ভারত থেকে সাহিত্যের অন্যতম সারথি অগ্নিমিতা দাস এর গল্প“মালকোষ”

566
ভারত থেকে সাহিত্যের অন্যতম সারথি অগ্নিমিতা দাস এর গল্প “মালকোষ ”

মালকোষ_____________________

 অগ্নিমিতা দাস

সকাল থেকেই সানাই বাজছে। বুকটা মুচড়ে মুচড়ে উঠছে তিন্নির। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে কালো ভেলভেটে মোড়া চাদরকে আসতে আসতে মিলিয়ে গিয়ে হলদেটে সাদা হতে দেখলো।এই ঘর সংসার সবেতে তার গায়ের গন্ধ লেগে আছে।
এই সানাইয়ের সুর তার বিয়ের নয়। মোড়ের মাথার ডানদিকের বাড়িটা থেকে ভেসে আসছে।
নর্থ ক্যালকাটার এই বাড়িতে সে যখন এসেছিল তখন বয়স হবেএকুশ।পাতলা ছিপছিপে তরুণী থেকে এখন সে মধ্যযৌবনা। তিন্নি যেন বাড়িটার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। এই বাড়ির ছাদের চোরকুঠুরি থেকে দালানের সব রেলিং তার স্পর্শ জানে। এই বাড়িটাকে সে দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছিল। ঘরের মধ্যে মায়ের প্রবেশ _ কি রে সারা রাত ঘুমোসনি। এইরকম করলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে । আমি আর বাতের ব্যাথা নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস যেতে পারবো না।

তোর দীপুমামা মামী তোর সাথে যাবে। রূপক তো ওর বন্ধুদের নিয়ে সোজা ওখানেই হাজির হবে। আর শোন, খাওয়া দাওয়া কিন্তু তোরা সবাই এখান এসে করবি। একটু পরেই ঠাকুর চলে আসবে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব করাবো। তাছাড়া মেরে কেটে তো জনা কুড়ি হবে। সেই নিয়ে আবার ভাবনা আমি মোটেই করি নে। বলতে বলতে তিন্নির মাথায় হাত দিলেন বীথিকা দেবী। তিন্নি উনাকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। বীথিকা দেবী কান্না জড়ানো গলায় বললেন___ কতবছর লাগলো বলতো তোকে রাজি করাতে। পিছুটান নেই, কতদিন বুড়িটাকে আগলে রাখবি। আমি মরে গেলে কি হবে ! ভাগ্যিস আমার দীপু জোর করে তোকে অফিসে ঢোকালো। তবেই না এমন রত্ন জামাই পেলাম। তাও বাপু তুই ওকে এত বছর ঘোরালি।পাগলি! আমার কাছে তো তুই সবসময় আসবি। রূপক তো তোদের নিউ আলিপুরের ফ্ল্যাটে আমায় থাকতে বলেছিল। নিজের শ্বশুর স্বামীর ভিটে ছেড়ে তাছাড়া বলে তিন্নির ঘরে টাঙানো ছবিটার উজ্জ্বল চেহারার তরুনটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলেন।

আজ তাকে মন শক্ত করে কথা রাখতে হবেই। বহুদিন আগে দেওয়া খোকাকে দেওয়া কথা। বাবার বারন না শুনে আর্মিতে গিয়েছিল শেখর। পরে পদোন্নতি হয়ে আর্মির পাইলট হয়েছিল। মায়ের পছন্দের পুতুল কে বিয়ে করে রেখে আবার ফিরে যাওয়ার সময় বলেছিল___ মা, এই চাকরিতে আমাদের কোন ভরসা নেই। তোমার কোন কথাই কোনদিন আমি না করি নি। কিন্তু আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তন্নিষ্ঠা যেন একলা না থাকে। আমার আত্মার শান্তি হবে না। পুতুল খেলার মতো খেলে ওর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোন অধিকার আমার নেই। তখন বীথিকা ছেলের মুখ চেপে ধরে চুপ করিয়ে দিলে ও কথাটা তাকে কুরেকুরে খেতে বাধ্য করলো এই কথার চার বছরের মাথায় যখন তিন্নি আদর করে তার চুল বেঁধে ওষুধ খাইয়ে ছাদে দালানে দালানে ঘুরে বেড়াতো।আজ চোখ তুলে দেখলেন শেখরের মুখটা যেন বেশি হাসিহাসি লাগছে। বাইরে মালকোষের সুরটা এবার কানে লাগছে।

© মিতার কলমে অগ্নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here