যান্ড প্রজেক্টে ব্যাস্ত হয়ে গেছে। লি জিয়ে আর ফেনের একটা জয়েন্ট মোটা অঙ্কের লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছিলো। ফেন আচমকা হৃদরোগে চলে যাবার পর টাকার অঙ্কটা পুরোটাই সময়মতো লির একাউন্টে চলে আসে। এখন তো ঝাড়া হাত-পা মানুষ। দোকানটা সে সময় কাটানোর জন্য চালায়। সেখান থেকে যা আসে সবটাই এখন তার । লি এবার ঠিক করেছে ফেব্রুয়ারি মাসে রিয়াজকে সঙ্গে করে একবার ঘুরে আসবে। একা যেতে ভয় করে, শরীরটা আর বশে নেই। রিয়াজের ও ওখানে ব্যাবসার কি কাজ আছে। ছেলেটা ও করিৎকর্মা। বাও আর মার্থা কিছু জানে না। আগে থেকে জানলে বাগড়া দেবে। হলুদ নীল, গোলাপী আলোয় ভরা আকাশ আর সেই আলোয় মাকে দেখতে দেখতে কখন লি ঘুমিয়ে গেছে। লি গিভ মি দ্যাট চিজ রোল!
ফর্সা একমাথা কোঁকড়ানো চুলের পল ওর দিকে তাকিয়ে বললো। লি জিয়ের শিকড় এখানে না হলে ও তার ডালপালা চারিদিকে ছড়ানো। পাড়াতে ছোট থেকে কমবয়সী বুড়ো সবাই তাকে ভালোবাসে। সুখ_ দুঃখের গল্প করে, প্রয়োজনে দুটো শলাপরামর্শ ও করে।পল ওদের ফ্ল্যাটেই ফিফথ ফ্লোরে থাকে। মার্থা প্রায়‌ই বলে ওদের বাড়ি থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভাঙচুরের আওয়াজ আসে। সোসাইটি থেকে অবজেকশন আসছে। লি অনেকসময় ব্যালকনি থেকে দেখেছে টলতে টলতে সারা গাড়ি থেকে নামছে। স্বল্প বসন তাও এলোমেলো। এই নিয়ে ওর বরের সাথে চলে ধুন্ধুমার লড়াই।পল পরশু বলেছে দিওয়ালীর পরেই ওকে নিয়ে মা অন্য ড্যাডের কাছে চলে যাবে। পরিস্থিতি পলকে বড় করে দিয়েছে।
_ ইয়েস মাই বয়! দিস প্যাক অফ কুকিস ইস ইয়োর।বলেই পলের চুলটা ঘেঁটে দিলো। _ আমি কি এখানে বসে খেতে পারি? পল ওর দিকে নিস্পাপ দৃষ্টিতে দেখলো। চেয়ারে বসে বসে গোগ্রাসে চিজ রোল আর কুকিস খেতে খেতে বললো
_ সিনস ইয়াসটার ডে আই অ্যাম স্টারভিং, কস মাই পেরেন্টস ওয়্যার কুয়ারলিং লির চোখটা চিকচিক করে উঠলো। বাবা মা ও যে কখন সন্তানদের যন্ত্রণার কারন হয়ে দাঁড়ায় নিজেরই বোধহয় জানে না। আজ বেকারির দুজন স্টাফ আসে নি, তাই জামিল আর লি সাটার টেনে বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই নাফিসার সাথে দেখা হলো। নাফিসাকে অন্যদিনের চেয়ে আজ বেশ আলুথালু লাগছিলো। ও পার্ক স্ট্রীটের একটা নামকরা বারে গান করে। তাই সবসময় ফিটফাট থাকে। হাই! ডার্লিং! এক্ষুনি বেরোচ্ছো?
থমথমে মুখে নাফিসা ওর দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। লি কিছু একটা বুঝতে পেরে জামিলকে এগিয়ে যেতে বললো।
রাস্তার নিয়নের আলো নাফিসার মুখে পড়ে ওর মুখটা আরো ফ্যাকাশে লাগছে।আজ সকাল থেকেই উত্তরে হাওয়া দিচ্ছে, এখন তার বেগ একটু বেশি।
_ ওয়াট হ্যাপেনড মাই ডিয়ার? নাফিসা হঠাৎ ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো, চোখের পাতা সামান্য কেঁপে উঠলো ফিনিশ! এভরিথিং ইজ ফিনিশ!
রুবেলের ব্রেন টিউমার আছে। অপারেশন করতে হবে। কথাগুলো বলতে বলতে ও হাঁফাছিলো। নাফিসার হাসব্যান্ড আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এক্সিডেন্টে মারা যায়। রুবেল তখন কত ছোটো। একা মেয়ে , কোথাও হাত পাতে নি। স্বামী বেঁচে থাকতে বাড়িতে গিটারের ক্লাস করাতো। ওর এক বান্ধবীর সোর্সে বারে গান গাওয়া শুরু হলো। আগে আগে রুবেলকে ফেনের কাছে রাতে রেখে যেতো। ফেন রুবেলকে প্রায় মানুষ করেছে। এখনো ঈদের দিন নাফিসা লাচ্ছা ,সেমাই, বিয়িয়ানি রান্না করে দিয়ে যায়। রুবেলের প্রিয় মার্থার হাতে পুডিং আর চিকেন উইথ চেষ্টনাট ।পরে নামী বারে কাজ পাওয়ায় একটা কাজের মেয়ে রেখেছে। এখনো ছুটির দিনে রুবেল ওদের বাড়িতে আসে। বাও আর লির সাথে ছাতে খেলে। মার্থার হাতে ডিনার খেয়ে বাড়ি ফেরে।
তুমি সেকেন্ড অপিনিয়ন নিয়েছো? ইয়েস। ইন ফ্যাক্ট তিনজন বড়ো বড়ো ডাক্তার এক‌ই কথা বললো।
আঙ্কল আমি ওকে বাঁচাতে পারবো না। অনেক টাকার দরকার। আমাকে কেটে দিলে ও এত টাকা আসবে না।
বসকে বলেছো? চোখে টলটলে এক দিঘী জল নিয়েই ব্যাঙ্গের হাসি হেসে নাফিসা বললো একজন বার সিঙ্গারকে কতটুকু টাকাই বা সাহায্যের জন্য দেবে বলুন? আমি না থাকলে হাজারটা আমার মতো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবু ও এতদিন কাজ করেছি তাই সামান্য দেবে। তাতে ঘটিও ডুববে না।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে নাফিসা বিড়িবড় করে বলে উঠলো
সামনের সপ্তাহে অপারেশনের ডেট। বেশি দেরি করলে রুবেলকে আর পাবো না। খুব কমপ্লিকেটেড কেস নাকি? আমি আর রুবেল তাহলে একসাথে বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। _ বাই! নাফিসা, সাবধানে এসো। নাফিসার হিলের খটখট আওয়াজ রাতের নিস্তব্ধতাকে খান খান করছিলো। কমলা কালো স্কার্টটার মিলিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে লির কোনো সরকারি চেনাজানা হসপিটালের ডাক্তারের কথা মাথায় তোলপাড় করছিলো।নাহ !মাথায় কিছুই আসছে না। হঠাৎ লির শীত করতে লাগলো।

আজ চারিদিকে আলোর রোশনাই। ধোঁয়া ধোঁয়া আকাশে শব্দবাজি আর আতসবাজিগুলো চুরমার হয়ে মাটিতে নেমে আসছে।পল চুপ করে দাঁড়িয়ে। কাল ওরা ড্যাডেকে ছেড়ে চলে যাবে। ড্যাড আজ বিকেলে ওকে ধরে খুব কাঁদছিলো।পল ভাবে বন্ধুদের মতো ড্যাড মম ও তো আড়ির পর ভাব করে নিতে পারে। ওরা কি জানে না ড্যাডের সাথে লুডো খেলতে, টিভি দেখতে দেখতে ড্যাডের গেঞ্জি থেকে আসা ঘামের গন্ধ ও খুব মিস করবে।
আজ দীপাবলী। পরশু রুবেলের অপারেশন হবে। সব টেষ্ট হয়ে গেছে। বড়ো নার্সিংহোমেই হবে। লি জিয়ে ওর জমিয়ে রাখা টাকার এমাউন্টটা নাফিসাকে চেকে দিয়ে দিয়েছে। নাফিসা বারবার ধার শোধ দেওয়ার কথা বলেছে। লি জানে সে চেষ্টা করলে ও পারবে না।
লি জিয়ে পায়ে পায়ে পলের কাছে এলো। পলের হাতে ধরা হলুদ ফানুসটায় ও নিজে আগুন ধরালো।
_ এগুলো বেশি দূর যায় না। আজকাল ফানুস গুলো সব ফালতু। দেখো! কোন গাছের ডালে , ল্যাম্পপোস্টে না হলে হোর্ডিং লেগে আটকে যাবে। মার্থা কফির মাগে চুমুক দিতে দিতে বললো।লি জিয়ে ফানুসটাকে চেপে ধরে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে ছেড়ে দিলো। ফানুসটা ধীরে ধীরে ধূসর সাগরে পাড়ি দিলো, নড়তে নড়তে ওদের চোখের আড়ালে চলে গেলো। লি চোখ বুজে ভাবতে লাগলো একটাই তো আকাশ, এই ফানুসটা হয়তো উড়তে উড়তে তার দেশে যখন পৌঁছবে তখন সেখানে ও আলোর রোশনাই শুরু হয়ে যাবে। লির ফানুসটা ওর হয়ে ওদের সাথে মিশে দেশের মাটিতে পড়ে যাবে। ফানুসটা কি হারিয়ে যাবে? আকাশে সোনা রূপা ঝরার পর কেমন একটা অপার্থিব শান্তি নেমে আসে। এখন অনেক রাত। ছাতে কেও নেই।লির হাতের স্পর্শ পাওয়া ফানুসটা হয়তো হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে তুলোর মতো অন্য কোন লি জিয়ের কাছে চলে যাবে।লির মনের স্বপ্নগুলো এইভাবেই ভেসে যাবে। চকচকে রোদ বা প্লাবিত জোৎস্নায় স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে যাবে। ঝুরোঝুরো স্বপ্নগুলো ফিরে ফিরে আসবে মানুষের মনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here