করোনা কালীন এক দুঃখ বাস্তবতার কলমে তা যেন প্রাণ পেলো রুমকি আনয়ারের ” চার চোখের মিলন,আনন্দাশ্রু এবং আমি ”ছোট গল্পে ।

364
করোনা কালীন এক দুঃখ বাস্তবতার কলমে তা যেন প্রাণ পেলো রুমকি আনয়ারের '' চার চোখের মিলন , আনন্দাশ্রু এবং আমি '' ছোট গল্পে ।

চার চোখের মিলন,আনন্দাশ্রু এবং আমি

                                রুমকি আনোয়ার

খুব অস্থির সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা ।এ সময়টা বড় অচেনা । মেজাজ হারাবার সময় এখন ।হচ্ছেও তাই কারণে – অকারণে ছেলে – মেয়েকা বকাঝকা , স্বামীর সাথেও রীতিমত ভালো মনকষাকষি ।সময়টাই বুঝি এমনই । দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায় । বড় তৃষ্ণা বোধ হয় ।রোজা চলছে কোরআন শরীফ নিয়ে বসা হয় না ।নামাজও সেও কাজা করছি ।সব রাগ বুঝি খোদার উপর । মাঝে মাঝে জোরে কেঁদে উঠি ।দু দিন আগে কল করলো বড় আপা । তার বুদ্ধি এমনিতেই কম । ‘‘ কি রে ইংকেরি কি কিনলি ঈদে ।” মুখের উপর বললাম কাফনের কাপড় । আপা ফোন রাখ বলে কেটে দিলাম ।

পরক্ষণে আবার কল । রেগে গিয়ে বললাম মেয়ের বিয়ে দেবার বয়স হয়ে গেছে বুদ্ধি গজায় নি এখনো বলছি কল না করতে ফোন রাখ । পুরুষ কণ্ঠে হুঁশ ফিরলে
।” কিছু হয়েছে মা কাকে এমন করে কথা বলছিলে , কি হয়েছে বলো তো মা ।” কান্না সামলিয়ে কোন মতে বললাম ” না বাবা কিছু হয় নি ।” বাঁদর টা কই ও কে দাও । তারিক কল ধরেই বলল বাবা আমাদের এখানে দেশী মুরগী পাওয়া যায় না । আপনে গাড়ী দিয়ে পাঠান তাড়াতাড়ি ঈদের দেরী তো নেই । বেশ বলে লাইন টা কেটে দিলেন বাবা ।রক্ত চক্ষু নিয়ে তারিক তাকালো । ওর চোখকে বড় ভয় আমার ।” নে আরও কথা ——কানে হাত দিলেম । দেখতে পেলুম মোবাইল টা সজোরে ধাক্কা খেয়ে দু টুকরো হয়ে পড়ে আছে । চোখ দিয়ে জল গরিয়ে পড়লো । অনেক সুখ স্মৃতি জড়িয়ে । আমার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ” জলের বুকে বিহঙ্গের কান্না ” বিক্রয় লব্ধে অর্থ দিয়ে কেনা । তারিক কে বললতেই সোজাসাপ্টা উত্তর হেল ইউর বুক ।রাতে ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

মন ভার নিয়ে বেশ বেলাতে ঘুম থেকে উঠলেম ।তারিকের হার্টে অপারেশন হয়েছে দু বার ।ইছে করেই ওর নাস্তাটা দেরীতে দিলেম ।ও চুপ করে খেয়ে নিচ্ছে ।গতরাতের কথা মনে করেই হয়ত অনুতপ্ত খানিকটা ।আমি চলে এলাম ড্রয়িং রুমে ।টিভি ছেড়ে দিলাম । এখন আর খবর দেখি না ।জি বাংলাতে সাগরিকা দেখাচ্ছে ।উত্তমের গলা শুনতে পেয়ে তারিক আসলো হাতে বই । ইদানীং বেশ বই পড়ে । কাবেরি বসুর একুশে পা চোখের কোনা দিয়ে দেখলুম ।

এর মাঝেই গাড়ীর আওয়াজ ।আমাদের খুব পরিচিত । আমি বাড়ীর বারান্দাতে । দেখলাম বাবা মাস্ক পড়ে দাঁড়িয়ে । এ কি চেহারা হয়েছে বাবার । গাল বসে গেছে ।মুখটা মেলাতে পারছি নে ।মলিন বড় মলিন আর ক্লান্ত মুখ । দেখলাম পা খুব ধীরে ফেলে সামনে এলো । ইশারাতে তারিক কে কাছে আসতে মানা করলো । তারিক অবাক হয়ে তাকিয়ে নিজের বাবাকে চিনতে পারছে না যেন । শুধু বলল বাবা ! খুব কষ্টে আবেগ চাপা দিয়ে বললেন এখন তো আর হাঁটা হয় না । ছেলেরা মসজিদে যেতে দেয় না বলে বাসাতেই নামাজ পড়ি । সময় মেনে চলেছি তো সারা জীবন তাই সময়ের বাইরে কিছুই হজম হতে চায় না । নাতি আর নাতনীর দিকে তাকিয়ে । দেখতে পেলাম বাবার চোখে জল ।বাবুল মুরগী গুলো নামিয়ে দাও । আমার মা কই । বারান্দা থেকে বললেম বাবা আমি এখানে ।বাবা হাত নেড়ে গাড়িতে উঠে গেলেন । তারিক মনে হয় অনেক কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে এলো । ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিতেই দেখলাম তারিকের চোখে জল । ডুকরে কেঁদে ও কে জড়িয়ে ধরলাম ।তারিক শুধু বলল কষ্ট খুব কষ্ট ।

কাঁদছে দু জোড়া চোখ ,কাঁদছে আকাশ । খিচুড়ি চাপিয়ে দাও । সেই পুরনো তারিক ।সেই পুরনো হাসি ।মনে মনে বলি ইস বাবা যদি এমন প্রতিদিন আসতো ।না তাই চাইতে নেই ।বড় অস্থির , বড় অস্থির এ সময় ।

Content Protection by DMCA.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here