ভারতের তারুণ্যের কবি উৎপল বাগ এর ব্যতিক্রম ধর্মী কবিতা “পর্ণা ”

480
“পর্ণা ”
ভারতের তারুণ্যের কবি উৎপল বাগ

পর্ণা

           — উৎপল বাগ

পর্না , অনেক বছর পর উতলা দমকা বাতাসে
মোবাইলের ক্যানভাসে ভেসে উঠল তোমার মুখ ,
গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই
কয়েকটা আধ – খেউড়ে নেড়ি কুত্তার অবিরত খেউর
ভীমরুল দংশন জ্বালায় বদহজমের ঢেঁকুর —
পাকস্থলীর পাকদণ্ডীর আঁকাবাঁকা উষ্ণ স্রোতে
সরীসৃপ শ্লথগতির থমকানো জীবনে উষ্ণ স্মৃতি
এলোমেলো করে দেয় নির্ঘুম চোখ।

পর্ণা , ভবিষ্যতের মসৃণ যুদ্ধে তোমাকে প্রয়োজনে
মনের মাঝে অবাধ্যতার অনিচ্ছাকৃত ঢেউ
আকাশ সমুদ্রের বিস্তর ব্যবধান
তবুও মিলনের দুর্নিবার হাতছানি !
বৃষ্টির ফোঁটার মতই টুপটাপিয়ে
ঝরে পড়ে অনুরাগের পাপড়ি ।

অঘ্রাণের ঘূর্ণাবর্তে সজনে গাছের ডাল ভেঙে
কতবার উড়ে গেছে চিল শকুন ,
বোধনের আগেই বিসর্জন !

পর্ণা , তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়
ডুবুরি নামিয়ে তুলে আনতে পারো মাঝরাতের নীলছবি
তাকে ঘষে-মেজে আগ্নেয়গিরির গনগনে লাভায়
জ্বালিয়ে নিতে পারো আরেকটিবার স্বেচ্ছায় !

পর্ণা , অঘ্রাণের নিম্নচাপে খাদ্য-খাদক
তাকিয়ে অভিভূত দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে ,
চন্দ্রভূক কুয়াশায় ঢেকে গেলো অতীত —

পর্ণা , আরেকটু পোড়াও যতক্ষণ না পর্যন্ত পোড়ে নাভিকুণ্ড
তোমার জ্বালানো আগুনে অথবা অন্তর্মুখী চুম্বনে ,
পর্ণা , তোমাকে দেখে দেহের ভিতর
আজও বিস্ফোরণ ঘটায় হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি
মাপতে পারিনি ক্যালোমিটারে ব্যর্থতার লাল বাতি হাতে —

পর্ণা , প্রথম আলাপেই বুকের মাঝে অভিকর্ষ নেশা
একরাশ মেঘে বৃষ্টির পূর্বাভাস ,
ঠান্ডা শরীরে উষ্ণতার চোরাস্রোত
তোমার শরীরের চুম্বকীয় আবেশে
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লাল গোলাপ —

পর্ণা , তোমার শরীরে সুস্পষ্ট রেখায়
আবেগ তাড়িত শব্দবিন্যাসে
মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করার প্রচেষ্টায়
শিরা-উপশিরায় ঝড়ের তান্ডব।

পর্ণা, পরস্পরের প্রলুব্ধকর হৃদয়াবেগের
তোমার ঢেউ খেলানো কোঁকড়ানো চুলের আড়ালে
সুস্পষ্ট বিভাজিকায় হৈমন্তিক বসন্ত ,
বিস্ফোরণের অপেক্ষায়
কামনার ধ্বংসাবশেষে ভূমিকম্প।
‌‌
পর্ণা , ঘনীভূত রাতে নিশাচরের শব্দে
ভয়ঙ্কর রূপ নেয় একাকিত্বের বালিশ বিছানা ।
অনেক বছর তোমার পর্শে আবার
প্রথম যৌবনের কবিতা আউড়িয়ে
সারারাত হেঁটে চলি নিজের ভেতরে
খাঁচাবন্দি কথা ক্ষণ পল মুহূর্তের
যন্ত্রনারে জাবর কাটে —

পর্ণা , ঘনায়মান আঁধারে
ভালোবাসার আদুরে আহ্লাদে
ঘুম ভাঙায় উষ্ণ শরীর ,
তারপর একে অপরের দোয়াতে তুলি ডুবিয়ে
নির্ঘুম রাতের ব্যাসায়ণের ছবি ।

পর্ণা , রাতের অন্ধকারে বৃষ্টি ঢেলে
ক্লান্ত চোখে প্রশান্তির প্রলেপে ,
অতৃপ্তির ফিকে রঙের স্বপ্ন জড়ানো
কাল পেঁচার ক্লান্ত ডাকে শরীরজুড়ে বাদুরের শীতল স্রোত ;
এগিয়ে আসে দুরন্ত গতিতে
রাত্রিটাকে আরো গভীর থেকে গভীরতর করে।
‌‌
পর্ণা , আমার মনের ক্যানভাসে
নিফারটিটি হয়ে বাঁসা বেঁধে রয়েছে বিশ্বাসের নিশ্চিন্ত নির্ভরতায়
আশ্বিনের ঝোড়ো বাতাসে লন্ডভন্ড দীর্ঘশ্বাসে
স্মৃতির অস্তিত্ব ছড়িয়ে পড়েছে
একাকিত্বের অন্ধকারে।
পর্ণা , যন্ত্রণার কষ্টকর স্মৃতির ক্যানভাসে
রোজ একটু একটু করে এঁকে চলি
তোমার নিরাভরণ ছবি।
অঘ্রাণী পূর্ণিমা রাতে
সাত সমুদ্র ভালোবাসার লোভে
সারা শরীর ভিজে গেল একলাপশলা বৃষ্টিতে ।
পর্ণা , কখন যে বিশ্বাসের পারদ নামল চড়বড়িয়ে
শরীর লেপ্টানো কাজলের রঙে
বালিশ ভিজিয়ে দিলো চোখের নোনা জলে ।

পর্ণা ,ভোরের ভাঁজহীন বিছানার চাদর
শূন্যস্থান পূরণের আপ্রাণ চেষ্টায়
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ স্বপ্নের ধ্বংসাবশেষ
রাতজাগা চোখে ছেঁড়া ক্যানভাস
জ্বালা ধরানো মনে আগুনে দগ্ধে দগ্ধে
নিকষ কালো অন্ধকারে একাকিত্বের পথ চলা –
পর্ণা, ভালো থেকো ;
আমি চলে যাই সব হারানোর দেশে
তোমাকে ভালোবেসে —

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here