“বিকৃত প্রাণের বর্ণমালা ”কবিতাটি সৃষ্টিশীল লেখনির আলোয় আলোকিত করেছেন কবি সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য ।

819
কবি সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য

বিকৃত প্রাণের বর্ণমালা

                                 সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য

বর্ণমালা তুমি আছো আমার প্রার্থনায় আর
বই কবিতার পাতায় পাতায়,
তুমি আছো ব্যানার ফেস্টুন আর কথোপকথনে।
তুমি আছো আমার লেখার আর আঁকার খাতায়,
তুমি আছো গল্প,গান,উপন্যাস আর বইমেলায়।
তুমি আছো দেয়ালিকায় আর পত্রিকায়,
স্কুলে উদ্যানে মিটিংয়ে মিছিলে বা পার্কে
যেখানে যাই তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাই।
আমার অগোছালো লেখাগুলো রোজ সাজাতে
অ,আ,ক,শ,হ,দ,ব,ম,ন,র বর্ণমালাদের প্রয়োজন।
আমার প্রিয় বর্ণমালা
তোমাকে ছাড়া আমি ভীষণ অসহায়।
আর সেই তোমাকেই যখন রোজ গ্রাম-শহরের
অলিতে-গলিতে বাঙালির মুখে বিকৃতভাবে উচ্চারিত হতে শুনি
তখন আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে বর্ণমালাদের করুণ শব্দের বিলাপে
শুনতে পাই অতৃপ্ত আত্নার ধ্বনি; নিঃশব্দ গোঙানি।
শিকল পড়ে হাসে দেশপ্রেমের অতৃপ্ত আত্না
আমি কান পেতে শুনি
মৃত শহীদের আত্না চিৎকার করে বলে
হায়! বাঙালি
তোমরা আমাদের ভুলে গেছো
ভুলে গেছো বাহান্নর সেই স্লোগান
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”
ভুলে গেছো আজ তোমরা
তাইতো আজ আমি বিকৃত।
চারিদিকে চলছে ভাষা বিকৃতির উৎসব,
বাংলা ভাষার দূষণ, বিকৃত উচ্চারণ,
ভিন্ন ভাষার সুরে বাংলা কথন,ভুল শব্দ চয়ন।
অশুদ্ধ-বিকৃত ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহারে
প্রাণের বর্ণমালা আজ ক্ষতবিক্ষত।
পথে নেমে কান পাতলেই শোনা যায় বিকৃত বাংলা উচ্চারণের কথোপকথন আর গালাগালি।
আজিব,ফালতু,বেইল নাই,প্যারা,লুল,ব্রো
এইরকম হাজারো শব্দ বিকৃত হয়ে মুখে মুখে ঘুরছে অলিতে-গলিতে।
আমি বর্ণমালার বিকৃতি চাই না
প্রভাত ফেরিতে নগ্ন পায়ে স্লোগান দিতে চাই
“বর্ণমালার বিকৃতি আর নই”।
ভাষা শহীদদের আত্নত্যাগের কথা স্মরণ করতে চাই,
শুদ্ধ উচ্চারণ, সঠিক শব্দ চয়ন আর বাংলা ভাষার দূষণ রোধ চাই সর্বত্র।
বিকৃত হলে প্রতিবাদ করতে চাই।
সর্বস্তরে বাংলা চাই।
মায়ের ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন যারা,
তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান রেখে
আমি সচেতন হতে চাই ভাষা বিকৃতির বিরুদ্ধে।
তা হোক এখন থেকেই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here