“পরীবানু” গল্পটি লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি কবি ও লেখক সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী।

774
“পরীবানু” গল্পটি লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি কবি ও লেখক সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী।

পরীবানু

  সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী।

পরীবানু,
কি কন?
আলোটা নিভায়ে দে ।
এখন ই ?
এখন ই না তো কখন দিবি?
পরীবানু মাথায় সুগন্ধি তেল দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে। মুখে গলায় পাউডার মাখিয়ে চোখে কাজল দেয় ।
রহমত বিছানায় শুয়ে শুয়ে পিছন থেকে পরিবানু কে দেখে আর ভাবে, পরিবানু আর সেই ছোট পরীবানু নাই। কয়দিনে যেন বড় হয়ে গেছে!
পরীবানু পিছন ফিরে দেখে, রহমত তার দিকে তাকিয়ে আছে।
পরিবানু বলে ,কি দেখেন অমন করে ?
রহমত বলে, তোকে দেখি, তুই বড় সুন্দর হয়েছিস !আরো বড় হইচিস।
আমি, আমি কি ছোট ছিলাম? ছোট থাকলে কি আর মা বাপে বিয়ে দেয় ?
রহমত এ কথায় চুপ করে যায়। উত্তর দিতে পারেনা ,বুঝতে পারে না কি বললে পরীবানু খুশি হবে। তবে রহমত ভাবতে থাকে, মেয়েদের বিয়ে হইলে মনে হয় বড় হইয়া যায় ।বুদ্ধি বাড়ে ,সেটা পরীবানু কে দেখলেই বোঝা যায়।
পরীবানু রহমত কে চুপ থাকতে দেখে বলে, চুপ হইয়া গেলেন কেন ?কথা আর নাই বুঝি? সারাদিন খাইটা আসছেন ,এখন ঘুমান ।
রহমত বলে ,এখন ঘুমাবো ক্্যান? খাইটা আসছি তাতে কি হইছে ?
তবে লাইটটা নিভাতে বললেন কে্্যন ?
সে তুই বুঝবি না, রহমত বলে। কে্্যন বুঝবোনা !একটু আগেই তো বললেন আমি বড় হইয়া গেছি?
তা হইচিস, তবে অতো বড় হইস নাই। বলেই রহমত তার বলিষ্ঠ পরিশ্রমী দু’হাতে পরিবানু কে কাছে টেনে নেয় ।
পরীবানু ছেড়ে দিতে বলে,লজ্জায় পরীবানুর মুখ রাঙা হয়ে যায় ।সে বলতে থাকে পাশের ঘরে মা আছে।
রহমত বলে, মা আছে তাতে কি হইছে ! মা তো জানে তার পোলা এখন ঘরেই আছে!
পরিবানু বলে,কি জানি আপনি এসব কি কন ?
আমি বুঝিনা ।
কালকে মার সামনে যামু কি করে ?
রহমত ছেড়ে দেয় পরীবানুকে। আলোটা নিভিয়ে দিতে বলে। পরীবানু আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় আসে ।
দু’জন কখন যে ফিসফিসিয়ে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি।
ছেচার বেড়ার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পড়ায় রহমতের ঘুম ভেঙে যায় ।রহমত পরিবানু কে ডাকতে থাকে ধীরে ধীরে গায়ে হাত রেখে ।বলে ,পরীবানু উঠে পড় রোদ উঠেছে। চাকরিতে কখন যামু ?
পরীবানুর ঘুম কাটতে চায়না। এপাশ-ওপাশ করে ,চোখ খোলে না ।
রহমত বলে,পরিবানু তোরে কিন্তু জোর করে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যামু! দরজা খুলে রাখছি, মা উঠে পরছে ।দেখ উঠান ঝাড়ু দেওয়ার শব্দ পাচ্ছি।
পরিবানু সে কথায় তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল ।পরনের শাড়িটা খুলে ভালো করে পড়ে নিল। চুল আঁচড়িয়ে রহমতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
রহমত বলে, কি দেখছিস আমার দিকে অমন করে?
মনে হয় খেয়ে ফেলবি ?

কিছুই দেখিনা পরীবানু বলে, আপনি দেখেন ভালো করে আমার মুখের দিকে ।আমার শরম করছে, মার সামনে কেমনে যামু ?
রহমত পরীবানুর মুখে গলায় দেখতে পায়, পরীবানুর উপর রাতের ঝড়ের চিহ্ন।
রহমতে এবার সত্যিই লজ্জিত হয় ,দুঃখপ্রকাশ করে ।
বলে দেখ, এবার মাফ করে দে ।আর কোনদিন হবে না এরকম।

পরিবানু লজ্জায় মাথা নত করে ঘর থেকে বের হয়ে দেখে, শাশুড়ি মা সকালের সব কাজ সেরে আলু ভাতে দিয়ে ভাত রান্না বসিয়েছে।
এই ফাঁকে পরীবানু আবার ঘরে ঢুকে শাড়ি-পেটিকোট ইত্যাদি নিয়ে ঘরের পিছনে কলের পাড়ে চলে যায়।
পরীবানুর শাশুড়ি খুব বেশি একটা বয়স তা নয়। খুব অল্প বয়সে সাবালিকা হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায় রহমতের বাপের সঙ্গে ।রহমতের বাপ খুব ভালো মানুষ ছিলেন কিন্তু বেশিদিন বাঁচলেন না ।কারখানায় কাজ করতে গিয়ে ডান হাতটা কেটে যায় ।চিকিৎসা করা হয় সাধ্যমত, কারখানা থেকে ও সাহায্য পায়। তবে তা দিয়ে খাবে না ভালো চিকিৎসা করবে?
তাদের দেখার মতো কেউ ছিলনা ।হাতটা শেষপর্যন্ত কেঁটে ফেলতে হলো গ্যাংরিন হয়েছিল।

তবুও রহমতের মা হাল ছাড়েনি, হাসি মুখেই সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। রহমতের বাবা কে সাহস যোগায় বাঁচার প্রেরণা যোগায় । বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করে। সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য রহমতের মা বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট দোকান দিয়েছিল। স্বামী স্ত্রী দুজনায় এই ছোট্ট দোকানটা চালাত ।
রহমতের ছোটবেলার সেই সব কথা কিছুই মনে নাই ।তবে তার মার মুখে বাবার শেষ পরিণতির কথা সে শুনে শুনে বড় হয় ।যত শুনতে থাকে বাবার কথা মায়ের পরিশ্রমের কথা, রহমতের যেন তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি বেড়ে যেতে থাকলো ততো বেশি।
রহমত ও অল্প বয়সেই ড্রাইভিং শিখে ।এখন প্রাইভেট গাড়ি চালায়।
সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে আতঙ্কিত, তখনো রহমতকে লকডাউনে বাড়িতে থাকার সুযোগ হয়না ।তাকে নিয়মিত ডিউটিতে যেতে হয়। হাজিরা দিতে হয়,কারণ প্রাইভেট গাড়িতে সে চাকরি করে।
মা অশিক্ষিত হলেও ছেলের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে থাকেন সতর্ক থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here