ওপার বাংলার কবি নিমাই জানা এর একটি দীর্ঘ কবিতা “এক জামা রঙের ধর্ম”

961
ওপার বাংলার কবি নিমাই জানা এর একটি দীর্ঘ কবিতা “এক জামা রঙের ধর্ম”

এক জামা রঙের ধর্ম

                    নিমাই জানা

এক

আমি স্বরবর্ণ লিখছি
শব্দে ভাঙছি স্রোতের ঢেউ
সকল রংয়ের নারীরা খেলে যায় কালো অন্ধকারে। ছায়া আমাকে ছেড়ে চলে অজানার দিকে ।এখানে নদীর মায়া জলে কালো অন্ধকার । মাথার উপর এসে বসে নিদারুণ কান্নার বয়স্ক মানুষ গুলো । মায়ার মত আমার বুকের ভেতর জেগে আছে কাকদ্বীপ ।হৃদপিণ্ড ছুঁয়ে যাওয়া পবিত্র জল সব আয়ু নিংড়ে বের করে আমার ধর্মকে ।
এখান থেকে কেউ আর নাঙ্গল কাটা পৌঁছায় না
যতদূর আলো যায় কৃষ্ণচূড়ার, কৃষ্ণ ঠাকুর এদের মাথা খেয়ে আগুন জ্বালে ।
সেখানেই মাথা নত করে শাহেদুলের প্রার্থনা ।

দুই

পাতার ছায়াছবি গান অসম্ভব আত্মার কাছে ।
আত্মার কোন যুগ হয় না ।যদি, মায়াময় আলোর সাথে যোগ হয়ে যায় পার্থিবের।
আবছায়ায় মনে হয় মাকড়সার শুকনো স্তনে তেতুল পাতা লেগে আছে।
অঙ্কুর ধানগাছ ,রাস্তায় জমা জলে সখ্যতা কুড়ায়।
গোধূলি বেলায় নারীসঙ্গ ভোগ কোন প্রার্থনার জন্য নয় । যারা সঙ্গ ছেড়ে ভোগ হয়, তারা নারকেল পাতারশুদ্ধ বাতাস হয়ে ওঠে। বেলপাতা তাদের লোমকূপ ছাড়িয়ে পুরুষগুলোকে ক্রমশ আনমনা করে তোলে,
বজ্র ঋতুর মতো ।

তিন

গাছের তলায় সন্ন্যাসীর মতো বর্ষার পুরুষরা ভিজে গেলে ,গায়ের গন্ধ জলজ হয়ে যায় ।আমি আর মাকে মনে করছি না এখন । ওরা অভিমানীর মত মাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর কোন গল্প নেই ,কোন কবিতার স্তবক উচ্চারণ করিনি । ছায়া পড়ে গেছে আমার শিশুর মত । নখের ময়লা বের করে আমার নারী ঘুমোতে নিয়ে যায় একটা দেওয়ালের ভিতরে । গলা চেপে ধরে বাড়ির শ্বাসবায়ু , আমি সাপের স্বপ্ন কতকাল দেখিনি ।জড়িয়ে ধরতে বড় ভয় হয় । শোনা আর দেখার সাহস নেই বলে
কৃষ্ণ ও সুরার কোন প্রতিবাদ নেই ।

চার

যারা আজান পড়বে বলে শাড়ির নিচে অন্যের ধর্মগ্রন্থ লুকায় ,এদের তালপাতা করে দেয় রক্ত । আমার রক্ত শুষে নিচ্ছে অন্য রক্তের যত ধর্ম , তাদের কষ্টিপাথরে যাচাই করছে মুখের লালারস । আলাদাভাবে ধর্ম জন্মায় না ধর্মগ্রন্থের ভেতর ।
কেউ হাতে তুলসী পাতা তুলে দিয়ে ছোট ঘরের ভেতর বসিয়ে দেয় জুতো খুলে । মন্দির নেই । মসজিদ নেই । কাবা নেই । কাবাব নেই ।
প্রতিটা পুরুষ ব্রাহ্মণ ঠাকুর হয়ে যাচ্ছে চুল খোলা কালী মন্দিরের পারে ।
দক্ষিণী হাওয়ায় সাইকেল প্যাডেলে ভোর হয়ে আসছে ক্রমশ ।

পাঁচ

সন্ধ্যাবেলা ফিরে যাচ্ছে পড়ার টেবিলে
এদের কোন বাহু কাটা আলনা হয়না ।
ঠোঁটে সায়ানাইড রাখলে কোন দিন মৃত্যু হয় না লম্বা হয়ে কেউ কেউ শুয়ে থাকে উর্বর মাটির কাছে ।পুরুষেরা সবকটি হাত ঊর্ধ্বমুখী রাখে ।
ইন্দ্রের আর কোন প্রাণের মায়া নেই।
ঠোঁটে হাত চেপে কেউটে সাপের খোলস ছাড়িয়ে যাচ্ছে । সহমরণে লাভ আছে কি নারীর ? কালপুরুষ এর মত স্থির নক্ষত্রের মানুষ গুলো দাঁড়িয়ে থাকে গাছের ছায়ায় ।আমার সব আঙ্গুলগুলো দেয়ালে ছায়া ফেলছে পরস্পর রেখা বিরোধীর । কেউ নেকড়ে বাঘ । কেউ শেয়াল । কেউ জ্যান্ত মানুষ। কেউ মরা মানুষ ।
ধমনীর ভেতর একে একে জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে আসছে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here