পিতা
———–
নাসরিন জাহান মাধুরী
সেই রাত্রিতে
সেই রাত্রিতে মায়ের গলা জড়িয়ে নিশ্চিন্তির ঘুমে ছিলাম।
মা নিশ্চিন্ত ছিলেন না
বাবার জন্য অপেক্ষায় নিদ্রাহীন
বাবা আসছেন চিটাগং মেইলে
বন্দর নগরী থেকে সওদাগরি করে..
অনেক ভোরে বাবা এলেন
সবাই জেগে ওঠলাম
আমার জন্য পার্কার কলম, বোনের জন্য লাল টুকটকে জামা মায়ের জন্য ক্রোকারিজ, আরো কতকি?
বাবা ফিরেছেন, সবাই কি নিশ্চিন্ত আমরা!
তখনো জানি না বত্রিশ নম্বরের খবর…
ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর
যেখানে জাতির পিতা থাকেন
বত্রিশ নম্বর, জাতির পিতা –এই শব্দগুলো কানে আসতো
কিন্তু শব্দগুলোর কোন মানে জানা ছিলো না..
প্রতিদিনের অভ্যাস বসে বাবার ফিলিপ্স রেডিওর নব ঘুরাতেই…
পাঠকের যান্ত্রিক কন্ঠ ভেসে আসছিলো..
জাতির পিতা স্বপরিবারে নিহত…
কেউ বেঁচে নেই..
বাবা ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে স্তব্ধ হয়ে বসে
মায়ের মুখেও শব্দ নেই..
জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে..
কারা হত্যা করলো?
এখনতো যুদ্ধ নেই?
পাকিস্তানি সৈন্য নেই?
সবাই আমরা একজাতি…
হ্যা আমরা সেই জাতি যারা জাতির পিতাকে হত্যা করি..
স্বঘোষিত হত্যাকারী পৈশাচিক আনন্দে মাতি…
আমরা লজ্জাহীন ভাবে সেই পিতাকে হত্যা করি যিনি এনে দিয়েছিলেন
একটুকরো স্বাধীন বাংলাদেশ…
যারা সঠিক ইতিহাস জানে না বাঙালির গর্বের, আজো তারা বিকৃত উল্লাসে মাতে
প্রতিদিন হত্যা করে জাতির পিতাকে…
পিতৃহীন জাতি কতটুকু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে গেলো..
কলঙ্ক মোচন হবে কি আর হাজার বছরেও!