বিশ্ব পরিবেশ দিবস- কিছু কথা।
মহুয়া ব্যানার্জী
জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হয়। আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ায় এই দিনটির কথা সকলেই জানেন। ১৯৭৪সালে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল , বিশ্ব উষ্ণায়ন,সমুদ্র দূষণ, বায়ুদূষণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জনসচেতনতা বাড়ানো। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয়। অথচ কি আশ্চর্য! তবুও প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে প্লাসটিকের ব্যবহার। বেড়ে চলে যথেচ্ছ অরণ্যনিধন। যত্রতত্র ব্যবহার্য জিনিষপত্র ফেলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়েই চলে। আমরা একদিন সরব হই পরিবেশ রক্ষার জন্য। আবার পরদিন থেকেই নিজের বাড়ির ময়লা পাশের বাড়ির পাঁচিলে ফেলে নিশ্চিন্ত হই যে নিজের ঘর পরিস্কার হল।
বাজারে, রাস্তায়, স্টেশনে পানের পিক, গুটখা, থুতু ফেলে অবলীলায় এগিয়ে যাই। ভেবেও দেখি না যে এ থেকে পরিবেশ দূষণ হবে। জীবাণুর বৃদ্ধি ও রোগের উৎপত্তি হবে। ডাস্টবিনে জিনিষ না ফেলে হামেশাই রাস্তায় ছুড়ে ফেলি। তারপর আরামে ঘরে বসে পরিবেশ দিবস উদযাপন করি। কি দ্বিচারিতা।
তাহলে এই দিনটি পালনের অর্থ কি? আমার মতে, যদি সঠিকভাবে পালন হয় তবে অর্থ রয়েছে। না হলে অর্থহীন। এই একটি দিনকে কেন্দ্র করে সেজেগুজে একটা টবে কি মাটিতে একটি চারা লাগিয়ে ফটো তুলে প্রচার করার পর সেই গাছটি আদৌ বেঁচে আছে কিনা দেখতেও যায় না অধিকাংশ মানুষ।সরকারের নির্দেশ মত বৃক্ষরোপণ করে তারপর ভুলে যায় গাছে জল দিতে। এমন বহু তিক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভরে উঠছে ক্রমশ। এখন তো আবার সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই যেন এই দিনটি পালন হয়। আবার যারা প্রকৃত পরিবেশ প্রেমী তারা সারাবছর ধরেই এই দিনের অর্থকে সফল করে তোলে।
একদিন একটা গাছ লাগিয়ে ভুলে যাওয়ার জন্য কিন্তু ৫ই জুন নয়। এই দিনটির জন্য সারাবছর ধরে নিজের বাড়িতে গাছ লাগান। পরিচর্যা করুন। জল, বায়ু, মাটি দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার কাজ প্রথমে নিজের বাড়ি থেকেই শুরু করতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। জল, ইলেকট্রিসিটির অপচয় রোধ, অকারণ সবুজ নষ্ট,প্রাণীহত্যা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটি জীব ও জড়ের সমান সহাবস্থান না হলে তার ধ্বংস অনিবার্য। আমরা তা মনে রাখি না বলেই ‘করোনা ভাইরাস’ আজ ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু কি তাই? ক্যান্সারের মত মারনব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে কেবল দূষণের কারনে। বিষাক্তধোঁয়া, রাসায়নিকের ব্যবহার ধ্বংস করছে বাস্তুতন্ত্র। শেষ হয়ে যাচ্ছে জীব।
এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হল ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার।’ সেটা করতে হলে একদিন কেবল সেজেগুজে গাছ লাগিলে হবে না। প্রতিদিন একটু একটু করে সবুজায়ন করতে হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারলে তবেই হবে প্রকৃত বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন।
খুব সুন্দর করে লিখেছো আমাদের এই পরিবেশ দিবস পালনের কথা। এটা যেন সত্যি আমাদের কাছে একটা বিশেষ দিন পালনের মতো একটা কিছু হয়ে রয়ে গেছে। পরিবেশ যে সারা বছরের, বছরের পর বছরের একটা বিষয় সেই ভাবনার পরিবেশটাই আর আমাদের ভাবনায় নেই।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস-কিছু কথা,- সঠিক জায়গাটির উপর জোর দিয়েছেন লেখিকা– প্রতিদিন একটু একটু করে সবুজাযন করতে হবে। ইকোসিস্টেমের চলমান নিয়মের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাসটাকে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই দুর্বল ইকোসিস্টেমের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হবে।
দারুণ বিশ্লেষণ!