কলমযোদ্ধা শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প ৩য় পর্ব “জীবনের গল্প”

437
কলমযোদ্ধা শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প ৩য় পর্ব “জীবনের গল্প”

জীবনের গল্প

৩য় পর্ব

শাহিদা ইসলাম

এসো মা রুনু,ডাক্তার সাহেব বলে মা,উনার বউ মারা যাবার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন,স্মৃতি শক্তি চলে গেছে।এখন শুধু বউকে ডাকে লিসা, লিসা, বলে।
কার ও কাছে খেতে চায় না। শানু আসাদ সাহেবের একমাত্র কন্যা, মেয়ে সব সময় বাবার জন্য কান্নাকাটি করে।
ডাক্তার সাহেব এই কারণে রুনুকে নিয়ে এসেছে,রুনুর কাজ হবে লিসার জায়গা পূরণ করা।রুনু ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকল।ডাক্তার কাকু বললেন এসো লিসা,বড় ভাই চিৎকার করে উঠল,লিসা কই লিসা,আমার লিসা,কি অবাক ব্যপার সব ভুলে গেলেও লিসাকে ভোলে নাই।সাইক্লোজি তে বলে মানুষ পাগল হলেও কিছু প্রকার ভেদ আছে।কেউ চেহারা ভুলে যায়,কেউ সবটাই ভুলে যায়।আবার কেউ মনে রাখে পুরানো স্মৃতি।
রুনু কাছে এগিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধার সাথে হাতটা ধরল, এই তো আমি এসে গেছি,বয়স্ক মানুষ তাঁকে ভক্তি শ্রদ্ধাই করা যায়, ভালোবাসার মানুষ ভেবে জড়িয়ে ধরা যায় না।
একটা ২৭ বছরের মেয়ের প্রেমিক , বন্ধু ৩০/৩৫ হতে পারে, ৭০ / ৭৫ বছরের মানুষকে ভাবাই যায় না।

পেটে ক্ষুধা,বাবার ওষুধ, বাড়ি ভাড়া,সব মিলিয়ে সামাজিক ভাবে সন্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে টাকার বিকল্প নাই।আর টাকা আয় করতে বহু কষ্ট।নিজের শিক্ষা দিক্ষা মান সন্মান বিসর্জন দেয়া যায় না।
ডাক্তার চাচা বলল তুমি ইংরেজি বলতে পার তো? আমার ভাবী ইংরেজিতে মাষ্টারস ছিলেন,
ভাই,সব সময় ইংরাজিতে কথা বলে,উত্তর দিতে পারবে তো? নাহ,আমি পড়তে পারি,লিখতে পারি,বলতে পারি নাহ।বুঝি সব,
উত্তর দিতে পারব।
ডাক্তার কাকু বললেন ঠিক আছে।

বড় ভাইয়ের রুমের ভেতর ঢুকে লিসা নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছে, মেয়েটা মায়ের জায়গায় কেউ বসুক চায় না।কিন্তু বাবার সুস্থতার কথা ভেবে মনকে শান্ত করছে।মা নাই, বাবাও কি আমাকে একা করে যাবে,এই চিন্তাও করছে শানু। রাতের আঁধার গভীর হচ্ছে নিস্তব্ধ চারপাশে, শানু নিজের রুমে চলে গেছে, রুনু আর বয়স্ক মানুষটি( আসাদ সাহেব) দুজনা এক ঘরে,আসাদ সাহেব আব্জ রাতের খাবার খেতে একটু ও বিরক্ত করলেন না।লিসা একটা পারফিউম ইউজ করতো, মেয়ে এনে গায়ে স্প্রে করে দিয়ে গেল।
রুনুর ভাগ্যের কি পরিহাস ভাবছে বৃদ্ধ মানুষের পাশে শুয়ে,আকাশের ★ দের কে সাক্ষী মেনে মনের দু:খ গুলি ছুড়ে দিল।
আজাদ সাহেব মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল,আলোর দেবীর মত চেহারা যার রুনুর দিকে।আজাদ সাহেব এমন অবাক দৃষ্টিতে দেখছে যেন,এই জীবনে এমন পরী আর দেখি নি।রুনুর ভয় হচ্ছিল শরীরে হাত পরবে এই ভেবে, আস্তে আস্তে হাত বিছানায় বিলি কাটছে,রুনুর শরীর কাঁপছে, আর হয়ত নিজেকে লুকিয়ে রাখা যাবে না, জোরে বলে উঠেছে রুনু নাহ, আসাদ সাহেব চমকে গেল,
কি লিসা তুমি ভয় পাচ্ছো আমাকে?
আমি এত দিন তোমাকে না দেখে এমন উতলা হয়েছি।কথাগুলি বলেই রুনুর হাতে ধরে টেনে বুকে চেপে ধরল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here