নীল গোলকের মানুষ
নিমাই জানা
বাড়ির জানালায় অসুস্থ বাবা শুয়ে আছে
মুখ ঘোরানো আছে নীল রঙের অসুস্থতা আর নিঃসঙ্গের দিকে ।
স্বপ্নে দেখা মাথার উপর রঙিন মাছ গুলো খেলা করে সারারাত, দেওয়াল জুড়ে সাদা রঙের টিক টিক পেন্ডুলাম শব্দে
পৃথিবী এক জর্জর গোলকে পরিণত হয়ে আছে প্রতিটি স্কয়ার ফুট আর বাসযোগ্য কাঠের পাটাতনে ঘুণপোকার জমাট ধুলো , বাস করে আছে অপরিচিত কোন নাড়ী-পুরুষের বংশধর । অদৃশ্য ঝোলার ভিতর থেকে স্নায়ু কেবল অন্তরা বাজাতে বাজাতে আরো নিঃসঙ্গ করে তোলে আমাকে
আমার বাড়ির চারপাশ আগাছায় ভরে যায় ক্রমশ ।
শিরা ওঠা মায়ের পা এখন সীমান্ত । এগিয়ে আসলে বিদ্যুৎ ভয় থাকে না । ব্যাকগ্রাউন্ডে মাকে আঁকড়ে রাখার গান । তুঝে সালাম ।
ক্ষত থাকে নিজের ভেতর । পতঙ্গ গুলো বড় অবুঝ রাত্রিকালেই বের হয় নির্ভীক মায়ের সাথে । হাত বুলিয়ে যাচ্ছে ক্ষতস্থানে । নিরাময় ঔষধি জানে সংক্রমণের বিস্তার ।
রক্ত শুকিয়ে গেলেও তার বুকে জেগে থাকে দহনের শক্তি ,কেবল মা জানে গাছের শেকড়ের কথা । শুকনো গালে অতঃপর নদী । শিরা টান আর ছুঁয়ে দেখছে না তাপ , উষ্ণতার মাখামাখি। কেরোসিন লম্ফ জ্বেলে আলু ভাতের সারারাত মেপে নিচ্ছে ক্যালরিমিটারের হেরফের ।
অর্জুন গাছের বল্কল খসে পড়ছে নিঃশব্দে, রাত্রিকালে ।
হিজল গাছের লাল রং দিয়ে আমি শৈশব হত্যা করেছি । শরীর থেকে কতগুলো কালো রঙের সুতো বের করে ছুঁড়ে দিয়েছি গভীর অরণ্যে । আমি বিষাদকে দেখতে চাইনি পানকৌড়ির মতো । সবুজ শাড়ি পরা মায়া নৌকা মাদুর কাঠির চাষ করে এখন । উর্বরতা প্রায় প্রতিটি মানুষের জন্য । ব্রহ্ম চেহারার মুখগুলো কেমন মাটি দিয়ে গড়া পাগুলো আছে সবুজ ঘাসে , ক্ষুধার্ত সকল । মাছগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে মধু পাল
মাছের চোখেই অমানিশার মৃত্যু ।
গাছেরাই বাল্মিকী , মাথার জটায় রাত্রিকালীন হলুদ বাবলা ফুল ফুটে আছে ।
নিথর চেহারার মানুষগুলোর হাত ক্রমশ দীর্ঘতর হয়ে যাচ্ছে মহাশূন্যের দিকে ।
স্পর্শ করলেই বাড়ির ভেতর অনেকগুলো কেঁচো জেগে ওঠে মাটি ভেদ করে
আমার খাবার থালায় আস্ত এক মেঘ ঢেলে দেয় । দু-চারটি পুরুষ নক্ষত্র শরীর ভেদ করে । জন্ম ঘরে ফসফরাসের হলুদ রং । সকলের ঠোঁটে জমে ওঠা ফেনা নিয়ে দুই আঙুলে কালো পিচ খুঁড়তে থাকে রাম বল । সরু খাল পারে নোনা রক্ত টেনে আনে গোলাপি রঙের টাটা হিটাচি । পজিটিভিটি না থাকলেও দুঃখ কে রাখো বুকের আধ ইঞ্চি ভেতর।
শ্বাসনালীর পথ চওড়া হয় অ্যাম্বুলেন্স ,কলিং বেলে ।
প্রতিটি সাপ রাত্রি ছোবলেই যুবতী হয়ে ওঠে । কাউকে ছুঁতে না পারার আম পাতা রোদ , গাছের বাকলে দিনদিন মর্মাহত । মায়েদের বুক ইটের টুকরোর কালো পরী । ঘাসেদের পাশে আমি কেমন কালো কচুরিপানা জল হয়ে যাই ,
মাথাভাঙ্গা সংসারী ডালগুলো যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষতের মতো । শুয়ে থাকে তপনের বেডের পাশে । সারারাত অসুস্থ মায়ের কাছে জেগে আছে অনিদ্রার হ্যারিকেন , সালবিউটামল ।
কাঁধের ওপর ভেজা গামছা স্নান করে নিলাম , কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে
শরীর থেকে পাথর গুলো খসে পড়ছে মিশরীয় সভ্যতার ,কোন ভাষাই এখনো উদ্ধার হয়নি ।