“পরবাসে ” কবিতাটি লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি বিমল মণ্ডল

488
“পরবাসে ” কবিতাটি লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি বিমল মণ্ডল

পরবাসে

             বিমল মণ্ডল
১.
কাঁধে ব্যাগ রেখে স্টেশনে কতবার নেমেছি রাতে
হেঁটেছে স্তব্ধ জনতার ট্রেন লাইন পথে পথে
কেবল ঘরেতে অসহায় বাবা তাই অন্ধকার সাথে
গায়ে নোংরা, রক্তাক্ত শরীর আড়ষ্ট বাড়ি ফেরার জগতে

মাইল মাইল হেঁটে চলি খুলে খুলে পড়ে শরীর
তবুও পুলিশে মার পড়ে থাকে শুধু অন্ধকার
লেড়ি- কুকুরের ক্ষুধার পথে আমিও সঙ্গে কিচ্ছুক্ষণ
হেঁটেছি, সাঁতার দিয়েছি ক্লান্তিতে ভেজা শরীরে
অবসন্ন শরীর তখনও পথ থেকে পথের ভেতরে

পনেরোদিন এভাবে ক্লান্ত শরীর টলমল গ্রাম পথে
আরও চৌদ্দদিন বিধান কাটে পরবাস দিন-রাতে।
২.
শেষ দেখা হবে কি না জানি না
ভাঙাচোরা সাপ ঘরে কাটবে জীবন
ঘোষণা, অজুহাত রুক্ষ গণ্ডগোল
দুপুর রাতে ঘুমহীন চোখের পাতায়

ছয় বছরের ছেলেটার ডাক শোনা যায়
অবাক চোখে তারাদের সাথে আধোচোখে
স্নেহ জাগে অবুঝ হয়ে ক্ষণিকের নেশায়
সকালে পরবাস জীবনের শেষ সাপের কামড়ে ।
৩.
কতদিন ধরে এই ক্লান্ত হাতের নিড়ানি
পথে -প্রবাসে, সন্ধ্যা -রাতে
শিশু, নারী, পুরুষ হাঁটে
তবুও জীবনের সাথে চাঁদ, সূর্য, জোছনা
কখনো রাত জলে, কখনো অন্ধকার ফুটপাত
আজও ভিজে চলে পরবাস
নক্ষত্রের তলে…
৪.
প্রতিটি প্রদীপ জ্বলে আশীর্বাদ আয়না
বিপন্নতা পথে কাঁদে খোলা জানালা
সূর্য ওঠে, চাঁদও আকাশ যাপন
পরবাস অভিশাপ সশব্দে শরীর
নিছক কয়েকটি দিন
কেটে যায় কামনাছাড়া পরবাসে।
৫.
দীর্ঘ আয়ুয়ের আকাশ আলো পথ
বুনে যায় জীবন, জীবন কথা
কুশলবিনিময় দু’একটা সম্পর্ক দূরত্ব
ভিজেযায় এবং আতঙ্ক শরীর

দৈন্যতা কাটে প্রবাসী সন্ন্যাস
আঁধার সংকেত পরবাস ভাণ্ডার
আয়ুকাল কাটে এমন যাপন ।
৬.
স্বপ্ন দিশেহারা প্রাঙ্গণ মাঠ
বিক্ষিপ্ত সবুজ ভাঙনকথার ঈশ্বর
হোঁচট খাওয়া অন্ধকার গলি পথ
অদ্ভুত আশার সুবাস নিঃশ্বাসে

মৃদুমন্দ কথা আড়াল বাতাস
বনানী ছায়া রহস্যযাপন শাখায় শাখায়
বিবর্ণমুখগুলি হলুদাভ
ক্ষণিক হাসি ঘেরা পরবাসে
সারারাত চোখ জলে।
৭.
কথা আর আসে না সেভাবে
লুকিয়ে রাখা যৌবনকথা
মাসোহারাহীন কয়েকটি রাত
রক্তমাংসের শরীরচিত্র পড়ে
ফুটপাত, খোলামাঠে

অনুভবেও বাতাস জাগায়
শরীরী শিহরণ
অবাক বিস্ময়ে ঘোরকাটে
সেই রাত, এই পরবাস।
৮.
বহুদিন ধরে হৃদয় রেখার শরীরে তাকাই
ক্রমশ গতকাল, আজ, আগামীকাল
কেটে যায় হাঁটার অনেকটা সময়

অন্ধকার বিকশিত করে নদীবনপথ
নির্জনতা সেই ঘুরেফিরে
এই পৃথিবীর অচেনা পরবাসে।
৯.
আমারই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সরলীকরণ
জীবন আলো নীভছে, জ্বলছে
অর্ধাহারে, অনাহারে জীবিত প্রাণ
সামান্য চাওয়া ছড়িয়ে রাজপথে
বিকৃত উপহার পরিযায়ী শ্রমিক

খাতা-কলমে, বিজ্ঞাপন ছোটো পর্দায়
আজন্মকাল প্রতিটি প্রত্যক্ষ
দুঃসময় অন্ধকারে বিমূর্ত শরীর।
১০.
অস্পষ্ট নিশানা আদব কায়দা
ভরা পৃথিবীর খুনি সমীপে
ক’জন মিলে দাপাদাপি নিবিড় গহ্বর
কেউ এসে ভালো লাগা কথা
বারবার এই আহ্বান সমগ্রতা

পরবাস শেষবার এই সম্বল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here