শিশু ধর্ষণের হেতু—||
—মিনু আহমেদ
ছয় থেকে নয় বছরে শিশু-কিশোরী মেয়েরা কোথায়,
কি ভাবে ধর্ষিত হয়—সবগুলো শুনেছি লোক মুখে!
তবে—মিডিয়াতে দেখা নাটক-সিনেমায়ে দেখা সব কিন্তু সত্যি নয়।হুম!আবার একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতোও নয়।কারণ,বাস্তব চিত্র নিয়েই নাটক-সিনেমা
মিডিয়া জগতের পথ চলা।
জানি—‚শোনা কথায় কান দিতে নেই।তবু মায়েদের উদ্দেশ্যে বলছি—আপনার একটু ভুলের কারণেই আপনার মেয়ে ছোট বয়সেই দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।কিন্তু আপনার মেয়ে তা বুঝতে পারছে না।আর যদিও বোঝে।তবুও ধর্ষণকারীর ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।
মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে বলছি—
আপনি একজন মা।আপনি একজন মমতাময়ী।যে কি-না দিনের পর দিন নিজের মেয়েকে ধর্ষকের হাতে
তুলে দিচ্ছেন।ধর্ষক আপনার বিশ্বাসের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।তাতে আপনার বোঝার কোনো ক্ষমতা নেই।কারণ,আপনি তাকে বিশ্বাস করেন।যাকে বলে– অন্ধ বিশ্বাস!
আর এই বোকামির জন্য কি ভাবে ধর্ষণ হয় আপনার মেয়ে একটু নাটক-সিনেমা মিডিয়ার খবরের কাগজ দেখুন।
এখানে আমি অনেকগুলো ধর্ষণের শিকার হওয়ার চিত্র থেকে একটা চিত্র তুলে ধরবো।
হতে পারে আপনার মেয়েও ঠিক এভাবেই ধর্ষিতা হয়েছে। আবার নাও হতে পারে।স্রেফ আপনাকে বিষয়টি লক্ষ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
তাহলে শুনুন একটি গল্প বলছি—আমাদের বাড়ির পাশে একটি মসজিদ ছিলো সাথে মাদ্রাসা।সেখানে প্রতিদিন সকালে অনেকেই আরবি পড়তে আসতো। আমরাও যেতাম।ফুলি নামের একটি মেয়ে ছিলো।
সে একটু পড়াশোনা কম পারতো।এমনিতেও একটু কম বুদ্ধি ছিলো!মাঝে মাঝে হুজুর ওকে শাস্তি দিতো বলতো পড়া শেষে হজুরের থাকার ঘর পরিষ্কার করার জন্য।আবার মাঝে মাঝে সবাই একত্রে মিলে মসজিদ ও হজুরের ঘর পরিষ্কার করতাম।আমরা কেউ বুঝতে পারিনি হুজুরদের চরিত্রও খারাপ হতে পারে।
হজুরের মনে হয়তো সেদিন পশুত্ব জেগে উঠেছিলো ।ফুলি হজুরের ঘর পরিষ্কার করলো।ঠিক সে সময় হুজুর ফুলির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।ঘর পরিষ্কার করা শেষ হলে হুজুর ফুলিকে পানি আনতে বললো। ফুলি পানি দেওয়ার সময় হুজুর ফুলির হাত ধরলেন। ফুলি হাত ছাড়াইতে চাইলো কিন্তু পারলো না।হজুরের ধর্ষণের শিকার হলেন ফুলি।ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেলো একটি গোলাপ।হুজুর নামক চরিত্রহীন এক কালবৈশাখীর ঝড়ে।
ফুলি কাঁদছিল হুজুর ফুলিকে ধমকি দিলো সাথে ভয় দেখালো।পড়াশুনা না পারলে।ঠিক মতো পড়া দিতে না পারলে ফুলিকে অনেক বেশি মার খেতে হবে। আর যদি এই কথা কাউকে বলে দেয়।তবে আরো অনেক মাইর খেতে হবে।তাই মাইর খাওয়ার ভয়ে হুজুরের অপকর্ম দিনের পর দিন মুখ বুজে সহ্য করে ফুলি।আর ফুলি প্রায়ই আরবি পড়তে যেতে চাইতো না।তার মাও খুব বকা দিতেন।কিন্তু ফুলির মা তখনও কিছুই জানতেন না।একদিন ফুলি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে আর বলছে—সে আর মসজিদে যাবে না।মাকে সব খুলে বললো—হজুর আমার সাথে এইগুলি করে।
আমি খুব ব্যথা পাই মা!আমাকে ভয় দেখায়ে এই সব কাজ করে।মা মেয়ে সে কি কান্না!কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে ফুলির মা কথাটি গোপনে সয়ে গেলেন।সেই থেকে ফুলি আর মসজিদে যায়নি।ফুলির মা ফুলিকে বাসায় মহিলা হজুরের ব্যবস্থা করে দিলেন।
ফুলি একদিন বড় হয়।বিয়ে হয়। স্বামী সংসার করে।
তারও মেয়ে হয়।কিন্তু ফুলি তার মেয়ের প্রতি বেশ যত্নবান।মেয়েকে চোখে চোখে রাখে।কোনো কালো ছায়া যেন আঁচড় না কাঁটে।
তাই মায়েদের প্রতি আমার অনুরোধ–বর্তমান সমাজে স্কুল,মক্তব,নিকট আত্নীয়ের কাছে আপনার ছোটো মেয়ের বেশি বেশি যাতায়াতে খেয়াল রাখুন।আর দৃষ্টি রাখুন—সমাজের এই সব ঘাতক কলাঙ্গারদের উপর।
গল্পগ্রন্থ—ধর্ষিত সমাজ।