বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা ও কবি সুজাতা দাস এর লিখা ছোট গল্প “অরুন্ধতী”

661
বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা ও কবি সুজাতা দাস এর লিখা ছোট গল্প “অরুন্ধতী”

অরুন্ধতী

সুজাতা দাস

একটা গন্ধ আজ কদিন ধরে চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপালার-
কিসের গন্ধ কিছুতেই বুঝতে পারছিল না,
মনে মনে ঠিকই করে নিল এটা মৃত্যুর গন্ধ-
মৃত্যুর গন্ধ কী এমনিই হয়?
ভেবেছিল অপালা-
সেদিনও পেয়েছিল অপালা এই গন্ধটা,
যেদিন এম্বুলেন্সটা এসে দাঁড়িয়েছিল গেটের সামনে।
অবাক হয়েছিল অপালা!!
স্কুল থেকে ফিরেছিলো কিছু আগে, স্নান সেরে এক কাপ ব্ল্যাক কফি বানিয়ে সবে মাত্র চুমুক দিতে যাবে হঠাৎ সাইরেনের শব্দে চমকে উঠলো অপালা-
হাতের কাপটা তাড়াতাড়ি হাত থেকে সেন্টার টেবিলে নামিয়ে রেখে দৌড়ে বারান্দার দরজা খুলে এসে দাঁড়ালো অপালা-
হঠাৎ এম্বুলেন্স কেন? নিজেকেই যেন জিজ্ঞাসা করলো অপালা-
আইডিয়াল এপার্টমেন্টের তিন’তলায় মাত্র কয়েক মাস হলো এসেছে তারা, তবে মাসের বেশির ভাগ সময়ই অপালা ফ্ল্যাটে একাই থাকে-
অরুণ মানে অপালার স্বামী বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকেন অফিসের কাজে, একটা নামী প্রাইভেট কম্পানির একজিকিউটিভ অফিসারদের অন্যতম
সুতরাং তার সংসার বলে কিছুই নেই-
তার উপর প্রায় পাঁচ বছর হলো এখনও সে মাতৃত্বের স্বাদ পেলনা, এই কষ্টটাও মাঝে মাঝেই মনকে মুচড়ে দিয়ে যায় অপালাকে-
নিজেদের নিজ নিজ জগতকে নিয়ে বোধহয় ভুলে থাকার চেষ্টা করে চলেছে দুজনেই প্রতিনিয়ত।

নিজের চিন্তায় নিমগ্ন থাকার কারনে হঠাৎ আবার সাইরেনর আওয়াজে চমকে তাকাতে গিয়ে দেখলো এম্বুলেন্সটা বেড়িয়ে যাচ্ছে বাউন্ডারির ছেড়ে-
অনেক চেষ্টা করলো দেখতে কে অসুস্থ কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার কারনে কিছুই দেখতে পেলনা অপালা-
কাল সকালে সিকিউরিটি ডেস্কে জেনে নেবে ভাবলো মনে মনে, ফিরে এসে কাপটা হাতে নিয়ে দেখলো কফিটা ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে দেখে বেসিনে নামিয়ে দিল কাপটা-
তারপর এসে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো অপালা, কিছুতেই মন থেকে সরছে না এম্বুলেন্সের ব্যপারটা-
ঘুমিয়ে পরেছিল অপালা কখন যেন, হঠাৎ একটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেল, অসময়ে মেন দরজায় ঠক্ ঠক্ আওয়াজ হচ্ছে দেখে একটু অবাক হলো অপালা-
কে এই অসময়ে কলিংবেল না বাজিয়ে দরজায় ঠক্ ঠক্ আওয়াজ করছেন?
দু’ভ্রুর মাঝে একটু ভাঁজ নিয়ে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে হেসে বলে উঠলো মাসিমা আপনি!!
এতো রাতে হঠাৎ, আমাকে ডাকলেই তো আমি চলে যেতাম নিচে!!
পা’ব্যথা নিয়ে আপনি কেন উপরে এলেন-
একটু দরকার ছিল অপা তোমার সাথে, আসলে বেশি সময় নেই তো হাতে তাই ভাবলাম একবার তোমার সাথে দেখা করেই যাই।

আপনি আগে বসুন মাসিমা ঠিক করে তারপর শুনছি আমি, বলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল অপালা-
একগ্লাস জল নিয়ে এসে রাখলো সে অরুন্ধতীদেবীর সামনে, তারপর বসলো অরুন্ধতীদেবীর ঠিক উল্টো দিকে-
বলুন মাসিমা কি’বলবেন বলে অপালা অরুন্ধতীদেবীর দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলো, মাসিমার চেহারায় আজ যেন কোনও কষ্টের লেশমাত্র নেই আর অদ্ভুত এক ঔজ্জ্বল্য খেলে বেড়াচ্ছে চোখে’মুখের সর্বত্র-
ওপর ঠোঁটের তিলটা যেন সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে মাসিমার-
হালকা একটু হেসে অরুন্ধতীদেবী বলতে থাকলেন, অপালা আজ দুপুরে হঠাৎ করেই তোমার মেসোমশাইয়ের শরীর খারাপ হলো খুব-
তুমি’তো থাকো’না সেই সময় বাড়ি তোমার ফোন নম্বর অনেক খুঁজলাম কিন্তু কাজের সময় যেমন পাওয়া যায় না আজও তেমনই হলো-
তারপর বীরেনদাকে ফোন করলাম সেই ছোটাছুটি করে সবকিছু করলো, তোমার মেসোমশাইকে অ্যপেলো’হসপিটালে ভর্তি করা থেকে ডাক্তারের সাথে কথা বলা সব করলেন একাই-
আসলে এখানে সকলেই তো এমনই থাকেন ছেলে’মেয়ে বিদেশে চাকরি করে সেটেল্ড, এ’দিকে বাবা’মাকে দেখার কেউ নেই-
আর আমার তো কেউই নেই সকলের সাথে পরিচয়ও নেই একমাত্র তোমারা আর বীরেনদা ছাড়া-
যতক্ষণ’না সবকিছু টেস্ট হচ্ছে ততক্ষণ বোঝাও যাবেনা কি হয়েছে ডাক্তারবাবু বলেছেন, তাই একটু চিন্তা হচ্ছে অপালা-
চিন্তা করছেন কেন হসপিটালে কত ডাক্তার আছেন তারা’তো দেখভাল করছেন মেসোমশাইয়ের বলল অপালা।

আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে জান, সকালে আমি খোঁজ নেবো কেমন আছেন মেসোমশাই-
হঠাৎ অপালা খেয়াল করলো অরুন্ধতীদেবী যেন একটু উসখুস করছেন, আর কিছু বলবেন মাসিমা?
তোমাকে একটা কথা বলতেই এসেছিলাম অপালা বললেন অরুন্ধতীদেবী-
বলুন’না, আমি তো আপনার মেয়েই হই মাসিমা-
সেটা মনে করেই আমি এসেছি তোমার কাছে আমি চুপি চুপি একটা কথা বলি অপালা, বললেন অরুন্ধতীদেবী-
হ্যা বলুন সংকোচ কেন? বলেই অপালা মনে মনে ভাবলো মাসিমার কী টাকার দরকার, যা উনি বলতে পারছেন না ঠিক করে-
না অপালা আমার টাকার দরকার নেই-
চমকে উঠলো অপালা মাসিমা বুজলো কী করে সে’যে এই কথাটাই ভাবছে!!
এটা রাখো অপালা বলে একটা প্যাকেট দিল অপালার হাতে অরুন্ধতীদেবী, এটাতে একটা চিঠি আছে যেটা প’রে পড়ার অনুরোধ রইলো অপালা-
তোমার মেসোমশাই বাঁচবেন না আমি জানি অপালা, আমারও আর সময় নেই তাই তোমাকে দিলাম এটা; চিঠিটা পড়ে সেই মতো কাজ কোরো আমি লিগ্যালি সব কিছু করে রেখেছিলাম যাতে অসুবিধা না হয় মৃত্যুর পরে-

আমার ইচ্ছা আমাদের তো কোনও সন্তান নেই অপালা তুমি আমাদের কাজ করো, বলেই অরুন্ধতীদেবী অপালার হাতটা ধরলো-
একটা হিমশীতল ছোঁয়া সমস্ত শরীরটাকে চমকে দিল অপালার, সেই মূহুর্তে ভাবলো এতো ঠান্ডা স্পর্শ কী ভাবে একটা মানুষের হতে পারে-
কিন্তু মুখে বলল কেন এসব ভাবছেন মাসিমা, মেসোমশাই ভালো হয়ে যাবেন আপনি শুধু শুধুই চিন্তা করছেন-
না অপালা আর তো চিন্তা করছি’না সব ভাবনা তোমাকে দিয়ে দিলাম তো, এবার আমি নিশ্চিন্ত-
আর হ্যা আমি হসপিটালে তোমার নম্বরটাই দিয়েছি জানি সেই অধিকার আমার হয়তো নেই, কিন্তু বীরেনদা এতো পরিশ্রম করেছেন দুপুর থেকে যে রাতে তার ঘুমের প্রয়োজন ছিল না’হলে কাল ছোটাছুটি করতে পারবেন না-
তোমার ঘাড়ে একা আর কত কিছু চাপাবো মা বললেন অরুন্ধতীদেবী-
কোনও ব্যাপার নেই মাসিমা আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যান আমি ফোন করে নেবো হাসপাতালে বলল অপালা-
কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন অরুন্ধতীদেবী,
আমি’কী আপনাকে পৌঁছে দেবো মাসিমা বলল অপালা-
না মা’ আমার শরীর এখন একদম ঠিক আছে, সন্ধ্যের পরে হঠাৎ মাথাটা কেমন করছিল তারপর শুয়ে পরেছিলাম অপালা তারপর যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম কোনও কষ্ট আর আমার নেই –
কথা শেষ করে, আসি অপালা বলে চলে গেলেন লিফটের দিকে অরুন্ধতীদেবী-
একটু অবাক হলেও খুব একটা খারাপ লাগালো না অপালার, ভাবলেন যাক বাবা সুস্থ হয়ে গেছেন মাসিমা এবার ভালোয় ভালোয় মেসোমশাই ফিরে এলেই নিশ্চিন্ত-
হঠাৎ সেন্টার টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো অপালা!!
মাসিমাকে দেওয়া জলের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ অবাক হয়ে, যেমন জল তেমনই আছে কিন্তু মাসিমা খেয়েছিল জলটা-
ভাবনার মাঝেই নিজে অন্য একটা গ্লাসে জল ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো অপালা, নিজেই ভাবলো কী’আজেবাজে চিন্তা করছে সে!!
টি’টেবিলে রাখা খামটা হাতে নিতে গিয়ে অপালা দেখলো একটা নয় দুটো খাম!!
অবাক হয়ে খাম দুটোর দিকে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু তার মনে আছে একটা খাম নিয়ে ছিল অরুন্ধতীদেবীর হাত থেকে-
হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠায় চমকে উঠলো অপালা,দেখলো একটা অচেনা নম্বর,
এতো রাতে ভাবতে গিয়েই হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ গেল অপালার চারটে দশ-
ফোন রিসিভ করতেই একজন মহিলার গলা মিসেস অপালা মজুমদার?

হ্যা বলছি, আপনার পেশেন্ট এই মাত্র মারা গেছেন-
স্তব্ধ অপালা কোনও সারা দিতে পারছিল’না
ভাবছিল কী’ ভাবে বলবে মাসিমাকে, ওপার থেকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছেন মহিলা হঠাৎ সম্বিত ফিরলে বলল আমরা আসছি-
কী করবে বুঝতে পারছিলনা অপালা- বীরেন কাকুকে ফোন করতে হবে ভেবে বটন প্রেস করতে থাকলো, হঠাৎ মনে হলো এভাবে নয় ওনারও অনেক বয়েস হয়েছে,
নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে পায়ে স্লিপার চাপিয়ে দরজায় চাবি লাগিয়ে লিফটে করে বীরেন কাকুর দরজায় এসে দাঁড়ালো অপালা, ভাবলো একটু তারপর কলিং বেলের সুইচে হাত দিল-
মিনিট পাঁচেক পরে আওয়াজ এলো আসছি-
কাকিমারা আওয়াজ, কে এতো সকালে?
আমি অপালা দরজা খুলুন কাকিমা-
অবাক অবস্থায় দরজা খুললেন রুপমাদেবী, বললেন অনেক রাতে ঘুমোতে গেছি মা এসো ভেতরে এসো তোমার কাকুকে ডাকছি-
বলে ভেতরদিকে পা বাড়াতে যেতেই, অপালা বলল কাকিমা মেসোমশাই মারা গেছেন চারটে দশে, হঠাৎ কথাটা শুনে তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে সোফাটা ধরে বসে পরলেন রুপমাদেবী-

অপালাও ততক্ষণে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পরেছে, হঠাৎ রুপমাদেবী কেঁদে ফেললেন বললেন অরুন্ধতীকে কী’ভাবে বলবেন এই খবর-
অপালার চোখেও জল সে তখন বলতে শুরু করেছে এই খানিক আগেই অরুন্ধতীদেবী এসেছিলেন অপালার কাছে, শুনে চমকে উঠলেন রুপমাদেবী-
বললেন বলো’কী যে মানুষ একা হাঁটতে পারেনা সে তোমার ঘরে এসেছিল!!
অপালা চমকে উঠে বলল তাই’তো এটাতো ভাবেনি সে, আর যখন ফিরে গেলেন তখন
একদম সুস্থ মানুষ দিব্বি নিজেই হেঁটে লিফটে উঠলেন-
অপালা সবকিছুই বলল এমনকী মুখে আগুন দেবার কথাটাও সাথে ওকে দেওয়া খাম দুটোর কথাও, কথার মাঝে কখন কাকাবাবু এসে দাঁড়িয়েছেন দুজনের কেউ খেয়াল করেনি হঠাৎ কাকাবাবুর কথা শুনে দুজনেই একসাথে তাকালো,
কাকাবাবু শুনেছিলেন হয়তো পুরো কথপোকথন বললেন, তাহলে চলো সবাই নিচেই যাই এভাবে এখানে বসে লাভ নেই-
সকলেই নিচে নেমে এলেন ততক্ষণে সকালের আলো ছড়িয়ে পড়েছে ফ্ল্যাটের চারিদিকে, রুপমাদেবী প্রথমে কলিং বেল টিপলেন সমানে বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ খুলছে’না দেখে একটু অসহায় বোধ করলেন-

কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন আমার ভালো লাগছেনা একবার নিচে খবর দাও অরুন্ধতী দরজা খুলছে’না কেন বলে তাকালেন অপালার দিকে, এদিকে ওদের এখানে দেখে ফ্ল্যাটের অনেকেই উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছেন-
ততক্ষণে নিচ থেকে সিকিউরিটি দুজন এসে অনেক ধাক্কা দিয়ে দেখলেন কিন্তু দরজা খুলল না, এর মধ্যেই অরুন্ধতীদেবীর কাছে কাজ করে যে’মেয়েটি চলে এসেছে অপালার দিকে তাকিয়ে বলল কী’হয়েছে এখানে দিদি-
অপালা বলল মাসিমাকে ডাকছিল কিন্তু দরজা খুলছেন’না, মেয়েটি বলল আমার কাছে চাবি আছে সকালে তো ঠাকুমা খোলেন’না দরজা দাদুও বেড়িয়ে যান তাই আমার কাছে একটা দরজা খোলার চাবি আছে-
অপালা বলল তাড়াতাড়ি খোল,
সবাই সরে দাঁড়ালে দরজা খুলে দিল মেয়েটি-
ও ঢুকে সবাইকে বলল এসো আমি ঠাকুমাকে ডাকছি, ততক্ষণে আশেপাশের লোকজন চলে গেছিল ওরা তিনজন ভেতরে ঢুকে বসে কী ভাবে অরুন্ধতী দেবীকে কথাটা বলবেন সেই কথাই ভাবছিলেন হঠাৎ কাজের মেয়েটির চিৎকার শুনে প্রথমে অপালা তার পেছনে ওরা দুজনে ছুটে গেলেন ঘরের ভেতরে।

ঠিক সেই সময় অপালা সেই মিষ্টি গন্ধটা পেলো এই ঘরে যেটা এ’কদিন সবসময় পাচ্ছিল, খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কাকিমাকে আপনি পাচ্ছেন একটা মিষ্টি গন্ধ এই ঘরে?
না’তো মা, বলে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল শুধু একবার অপালার দিকে রুপমাদেবী-
তার পরের কয়েক ঘন্টা কী’ভাবে যে এই তিন জনের কেটেছে এক মাত্র এই তিন জন আর কাজের মেয়েটিই বুঝেছে,
সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে ডাকা হলে তিনি এসে বলেছেন কম করে দশ ঘন্টা আগে মারা গেছেন অরুন্ধতীদেবী-
অনেক পরেও অপালা মেলাতে পারেনি তাহলে কী’ভাবে মাসিমা উপরে এসেছিলেন তার কাছে, অবশ্য সেই সময় ভাবার সময়ও পায়নি অপালা এসব-
এদিকে সব ঠিক করে তারপর কাকাবাবু আর অপালা গেলো নার্সিং হোম, সেখানকার সব ফরম্যালিটিস পূরণ করে বাড়ি আনলেন মেসোমশাইকে, তারপর দুজনকেই একসাথে নিয়ে যাত্রা করলেন ফ্ল্যাটের সব লোকেরা মিলে-
তার আগে খোলা হলো সেই খাম দুটো একটাতে ছিল টাকা আর একটাতে অপালাকে দেওয়া তার নির্দেশ পুরোটাই লিগ্যালি-
অপালা খুব কেঁদেছিল অনেক ছোটবেলায় মা’বাবা মারা গেছিল অপালার সেই স্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিল চির’জীবন সেটার কিছুটা মাসিমা পূরণ করতেন কিন্তু এতবড় জায়গা দিয়েছেন তাঁকে সে ভাবতেও পারেনি স্বপ্নেও-

তার ইচ্ছে মতোই সাজানো হয়েছিল নববধূর সাজে মাসিমাকে লালপাড় গরদের শাড়িতে, মেসোমশাইকেও ধুতি’পাঞ্জাবিতে দুজনেই যেন ঘুমিয়ে আছেন, শ্মশানে ঢল নেমেছিল দেখার জন্য দুজনকে একসাথেই আগুন দিল অপালা-
এক স্বর্গীয় দৃশ্য দেখলো সকলে, একটু একটু করে অগ্নিশিখা গ্রাস করতে থাকলো দুজনকেই হঠাৎ অপালা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো মা’আ আআআআআ বলে-
ঠিক সেই সময়ই ঢুকলো অনিক ওখানে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো অপালাকে অনিক-
তার পরের কাজও অপালাই করলো নিজের মা’বাবার কাজ মনে করে, শুদ্ধ মতো নিষ্ঠা নিয়ে-
সব কাজ শেষে উকিল বাবুর সাথে দেখা করল অপালা কাকাবাবু আর অনিককে নিয়ে অরুন্ধতীদেবীর নির্দেশ মতোই-
কাজের মেয়ে উমাকে দিয়ে গেছেন এক লক্ষ টাকা তার বিয়ের জন্য, আর ফ্ল্যাট দিয়ে গেছেন যেসব দুঃস্থ অথচ লেখাপড়ায় ব্রিলিয়ান্ট ছেলে মেয়ে তাদের জন্য-
তাঁদের থাকা ও খাওয়ার জন্য তবে পুরোটাই অপালার দায়িত্বে-

আর একটা জমি ছিল রাজার হাটে সেটাকে বৃদ্ধাশ্রম করার দায়িত্ব দিয়েছেন কাকাবাবু অলোকনাথ ব্যানার্জিকে, সেই কাজের টাকা পয়সা আর গভর্নমেন্টের সহযোগিতার সব ব্যবস্থা করে গেছেন মেসোমশাই নিজেই-
উমা এখন অপালার কাছেই থাকে মাসিমা মারা যাবার পর থেকে, ঐ ফ্ল্যাটে এখন ছয়জন ছেলে থাকে একজন রাঁধুনি আছে সে এসে রান্না করে এদের খাবার দিয়ে যায় আর সবাই বেরিয়ে গেলে রান্নার দিদি থাকতে থাকতেই উমা ঘর পরিষ্কার করে আসে-
এর কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন অপালা সেই মিষ্টি গন্ধ আবার পেলো নিজের ঘরে, যে গন্ধটা মাসিমার ঘরে ঢুকে পেয়েছিল অপালা আজ থেকে ঠিক কয়েক মাস আগে মাসিমার ঘরে-
তার ঠিক নয় মাস পরে অপালার কোল জুড়ে এলো এক ফুটফুটে মেয়ে যার উপর ঠোঁটের ঠিক বা’পাশে একটা বড় তিল-
রুপমাদেবী নার্সিংহোমে দেখতে এসে চমকে উঠলেন তিলটা দেখে, মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো সেই নামটা “অরুন্ধতী”!!
অপালা প্রচন্ড ক্লান্তিতেও হেসে বলল হ্যা কাকিমা আমার মা।।
কপিরাইট@1443 সুজাতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here