গর্ব ও গৌরবের অহংকারে ওপার বাংলার কবি-উৎপল বাগ লিখেছেন কবিতা“॥বাংলা বর্ণমালা ও একুশে ফেব্রুয়ারি॥”

611
উৎপল বাগ লিখেছেন কবিতা “॥বাংলা বর্ণমালা ও একুশে ফেব্রুয়ারি॥”
কবি ---উৎপল বাগ

বাংলা বর্ণমালা ও একুশে ফেব্রুয়ারি

                                                              — উৎপল বাগ

বাংলা বর্ণমালা শুধু কালো কালো অক্ষর নয় জীবন্ত বিগ্রহ
সারা পৃথিবীতে নিজের কর্তৃত্ব করেছে গর্বোদ্যত ভঙ্গিমায়
বাংলা বর্ণমালা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠা সীমাবদ্ধ নয় অন্তরে অমলিন
বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি।

একুশে ফেব্রুয়ারি জ্বলন্ত একটা অধ্যায় একটা জীবন্ত ইতিহাস
অনেক রক্ত অনেক প্রাণ অনেক নির্মম নির্যাতন
ডাকাতের হাতে সন্তানের রক্তাক্ত লাশ
অনভ্যস্ত ভাষায় মায়ের মুখে বেটা আ- জা ডাক।

উর্দুর ভাষার আগ্রাসী নিষ্পেষণে রক্তাক্ত রাজপথে
আবেগের স্রোতে ভাসছিলো যখন গ্রাম থেকে শহর
হঠাৎ বেয়োনেটের শব্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো
রফিক বরকত আব্দুল সালাম শফিউল জব্বারের লাশ।

একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি তারিখ নয় একটি আবেগ
অজস্র মানুষের গর্বোদীপ্ত ভালোবাসার স্মৃতিমেদুর
প্রতিবছর ক্যালেন্ডারের পাতায় একুশে ফেব্রুয়ারি
শুধু একটি তারিখ নয় বাঙালির জীবন্ত ইস্তাহার।

উনিশশো সাতচল্লিশের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে
নবচেতনায় উন্মেষিত বাঙালি বাংলাভাষার দাবিতে
গ্রাম গঞ্জের পথে প্রান্তরে তুলেছিল আওয়াজ
মাঝে খান সৈন্যদের অবর্ণনীয় অত্যাচারে স্তিমিত ছিলো কিছুদিন
তারপর উনিনশো বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি
অসংখ্য দামাল ছাত্র যুবক নেমেছিলো রাজপথে।

শহীদ ছাত্র যুবকদের গায়েবি জানজায় অংশগ্রহণ করতে
বাইশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেডিকেল কলেজের হোস্টেল চত্বরের
জমায়েতে ছিটকে এলো গুলি।
মুহূর্তেই মারা গেলো আরো কিছু নিরীহ মানুষ
রাগে দুঃখে ক্ষোভের আগুনে পুড়েছ তখন পূর্ব পাকিস্তান
তেইশে ফেব্রুয়ারির একরাতের গড়ে ওঠা স্মৃতিস্তম্ভ
খান সেনা গুঁড়িয়ে দেয় ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি।

উনিশশো আটানব্বইয়ের ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরের দুই প্রবাসী বাঙালি
রফিকুল ইসলাম আব্দুল সালাম
জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আন্নানের কাছে পাঠালেন আর্জি
একুশে ফেব্রুয়ারিকে দেওয়া হোক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি।

উনিশশো নিরানব্বই সালের সতরোই নভেম্বর
প্যারিসে বসেছিলো ইউনেস্কোর সম্মেলনে
একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়পত্র পেলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি
দু’হাজার দশ সালের একুশে অক্টোবর বৃহস্পতিবার
জাতিসংঘের পঁয়ষট্টি তম অধিবেশনে একশো তেরোটি দেশের সমর্থনে
একুশে ফেব্রুয়ারি পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান
বাংলাদেশের অসংখ্য মাতৃভাষা প্রেমিকের রক্তের বিনিময়ে।

একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালির আবেগ মথিত ভালোবাসার ফল্গু নদী
শুধু স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনবর্ণের সমস্টি নয় একটা জ্বলন্ত সূর্যের আলো
রাতের অন্ধকারে হাল ভাঙা নাবিকের দিক নির্ণয়ের ধ্রুবতারা
সারা পৃথিবীর অচ্ছেদ্য নাড়ির টান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here