বকুল থেকে বৃন্দাবন অতঃপর…
আয়েশা মুন্নি
প্রথম যখন বকুলের প্রেমে পড়ি,
তখনো প্রেমে পড়ার বয়স হয়নি,
বয়স সবে দশ।
শত সহস্র সবুজ পাতার ফাঁকে
সদ্য ফোটা সাদা বকুল ফুলগুলো ঝরে পড়তো।
সেই শুভ প্রভাতী ফুল কুড়িয়ে এনে মালা গেঁথে,
ফুলের ভালবাসায় হতো নিত্য দিনের শুরু।
সেই বকুল আমার প্রথম প্রেম।
সুবহসাদিক ভোরে সরকারি কোয়ার্টারে বিশাল মাঠ পেরিয়ে
তালা বন্ধ গেটের এ পাশটায় দাঁড়িয়ে যখন
পথচারী মুসল্লিদের নব্য খবরের মতো জানিয়েছিলাম,
পিতার মৃত্যুর বার্তা।
তখন বুঝতে না পারলেও,
আজ ঠিক বুঝি সেই ছিল আমার প্রথম শোক।
কিশোরী বেলায় কাঁকড়ি নদীর পায়ের পাতা ভেজা জলে,
শুয়ে থাকা বালুর চিকচিক রঙ,
জলের ছায়ায় নিজের অপূর্ব রূপ দেখে আঁতকে উঠা মনে গেয়ে যেত-
“তুমি কোন কাননের ফুল গোঁ, কোন নয়নের তারা”।
সেই শুরু আমার নিজের প্রতি ভালোবাসার সুত্রপাত,
তারই ধারাবাহিকতা বর্তমানের আমি ও ভালোবাসা।
চঞ্চলা তরুণি আমি যখন ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশে আঁকি নিজের প্রতিচ্ছবি,
সেই তখন শুরু একজন বিশুদ্ধ প্রেমিকের খোঁজ!
যে অন্তত কাল আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে ভালোবেসে।
আমাকে পাবার অভিলাষে, আকাঙ্ক্ষার ব্যবচ্ছেদে
এক জীবনে একটি রাধারমণই কেবল সে গাবে,
“বিনোদিনী গো তোর বৃন্দা কারে দিয়ে যাবি”।
সেই বৃন্দাবনে আজো নিভৃতে বাঁশি বাজে,
কাউকেই আর দেয়া হলো না।
যেদিন সময় এলো মা হবার স্বাদ পাবার,
তখনও সদ্য কৈশোর পার হওয়া তরুণি আমি।
কিন্তু কি অসীম সাহসীকতার আমি একলা একাকী লড়াইয়ে…
নার্স স্যালাইন শুরু করলেন অপারেশন থিয়েটারে নেবার আগে,
আমি তখন আবৃত্তির মতোই আওড়ে ছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-
“হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো, ক্ষমা করো।
সে আমার প্রথম সাহসী উচ্চারণ।
নুয়ে পড়তে পড়তে এক সময় আমি যখন একটু একটু মাথা উঁচু করছিলাম
দারুণ ব্যর্থতা পাথর চাপা দিয়ে,
তখন দৈববাণি নিরবে বেজে গেছে কর্ণ যুগলে,
উঠো মেয়ে তুমি পারবে,
তোমাকে যে পারতেই হবে।
মন্ত্রমুগ্ধ আমি দিগন্তে দু হাত প্রসারিত করেছি
প্রবল আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে।