মচকে যাওয়া
আওলিয়া খানম
শফিক সাহেবের বাথরুমে পিছলে পড়ে হাত মচকে ফেলেছেন । রাথরুমে পিছিলে পড়তেই পারে এটা খুব স্বাভাবিক । কিন্তু সময়টা স্বাভাবিক নয় ।এখন চলছে করোনাকাল ।
মেয়ে এসেছিল দুই বাচ্চা নিয়ে বিদেশ থেকে বেড়াতে মা বাবার কাছে । এসেই আটকা পড়ে গেছে ।এসেছিল সেই মার্চের প্রথম দিকে । তখন করোনা ছিলোনা। মেয়ের ফ্লাইট ছিল এপ্রিলের ২৫ তারিখে । আর যেতে পারেনি।
কয়েকদিন যাবত খুব বৃষ্টি হচ্ছে ।বাসার বারন্দায় বৃষ্টির পানির ঝাপটা আসে তাই গত কদিন যাবত কেও কাপড় ধুতে পারছেনা। এই্ করে করে কাপড়ের পাহাড় জমে গেছে ।
শফিক সাহেবের স্ত্রীও ডায়বেটিস এর রুগী ।শরীর ভারী হয়ে যাওয়াতে তেমন কাজ টাজ করতে পারেননা।
তবু রান্নাঘরের কাজটুকু কোনরকমে চালিয়ে নিতে পারছেন তাই সবার পাতে
অন্ততঃ খাবার দিতে পারছেন ।
শফিক সাহেব চাকরী করেন একটা বহুজাতিক প্রতিষ্টানে । দুটি সন্তান । একটি ছেলে ও একটি মেয়ে । মেয়েটি বড়। মেয়েটিকে ভাল ঘর বর পাওয়াতে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়ই বিয়ে দিয়ে দেন। রুহানার বর এখন অষ্ট্রেলিয়ায় কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনা করছে ।ঐ একই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজম্যান্টএ সে পি এইচ ডি করেছে ।
কথা ছিল কদিন পর সেও আসবে ,কিন্তু কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতি জনিত কারনে আজ নয় কাল করতে করতে শেষ পর্যন্ত আর আসতেই পারেনি।
শফিক সাহেবের অফিসে এখন রোষ্টার সিষ্টেমে অফিস চলছে। তিনদিন করার পর ৫ দিন আর যেতে হয়না। বিষয়টা হচ্ছে কেও যদি রবি সোম মঙ্গল অফিস করে সে বুধ বৃহস্পতি শুক্র শনি রবি যাবেনা । পরবর্তীতে সোম মঙ্গল বুধ বৃহস্পতি করে আবার সে শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল যাবেনা্। সে কদিন অন্য আরেকজন যাবে প্রয়োজনে সে অফিসে জুম বা মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখবে ।
এসময় অনেক বাসা থেকেই এবং অনেক এলাকায়ই ছুটা কাজের লোককে ছাড়িয়ে দিয়েছে ।আবার অনেকে গ্রামে চলে গিয়েছে ।হয়তো মহিলার স্বামী রিক্সা চালাতো । এখন রিক্সার যে আয় হয় তাতে করে ঘরভাড়া দিয়ে কুলাতে পারছেনা। এভাবেই ঠিকা কাজের মানুষের একটা অভাব দেখা দিয়েছে ।
শফিক সাহেব এসছেন ফিজিও থেরাপী নিতে । থেরাপিষ্ট জিজ্ঞেস করলো ।হাত মচকালো কিভাবে?
শফিক সাহেব বললেন, বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। এটা সেটা কথা বলতে বেরিয়ে এল তিনি কাপড় কাচতে গিয়ে সাবান পানিতে পিছলে পরে গিয়েছিলেন এবং বা হাতটা তার শরীরের নিচে পড়াতে চাপ লেগে মচকে গিয়েছে ।তিনিও মোটাসোটা মানুষ । চেলে মেয়ে মিলে টেনে তুলেছে ।
থেরাপিষ্ট বলছে,তাইলে তো আপনে বেশ ভালভাবেই আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করছেন।
ভদ্রলোক থেরাপিষ্ট এর এক চাপে চিৎকার দিয়ে বললেন, আরে কি করছেন,আপনি তো দেখছি আমার হাতটা ভেঙ্গেই ফেলবেন।
থেরাপিষ্ট বললেন, ভাঙ্গার যা আপনি ভাবীর কাজ করতে গিয়েই ভেঙ্গে ফেলেছেন । এখন আমার কাজ হল আপনার ভাঙ্গা হাতকে জোড়া লাগানো ।আর আপনার হাততো বেঁকে গিয়েছে। আগে ওটাকে সোজা করতে হবে । আর নিয়ম হলো ব্যথাকে ব্যথা দিয়েই সারাতে হয় ।
আধাঘন্টা মত কসরত করানোর পর এবার দিলো বিশেষ পদ্ধতিতে গরম করে রাখা মোমের প্রলেপ ।প্রায় আধাঘন্টার মত রাখতে হয় ।
দাঁতে দাঁত চেপে শফিক সাহেব মনে মনে বললেন,এত কষ্ট । আর সহ্য হচ্ছেনা। মুখে বললেন, ডাক্তার সাহেব , এনিওয়ে, থেরাপী কতদিন দিতে হবে । থেরাপিষ্ট বললেন, মিনিমাম একসপ্তাহ ।শফিক সাহেব বললেন, প্রতিদিন কি একই প্রসেস চলবে ?
থেরাপিষ্ট বললেন না না, এসব অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা ।তবে চেষ্টা করবেন কয়দিন রোজ আসতে । আপনার তাড়াতাড়ি ভাল হওয়া প্রয়োজন ।আপনার তো ঘরে কাজ করতে হবে ।বিশেষ করে কাপড় কাচতে হবে ।
শফিক সাহেব হাতে মোমের প্রলেপ লাগিয়ে মনে মনে বিড় বিড় করছেন আর বলছেন মরার করোনা । তুই কতভাবে জ্বালাবি ।