তোমার আমার একটাই ঘর
অ ল ক জা না
তুমি কেমন আছো ? ভালো থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আমার জায়গাটা কেমন রেখেছো ? খুব দুর্গন্ধময় তাই না ? অথচ ওটাই তখন তোমার কাছে সারাদিনের ভালো থাকার ফুসমন্তর ছিল। সময় পরিস্থিতি কখন কাকে সামলে চলে বলো। তো কিছু সম্পর্ক ভাঙবে, নতুন কয়েকটি মাত্রা পাবে নিশ্চয় এটাই বলতে চাইবে, জীবনও সেটাই আশাকরে তাই না ? এ সব পাতি ধারণাকে আমি কখনোই প্রশ্রয় দিইনি। তাছাড়া সম্পর্কের যোগবিয়োগের খেলায় আমি বরাবরই স্বাধীনচেতা। তাই তো এখনো বলি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই লাইনটা ” ভালোবাসা নাও হারিয়ে যেওনা ” যার কোন স্বার্থ থাকে না প্রকৃত অর্থে সেই যথার্থ ভালোবাসতে পারে।
এখনো বিশেষ কিছু মাস তারিখ রঙ গন্ধ নির্দিষ্ট করে তোমার কথাই বড় বেশি মনে করায়। সাময়িক আনমনা হলেও নিজেকে সামলে নিই। অবশ্য তোমাকে তোমার ভেতর খোঁজাই আমার ছিল একান্ত অভিরুচি। এখন অবশ্য আমার ভেতর তোমার ঘরটি ভেজানো পড়ে আছে। ধুলো পড়েছে, সেদিন কালবৈশাখীর দিকভ্রম কিছু শুকনো পাতা হয়তো ঢুকে পড়েছে। সময় সংকোচে দেখা হয়ে ওঠেনি। তোমার দেওয়া জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতার বই আমার লেখার টেবিলে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। তোমার দিনযাপনের মান আগের চেয়ে বেশ চনমনে তাই না ? আমার পাল্লা থেকে বেঁচে ফিরেছো এটাই তোমার জীবনের অন্যতম অর্জন, তাই তো ?
বসবাসের ঘরটুকু দেয়ালে দেয়ালে কত আলাদা। প্রতিটি কক্ষের চরিত্রগত ব্যবধান মনে করিয়ে দেয় আমার নিত্য কর্মের প্রকরণ। বসার ঘর। শোবার ঘর। রান্না ঘর। স্নানঘর। লেখাপড়ার ঘরেই সাজিয়ে রেখেছি নানান স্বাদের বই পত্রপত্রিকা। কেউ অতিথি এলে প্রথমে বসার ঘরে ডাকি। খেতে চাইলে রান্না ঘর। যদি স্নানের ইচ্ছে থাকে হাতে তোয়ালে দিয়ে স্নানঘর দেখিয়ে দিই। এভাবেই বসবাসের প্রতিটি কক্ষের ভিন্নতাগুলো মানুষের চরিত্রের ওপর ভর করেই হাঁটে। তখন একটি মানুষ, একটি ঘর হয়ে যায়। তখন তার ভেতর বোধ বিশ্রাম স্নান রান্না পাইচারি করে লালিত সম্পর্করা বেঁচে থাকে। প্রেম অভিমান চেঁচামেচি খুনসুটি তো চলতেই থাকে।
আমার ঘরটি ঠিক তোমার ঘরের মতোই। আমার মতো অতিথি সেবা তোমারও অমায়িকতার সুগন্ধ নিয়ে ফিরে ফিরে আসবে এটা প্রত্যাশা একটা মানুষ করবে না কী বনের পশু করবে ? নিশ্চয় স্নানঘরের বালখিল্য কিংবা পটি হিসুর গন্ধ কারোরিই মনে রাখা তেমন একটা জরুরি বিষয় না। যদি তাই মনে রাখার পণ করে থাকো তবে তুমি কী ডাস্টবিন পূজারি ? না তো আমার এতগুলো কক্ষের গুণগত মান তোমার মন ভেজাতে পারলো না ? কোনকিছুর মূল্যায়ন এক তরফা কতখানি অনিষ্টকর তা এই পিছিয়ে পড়া চিন্তা ভাবনায় আটকে থাকলে জীবনকে পদে পদে তার খেসারত দিতে হবেই। তখন চোখের জল কিছুই করতে পারে না। আর ওই কান্না সমস্ত খলনায়ক নায়িকারও থাকে তাতে বাড়তি সুবিধে কিছু হয় বলে আমি মনে করি না।
আমার এতসব ভালোর মন্দটুকুই তুমি সঞ্চয়ে রাখলে ? আর কী কোন মন্দ আমার মতো নেই ? তোমার আমার একটাই ঘর। তোমার বসত হোক আমার লেখাপড়ার ঘরে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ কালিদাস বসবাস করে আছেন। আমার কোন তাড়া নেই। প্ররোচনা আসলে ঘরের একটি কার্নিশ বা ব্যালকনি। তার পাল্লায় পড়লে প্রতিটি ঘরের গন্ধকে অপরিচিত মনে হয়। তখন সম্পর্কে ভাঙন, অগ্নিসংযোগ আত্মহত্যার মতো অসুখ হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে।