লক্ষ্যতা
———–
সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য
কেউ পায় না খেতে দু’বেলা,
কেউ খায় পেটভরে তিনবেলা,
কেউ যা পায় তা খেয়ে বেঁচে থাকে।
কেউ পারে না কিনতে হাজারের ভেতরে,
আর কেউ কিনে হাজারে হাজার ছাড়িয়ে গেলে।
কেউ অল্প পেয়ে সুখী ও সন্তুষ্ট,
কেউ অধিক পেয়ে অসুখী ও অসন্তুষ্ট।
কেউ খায় মাটিতে পাটিতে বসে,
কেউ খায় নামি-দামি রেস্তোরাঁয়,
কেউ খায় পথের ধারে কিংবা ফুটপাতে,
কেউ খায় দামি চেয়ার-টেবিলে।
কেউ থাকে রাজার হালে বিলাসবহুল ভবনে,
আর-কেউ গাছতলায় পড়ে থাকে মনের আনন্দে।
কেউ খাবার নষ্ট করে নিশ্চিন্তে,
কেউ নষ্ট করা খাবারের অপেক্ষায় গুটিসুটি মেরে বসে থাকে।
কারো প্রিয়জন অর্থের অভাবে…
বিনাচিকিৎসায় মরছে তাদের সামনে,
কেউ অর্থ দিয়েও পারছে না শেষ রক্ষা করতে।
কারে শিশু যত্ন ও ভালোবাসায় ঘরে ঘরে বেড়ে ওঠে,
কারো শিশু অযত্ন ও অবহেলায় পথে পথে বেড়ে ওঠে।
কেউ ধূলোমাখা পথে ঘুমায় শান্তিতে,
কেউ দামি খাটে ঘুমায় অশান্তিতে।
ক্ষমতার দাপটে কেউ নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে,
ক্ষমতাহীন হয়েও কেউ নিরীহ মানুষের পাশে থাকে।
একই প্রজাতির মানুষের মধ্যে কত ভিন্নতা আছে—
কেউ কালো!কেউ সাদা!কেউ খাটো!কেউ লম্বা!কেউ পঙ্গু!
কেউ অন্ধ!কেউ পাগল!কেউ উন্নত স্বাস্থ্যের অধিকারী!
আর কারো দেহ হাড়জিরজিরে।
তারতম্য আছে-
বয়স,মেধা,জ্ঞান,কথা,কাজ ও চিন্তাভাবনায়।
বৈচিত্র্যময় জীবন জগতের তারতম্য নিয়ে…
এক একটি গল্প উপন্যাস হয়ে ওঠে।
মানুষে মানুষে…
ধর্মে ধর্মে তারতম্য দেখেছি জগৎজুড়ে!
তারতম্যের কারণে-বহু মানুষ আহত-নিহত হয়েছে।
সমাজে নীতি নৈতিকতা আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে,
রাজনীতি ও অপনীতি পরষ্পর মিশে গেছে।
বহুবার বহুভাবে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে,
বিভেদটা চলে আসছে অনেক আগে থেকে,
হয়তো!পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই।
কেন থামছে না এই বৈষম্যপণা?
এর শেষ কোথা হবে?
আমায় তোমায় ভেদাভেদ!
উচু-নিচুতা এল কোথা থেকে?
মানুষের সমাজে কৃত্রিম ভেদাভেদ কে করে?
মানুষ না কি স্রষ্টা?
যত তারতম্য আছে এই ধরাতে,
সব এই নশ্বর দেহের সাথে।
নশ্বর দেহ ছেড়ে প্রাণপাখি যেদিন পালাবে…
সেদিন!সকল তারতম্যের অবসান হবে।
তারিখ: ১১.০৫.২০২১ খ্রিষ্টাব্দ।