পিরিয়ড
— উৎপল বাগ
— বারাসাত
মেয়েটার পিছনে রক্তের দাগ দেখে
নাক সিঁটকে চলে যায় শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষ
বিড়বিড় করতে করতে বলে কি অসভ্য মেয়েরে বাবা
কাপড়টা একটু ঠিকঠাক করেও রাখতে পারেনি ?
টিভিতে রেডিওতে এমনকি স্কুল-কলেজে ন্যাপকিন বিতরণ
সচেতনতা বাড়ছে না কিছুতেই যতসব অসভ্য মেয়ে !
যেন একটা অস্বস্তিকর কান্ড বন্ধু-বান্ধবীর টিটকিরি
জৈবিক ক্রিয়ার খণ্ডন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার জেনেও
সবাই নাক সিঁটকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় বিদ্রূপের বাক্যবাণে —
ওরা তো কারো মেয়ে কারো বোন কারো দিদি কারো বৌদি কিংবা কারো মা
তবুও নিজের মা বোন বৌদির সঙ্গে তুলনা করতে অসংখ্য কুষ্ঠা
নিজেদের ঘরের মেয়ে গুলোর উপর কি চাপিয়ে দেয় না তো
অদ্ভুত নিয়ম নীতি –
পুরুষগুলো বোঝেনা কেন পাঁচ পাঁচটা দিন
অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও
বাড়ির সমস্ত কাজ রান্নাবান্না করতে হয় মুখ বুজে।
তখন তো কেউ বলে না তুমিও আশুচি এ কদিন রেস্ট নাও
না বলতে পারেনি পৌরুষত্বে আঘাত লাগার ভয়ে।
আমরা সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠেও
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ চিরকাল পদদলিত রাখতে চাইলেও
মেয়েরা ট্রেন জাহাজ থেকে জেট প্লেন চালাচ্ছে অনায়াসে
এমনকি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে
দীর্ঘদিন একাকী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে ।
আমরা দেখেও না দেখার ভান করি শুধু রক্তের দাগ খুঁজে ফিরি
বিশ্বাস করতে চাইনা এই পাঁচটা দিন কি অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করে
দাঁতে দাঁত চেপে মানুষগুলোকে পৌঁছে দেয় নিরাপদ গন্তব্যস্থলে
মা ঠাকুমা দিদিমা সকলকে এই পিরিয়ডটা সহ্য করতে হয়েছে
এখন সহ্য করতে হচ্ছে পঞ্চাশোর্ধ মহিলা থেকে কুমারীদের ।
যারা অফিস-আদালতে বসে সমান অধিকারের প্রশ্ন তোলে
তারা কি একবারও ভেবে দেখেছে প্রতিমাসেই
নিদারুণ কষ্ট সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে কাজের টেবিলে
তখন কি আমরা বলি তোমার কাজটা করে দিচ্ছি বাড়ি যাও —
দ্রৌপদী যখন ঘরের কোণে মেনসস্টিটিউশনের যন্ত্রণায় করছিলো ছটপট
তখন তো দু্ঃশাসন তার চুলের মুঠি ধরে নিয়ে এসেছিল কৌরব সভায়
পাশবিক লোভ-লালসায়।
অনেক আগে গ্রামবাংলার শিক্ষার আলো বহির্ভুত প্রত্যন্ত অঞ্চলে
পিরিয়ডের সময় এলেই তাদের মা দিদি শাশুড়ি ঢুকতে দিত না রান্নাঘরে
কিংবা করতে দিতো না দৈহিক পরিশ্রম
রজস্বলা হলেই তারা আনন্দে আহ্লাদে আগামী প্রজন্মের অপেক্ষায়
মেয়েটা বউটা কিছুদিন পরেই গর্ভবতী হবে।
আর এখন পাঁচ দিনের নিদারুণ কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করেও
সংসারের সব দায়-দায়িত্ব এমনকি অফিস-আদালত কাছারি
সব জায়গাতেই ছুটে চলে যেতে হয় চাকরি বাঁচাতে।