মাতৃভাষার মায়ায় আবদ্ধ ক্ষুদে লেখক সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য-এর লেখা একুশের চেতনার কবিতা”শহিদদের উচ্চারিত শব্দ”

360
মাতৃভাষার মায়ায় আবদ্ধ ক্ষুদে লেখক সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য-এর লেখা একুশের চেতনার কবিতা"শহিদদের উচ্চারিত শব্দ"

শহিদদের উচ্চারিত শব্দ

                           সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য

বাড়ির আঙিনায় পুষ্পদল দেখে,
হেঁটে হেঁটে খানিকটা পথ দূরে…
কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর মতো আমিও দাঁড়িয়ে,
রক্তে রাঙা ফেব্রুয়ারির শিমুল ফুলের দিকে,
অপলক দৃষ্টিতে আছি তাকিয়ে!
ফাল্গুন মাসের ভাষার পাখি কোকিল কন্ঠে-
ভাষার কথা শুনে;স্তম্ভিত আমি!
শরীরের সমস্ত রক্ত আজ টগবগে ফুটতে থাকে।
পাতাঝরা গাছের ডালে ডালে ফোটা…
পলাশ,শিমুল,কৃষ্ণচূড়া,
পুঞ্জিত আম্রমুকুল আর
অকালে ঝরা কাঁচা পাতাগুলো সব মনে করিয়ে দিচ্ছে—
বাহান্নর উত্তাল সেই দিনের কথা।
তারুণ্যের শব্দ বিপ্লব,সাহসী উচ্ছ্বাস ও বাঁধভাঙা আবেগের কথা।
পলাশরাঙা এমন দিনে একাকার হয়েছিল বাংলা।
শুকনো পাতার ওপর মানুষের পদশব্দ;মর্মর ধ্বনি-
আমার কানেকানে বলছে,
সুগম্ভীর শহিদ মিনারে—
পুষ্প অর্পণের সময় হয়েছে।
প্রভাতফেরির আবেগমথিত দৃশ্য দেখার,
প্রহর গোনা হলো শেষ।
ফুলেল অভ্যর্থনায় শর্তহীন গান কন্ঠে ওঠে—
চকচকে মানুষগুলোর কন্ঠ থেকে—
ঝরে ঝরে পড়বে আবার অবিরত…
আ-আ-আ-আ-
অ,আ,ম,র,ভ,ই,য়,ক,খ,গ,ন,ফ……
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি’….।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সকল ঘটনা,
কালজয়ী গানের সুরে… চোখের সামনে ভাসতে থাকবে।
শহরের রাজপথে,
খালি পায়ে আরও একবার হেঁটে যাব…
সকল শহিদদের সাথে,
ভাষার গানের সমবেত সুরের মায়াতে গাইব আমরা।
বুকের চাপা আর্তনাদ!
চোখ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায়,
মনের মাঝে অদ্ভুত শিহরণ জাগায়,
গায়ের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে যায়,
রক্তপিণ্ডকে প্রদক্ষিণ করে।
প্রদক্ষিণ শেষে ফিসফিসিয়ে বলব,
কেমন আছো শহিদেরা?
তখন দন্ডায়মান স্তম্ভ আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে-
দীর্ঘশ্বাসের মতো ভারী বাতাস হয়ে,
দ্রুত শূন্যতায় ভেসে চলে যায়।

আর আমি!
ছলছল নয়নে শহিদ স্মরণে-
শিমুল,পলাশ ও গুলমোহরদের সাথে নিয়ে…
মুগ্ধতা নিয়ে নত করে শির-অসীম শ্রদ্ধাভরে…
রক্তপিণ্ডের সম্মুখে দাঁড়িয়ে-
আজ উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়েছি—
‘আমি সচেতন হয়েছি’।
‘আমি নিজেকে শুধরে নিয়েছি’।
‘আমি তোমাদের মান রেখেছি’।
‘আমি তোমাদের আত্নত্যাগের কথা ভুলিনি’।
‘আমি মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি’।
‘আমি আমার প্রিয় মাতৃভাষার শত্রু হয়নি’।
‘আমি দেয়ালে দেয়ালে বর্ণমালাদের পোস্ট দিয়েছি’।
এমন সময় হঠাৎ!শহিদ বেদিতে;
হু-হু করে বইছে হিমেল হাওয়া।
সকল শহিদ ভাইয়ের আত্না জেগে ওঠে- হাওয়া হয়ে মিশে যায়।
শোঁ শোঁ শব্দ হয়ে কানেকানে আজ বলে যায়-
“তোমার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ বোন।”
শব্দগুলো উচ্চারিত হতে শুনে, আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।  
আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে!
চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি;শহিদ বেদিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here