“ভিক্ষারীর ঝুলি ”গল্পটি লিখেছেন কলমযোদ্ধা এ এইচ জিহান মৃধা

559
“ভিক্ষারীর ঝুলি ”গল্পটি লিখেছেন কলমযোদ্ধা এ এইচ জিহান মৃধা

ভিক্ষারীর ঝুলি

                এ এইচ জিহান মৃধা

আমি শয়ন গৃহে শুয়ে আয়নার দিকে মুখ করে আমি আমার মুখ দেখছিলাম। চার পাশে বিস্তীর্ণ জন মানবের আনাগোনা। শব্দ হৈ হুলা হাক ডাক হকারদের হুংকার যেন চার পাশ ভারী আমার। আমি নিরব নির্বিঘ্নে শুয়ে আছি।

এমন সময় চিৎকার বাঁচাও বাঁচাও আমায় খেয়ে ফেলবে ও খেয়ে ফেলবে বাঁচাও বাঁচাও আমায়।আমি চিৎকার শুনে বাহিরে বের হয়ে এসে দেখি একজন ভিক্ষুক চিৎকার করছে আমার লাইকা নামের কুকুর টা পায়তারা করছে।

মাঝ বয়সী একজন লোক মাথায় ছিলো ছেঁড়া টুপি,ময়লা একটি পাঞ্জাবী গায়ে,চুল গুলো কোঁকড়ানো,নতুন একটি লুঙ্গী পরনে।তাও আবার কোথাও উঁচু কোথাও নিচু পাগল বেশে,তবে চোখ দু’টো অকুতোভয়।

ভিক্ষার জন্য চলে এলো আমার সাথে। আমার বিছানার নিচে থেকে আমার মানি ব্যাগ খুলে তাকে একশত টাকা ভিক্ষা দিলাম। তখনি সে ফন্দি বের করে করুন সুরে বলতে লাগলো সকালে কিছু খাইনি বাবা। আমায় কী ভাত খেতে দিবে?

আমার বাসায় আমি আর আমার ছোটো ভাই ছিলাম ও ব্যাঙ্গ চিত্র দেখছে। আমি যখন মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করি তখন গুরুজন বলেছিলো,গরীব দুঃখি ফকির নিঃস্ব অনাথ এর মুখে খাবার তুলে দিলে অনেক সওয়াব আবার আজ শুক্রবার। ছোটো ভাই ব্যাঙ্গ চিত্র দেখা বাদ দিয়ে বাহিরে হোটেলে খাবার আনতে যাবে না।

তাই ফকির কে বসিয়ে রেখে নিজেই গেলাম হোটেলে খাবার কিনতে। আমার বুকটা ধুকছিলো ফকির কিনা সব কিছু নিয়ে চলে যায়।খাবার নিয়ে বাড়ির গেটে আসতেই দেখি লাইকা উ উ করে ডাকছে। আমার মনে ভয় হলো কী হলো ও কেনো ডাকছে প্রাচীরের দরজা খোলা ফকির টাকা অলংকার সব নিয়ে চলে গেছে।

ভাই টি আমার নিদ্রায় রইলো গৃহ মার্জার হয়ে। আমি নির্বোধ হয়ে গেলাম কোথায় পাবো ওই ফকির কে কোথায় তার ঘর বাড়ী আমার মা-বাবা নেই যে বাড়ী এখন কী করি। তবে লাইকা চোর ডাকাত অপরাধী কে ছিন্ন করতে পারে।
তাই লাইকা কে সঙ্গে করে পথ অনুসরণ করলাম, লাইক সামনে যাচ্ছে আমি পিছনে পিছনে যেতে যেতে দূরে একটা কোয়াটার এর দেখা মিললো।সে খানে অনেক ফকির চেনা মুশকিল কে আমার টাকা অলংকার চুরি করছে।

হঠাৎ লাইকা একটা লোক কে পায়তারা করলো, ফকির টি আগের বস্ত্র খুলে অন্য বস্ত্র পরে নিলো। আমি তার ঝুলিটা খুলে দেখি আমাদের অলংকার টাকা।
যখনি প্রশ্ন করি এগুলো তো আমাদের,তুমি এগুলো চুরি কেনো করছো? তখনি সে বলে তার আর আমি চুরি করিনি। দেখো চুরি করে মিথ্যা বলো না। চুরির কিন্তু দন্ড আছে। না কৈ নাতো কিসের দন্ড?

সমাজে আজ কতো এম পি,মন্ত্রী চুরি করে তাদের তো দন্ড নেই আমাদের কেনো দন্ড? সমাজে আজ কেনো আমরা ভিক্ষা করবো আমরা তো ভিক্ষুক হয়ে জন্ম গ্রহণ করি নাই। আমরাও তো তোমাদের মতো মানব আমাদের কেনো মূল্য নাই।

ক্ষুধার জ্বালায় যখন পেট জ্বলে তখন শত শত ঘর ঘুরেও এক মুঠো ভাত জোটেনা, আবার অনেকে ধমক দিয়ে ও তারিয়ে দেয়।তার পর যদি কারো মনে দয়া হয় সে খেতে দেয় তাও আবার তুচ্ছ করে।

দরজার সামনে, খাটের সামনে, টেবিলের নিচে ডাল ভাত সবজি যা পাওয়া যায়। কখনো আরাম আয়েশ করে ভূরি ভোজ। আমাদের কেউ খেতে দেয় না। যে খাইতে বললে বিরক্ত হয় তাহার জন্য ভোজের আয়োজন করে।আর যে ক্ষুর্ধার জ্বালায় বিনা নিমন্ত্রণে তোমার অন্য খেয়ে ফেললো তাকে কেনো চোর বলে?

অর্ধম চোরের নহে চোরে যে চুরি করে অর্ধম কৃপণ ধনির।দেখো আমি চুরি করিয়াছি বটে, তবে কেহ কী সাধ করিয়া চোর হয়।
আজ শহরে বাসার দরজাই খোলা যায় না চোর ডাকাত ভিক্ষুক এসে সব নিয়ে যায়।কেনো তাদের ও যে খেতে হবে যাদের আছে ভূরি ভূরি তারা যদি করি তো দান তবে কী ভিক্ষুক ডাকাত করিতো চুরি?

যখন দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ভিক্ষা না পাই তখন চুরি করি। চুরি যদি করি মুখে অন্ন ঝুটে। না হলে যে চোখে শর্ষে ফুল ফুটে।তার পরও তোমরা চোর বলে দিচ্ছো গালি।
আজ আমি পঙ্গু কাজ করতে পারিনা বলে ভিক্ষা করি। তা না হলে কী ভিক্ষা করতাম? আপনি কী পারবেন কারো সামনে গিয়ে ভিক্ষা চাইতে?আজ সমাজ অনেক উন্নত তবে আমি যদি খাইতে না পাই। তবে এ সমাজের উন্নতি লইয়া কী করিবো?

কেহ না খেয়ে থাকবে, কেহ করবে উন্নতি এটা কোন সমাজের নীতি? তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্য জাতির রোগ,দরিদ্র ক্ষুধা কেহ বুঝেনা। পাঁচশত ভিক্ষুক বঞ্চিত করিয়া একজনে পাঁচশত লোকের আর্হায্য সংগ্রহ করিবে কেনো?
যদি করিলো তবে সে তাহার খেয়ে যাহা বাহিয়া পড়ে তাহা দরিদ্র কে দিবে না কেনো? যদি নাহি দেয় তাহলে দরিদ্র তাহার নিকট হতে চুরি করে খাবে।
কেননা অনাহারে মরিবার জন্য এই পৃথিবীতে কেহ আসে নাই।

আপনি আমরা সকলে মিলে এ সমাজকে একটি সুন্দর দারিদ্র্য মুক্ত গঠন মূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। আমরা যদি কাজ কর্ম দিয়ে সাহায্যে সহযোগিতা করি। তাহলে থাকবে না কোনো ভিক্ষুক দরিদ্র চোর ডাকাত। এ সমাজ হবে একটি আর্দশ গঠন মূলক সমাজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here