ভারত থেকে সমাজ-সভ্যতার কবি সুমিতা বর্ধন এর অনুভূতি-স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ কবিতা“অস্তিত্বহীন নববর্ষ ”

347
ভারত থেকে সমাজ-সভ্যতার কবি সুমিতা বর্ধন এর অনুভূতি-স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ কবিতা “অস্তিত্বহীন নববর্ষ ”

অস্তিত্বহীন নববর্ষ

                     সুমিতা বর্ধন

কয়েক বছর আগের নতুন ভোরের-
নতুন সূর্যটাকে ঠিক যেনো পাই না।
কোথাও যেনো একটা না পাওয়া
কাজ করে,
সেই না পাওয়ার মধ্যে রয়েছে
কিছু অস্তিত্বের অনুপস্থিতি।
ছোটবেলার ঐ সূর্যটাই ছিলো
আরো প্রাণবন্ত ,আরো
লাল টকটকে ঠিক যেনো গনগনে আগুনের গোলা।
“শুভ নববর্ষ ” নামটাই শিহরন জাগানো,
সেই অস্থিত্বগুলোই যেনো
নতুন সূর্যের ঝলমলে ভাবটা
আরো কিছুটা বাড়িয়ে দিতো।
সকালের ঠাকুর ঘরের
তিললাই কদমা বাতাসা
আর ধূপের গন্ধে সে এক অন্য কথা।
ঠাকুর বাড়ির লম্বা লাইনে
হালখাতা ,প্রসাদ আর পুরুত মশাই।
বৈশাখী মেলায় হরেক রকম
খেলনা ,বাটি আর বাঘ সিংহ
এখনো টানে আমায়।
পশ্চিমের লাল টকটকে সূর্যটা
আমাকে নতুন ভোরের জানান দেয় ঠিকই ( কিন্তু),
আমি তাতে প্রানের স্পন্দন পাই না যেনো।
কিন্তু দেখো ওই যে কাতারে কাতারে
মানুষ যাচ্ছে মেলায়,
বাচ্চাদের হাতে কাগজের তৈরি-
চরকা, স্পঞ্জের পাখি বা হরেক রকম পুতুল বাটি।
ঘরে ঘরে মাংস ,কোরমা আর
মন্ডা মিঠাই-এর ছড়াছড়ি।
নতুন জামা নতুন জুতো আরো কতো কি,
সেগুলো আজ আর তেমন টানে না আমায়।
ও বাড়ির বাচ্চাটা চেঁচায়
নতুন জামার জন্য,
যেদিন অস্তিত্বের টান ধরবে
সেদিন তাঁর কাছেও
নতুন ভোরের লাল সূর্যটা
অনেকটাই ফিকে লাগবে,
আজ যেমন আমার লাগে।
তারপরেও নতুন ভোর টা আসবে-
প্রতিবার ঘুরে ঘুরে আসবে,
ও বাড়ির বাচ্চাটা মেলায় যাবে
পুতুল কিনবে ,খেলনা বাটি কিনবে,
নতুন জামার জন্য বায়না করবে।
যতক্ষন অস্তিত্ব গুলো জেগে রয়
ততক্ষন আমাদের নতুন বছরের
চাহিদা গুলোর সাথে
আমরা আপোষ করি না।
তাই ওরাও নতুন ভোরের আকাশে উড়তে চায়।
আর ,আমি নিজের অস্থিত্বগুলো
হারিয়ে ফিকে হয়ে যাওয়া
নতুন ভোরের নতুন সূর্যটাকে
শুধু দেখতেই থাকি-
কোন আবদার ছাড়া, কোন অধিকার ছাড়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here