১৯৭১
নাসরিন জাহান মাধুরী
১৯৭১ এমনই এক কবিতা
এমনই এক কবিতা ১৯৭১
কবিতার শুরু ৭ মার্চের বজ্রকন্ঠ দিয়ে
কবিতা মঞ্চে বঙ্গবন্ধু
চার খলিফা,কৃষক শ্রমিক মজুর
ধর্ম বর্ণ শ্রেণী একাকার
স্বাধীন মানচিত্রের নকশা আঁকা পতাকা হাতে…
বজ্রকন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়..
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…
বাঙালীর চোখে মুখে প্রত্যাশার স্বপ্নবীজ
রোপিত হয়..
স্বাধীনতার প্রত্যাশা…
২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে…
প্রত্যাশাকে গুড়িয়ে দিতে শুরু হলো ধ্বংসের কবিতা…
বুলেটে আগুনে ক্ষতবিক্ষত রক্তান্ত
আমার এই বাংলা…
পুড়ে ছাই গ্রাম থেকে গ্রাম
শহর থেকে শহর… জনপদ..
শুন্য ভিটায় ঘুঘু চড়ে..
উঠানে শ্যাওলা আর ঘাসের বাড়ন্ত
যে মেয়েটি উঠানে ফুল বাগানে প্রেমের কবিতা শুনতো..
তার কবিতাগুলো কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে বদলে যেতে থাকে..
রক্ত হিম করা কবিতারা জন্ম নেয় সেখানে..
যে ছেলেটি মায়ের আঁচল ধরে থাকতো
ডায়েরিতে থাকতো অসাধারণ সব ভালোবাসার গল্প..
তার হাতে আজ অস্ত্র
সে আজ কলম ফেলে যুদ্ধে গেছে..
যে ছেলেটি অনায়াসে সকালের ফ্লাইটে চলে যেতে পারতো উচ্চশিক্ষার অজুহাতে..
সেই ছেলেটি , হ্যা সেই ছেলেটি প্লেনের টিকিট ছিঁড়ে ফেলে…
মাকে বলে -মা আমি যাচ্ছি
মা আমি যুদ্ধে যাচ্ছি
আবার দেখা নাও হতে পারে মা
মা তুমি ভালো থেকো..
মা বলেন আমিও আছি সহযোদ্ধা..
জ্বলে ওঠে সাহসী পুরুষ
জ্বলে ওঠে সাহসী নারী…
চলো চলো যুদ্ধে চলো
বীর বাঙালী অস্ত্র ধর
বাংলাদেশ স্বাধীন কর…
রচিত হয় ত্যাগের কবিতা..
কত রাত নির্ঘুম..
প্রশিক্ষণ চলে যুদ্ধের..
কত মায়ের কোল ছেড়ে ছেলে চলে যুদ্ধে..
যে নতুন বউটির হাতের মেহেদীর রঙ শুকায়নি..
সে তার স্বামীর হাতে অস্ত্র তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে…
বলে গেছে আবার দেখা হবে স্বাধীন বাংলায়…
দেখা হলো না–
স্বাধীনতা এলো প্রাণের বলেন বিনিময়ে..
যুদ্ধ চলে চুপিসারে
গুপ্ত যুদ্ধ এখানে সেখানে
ঘায়েল পাক হানাদার…
কত সাহসের কবিতা রচিত হতে থাকে…
কিছু ঘৃণার কবিতাও আছে ৭১ এ
সেই রাজাকারদের, বিশ্বাসঘাতকদের..
লজ্জার কবিতা অপমানের কবিতা..
তারপর তুমি এলে স্বাধীনতা
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১
হয়ে অহংকারের কবিতা
ভালোবাসার কবিতা
শোক থেকে শক্তির কবিতা..
জেগে ওঠে অমিত শক্তির বাংলাদেশের আভাস…