“একলা বাতাস” ধারাবাহিক গল্পটি ( ১ম পর্ব ) লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি–আবির হাসান সায়েম

451
“একলা বাতাস” ধারাবাহিক গল্পটি ( ১ম পর্ব ) লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি–আবির হাসান সায়েম

  “একলা বাতাস”   

ধারাবাহিক গল্প ( ১ম পর্ব )

আবির হাসান সায়েম

গাড়ির ভেতর বমির গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। গন্ধে সাদেকের মাথা ভনভন করছে। কয়েকবার এয়ার ফ্রেশনার ছিটানো হয়েছে। এরপরও গন্ধ যাচ্ছে না৷ পুরো গাড়ি ধোয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই । সাদেক বিড়িবিড়ি করে বলছে,
“এতোটুকু একটা পোলা, বমির গন্ধ কি! কুত্তা দিয়া ভাত খায়া গাড়িতে উঠসে। ”
রফিক সাহেব পিছন থেকে কর্কষ গলায় বললেন,
“বিড়িবিড় করছো কেনো ড্রাইভার?”
“গন্ধের মধ্যে শুধু তুমি একা না আমরাও বসে আছি। কাছাকাছি এসে পরেছি।”
সাদেক কিছু বলল না। তার ইচ্ছে করছে, বুড়োটার মাথায় একগাদা থুতু দিতে।তারপর হাত দিয়ে টাক্কু মাথায় থুতু মাখিয়ে দিতে। তারপর চেংদোলা করে একটা ডোবায় ফেলে দিতে। সাদেকের মুখে থুতু জমতে শুরু করেছে,সে জানালা দিয়ে বাইরে থুতু ফেলল।
গ্রীষ্ম প্রায় শেষে দিকে। আবহাওয়ার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এই রোদ এই বৃষ্টি। আজ খুব কড়া রোদ উঠেছে। সকাল থেকেই চারপাশ তাপে খাঁ খাঁ করছে। গাড়ি এসির হাওয়া দিয়ে এই গরম দূর করা সম্ভব না। জানালা দিয়ে যে বাতাস ঢুকছে তাও গরম। গাড়ির ভিতরটাকে মনে হচ্ছে যেনো -ওভেন। রাকিব আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। গরমের তেজ সামলাতে না পেরে দু’বার বমি করে ফেলেছে। গাড়িতে পলিথিন থাকায় রক্ষা নাহলে পুরো গাড়ি বমিতে ভেসে যেতো। গাড়িতে বমি না পরলেও বমির গন্ধে গাড়ি ভরে গেছে। ইলা নাকে ওড়না চেপে একটা গল্পের বই মুখের সামনে ধরে রেখেছে ৷ রফিক সাহেব চুপচাপ বসে আছেন। তার গরম লাগছে না। দীর্ঘ ষোল বছর অর তিনি গ্রামে যাচ্ছেন, এই খুশির সামনে এই সামান্য গন্ধ মাখা গরম কিছুই না। রফিক সাহেব বললেন,
“ইলা। ”
“হু।”
“তুমি কি আমার উপর রাগ করেছিস? “
ইলা কোনো উত্তর দিলো না, মনোযোগ দিয়ে বই পড়তে লাগল। রফিক সাহেব নিজেই বললেন,
” আমি জানতাম তোদের যদি বলি তাহলে তোর রাজি হবি না। তাই একটু মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। ওইখানে যাবার পর দেখবি আমাকে মাফ করে দিয়েছিস।”
ইলা বইটা বন্ধ করে, রফিক সাহেবের দিকে ফিরে বলল,
“মা আসে নি কেনো?”
“আমি কি জানি? তোর মা তো আবার খুব ব্যাস্ত মানুষ। তার অফিস আর কাজ নিয়ে সে মহা ব্যাস্ত। ”
“তুমি তাকে বল নি। আমার ধারণা, মা’কে বললে সে নিশ্চয়ই আসত। তার গ্রাম খুব পছন্দ ৷ ”
” বলেছিলাম। কিন্তু গ্রামে যাবোর কথা বলি নি৷ তোদের যেমন বলেছি, কয়েকদিনের জন্য হাওয়া বদল করতে শিমলায় যাবো, ওকেও তা বলেছিলাম। ”
” মা আর তোমার ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে, এই কথা কি
সত্যি। ”
রফিক সাহেব কিছুটা আমতা আমতা করতে করতে উত্তর দিলেন,
” তোকে এইসব খবর কে দেয়?”
“কে দেয় তা তো কথা না, কথা হলো কথাটা কি সত্য নাকি? ”
“হ্যা, সত্য।”
” আমি নাহয় বড় হয়েছি। কয়দিন পর চাকুরী করব, নিজের পায়ে দাড়াবো। কিন্তু রাকিব এখন মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে, ওর কথা একবার ভেবেছো? ”
রফিক কোনো উত্তর দিলেন না। জানালা দিয়ে মাথাটা বের করে দিলেন। হালকা গরম বাতাস এসে লাগছে । টাক মাথায় বাতাস তেমন বোঝা যায় না, মাথায় চুল থাকলে বাতাসের সাথে উড়ত। মাথা ভর্তি চুল বাতাসে উড়ছে এই দৃশ্য কল্পনা করতেও আরাম।
সাদেক বলল,
” স্যার আইসা পরসি কাছাকাছি। আর মিনিট বিশের মতো লাগব। “
রফিক সাহেব চোখ মেললেন। ওইতো গ্রামটাকে দেখা যাচ্ছে। কতদিন পর। রফিক সাহেবের চোখে পানি চলে এসেছে৷ আকাশের এককোণে হালকা কালো মেঘ দেখে, রফিক সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন,
“ইলা দেখ দেখ, আকাশে মেঘ জমছে। ”
ইলা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললে,
” মেঘ জমাই তো স্বাভাবিক। যে গরম পরেছে। ”
” আজ দেখবি গ্রামের বৃষ্টি কি জিনিস। একবার নামা শুরু করলে আর থামবে না। আজ আমরা সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজব। ”
রফিক সাহেব সহজে কোনো কিছুতে বেশি খুশি হন না। আজ তার খুশি দেখে ইলার বেশ ভালো লাগছে। আনন্দ বোধ হয় কিংচিৎ ছোয়াচে। সাদেকও হালকা হেসে বলল,
“স্যার আমিও বৃষ্টিতে ভিজমু, মেলাদিন ভিজি না। শহরের বৃষ্টিতে ভিজকে জ্বর আহে। ”
“হ্যা হ্যা ভিজবে অবশ্যই ভিজবে। আমরা একসাথে ভিজব। ড্রাইভার ওই গানটা ছাড় তো, ” আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে। ”
ড্রাইভার গানটা চালাল। আবহাওয়ার সাথে গানটা মনে হচ্ছে একদম মিশে গেছে। ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here