থেমে গেল জরায়ুর কান্না—-
—– ডাঃ রীতা ওঝা
মার্চ মাসে ( বিশ থেকে ছাব্বিশ)চলে গেল “বিশ্ব কৈশোর (দশ থেকে উনিশ বছর)স্বাস্থ্য সপ্তাহ”। সুস্বাস্থ্য নিয়ে বলতে গেলে সকলের ভাবা উচিত যে-প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক ভাল। কৈশোর এর সংখ্যা সমস্ত জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ(বিবিএস -২০১৫)। তারাই জাতির ভবিষ্যত ।আর এই বয়সে তাদের শারীরিক, মানসিক,সামাজিক,জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে এবং স্বাস্থ্য গঠনের অন্যন্য সময়। চিন্তা- ভাবনা করা , সিদ্ধান্ত নেওয়া ও আগ্রহ থাকে চারপাশের পরিবেশর উপর।কিন্তু সাথে প্রয়োজন নিরাপত্তা,ভালোবাসা, স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরশীলতা ,নিজস্ব মতামত ও অর্জন করার সাহসিকতা। মহান তখনই সম্ভব যখন নির্দিষ্ট স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম,দৃঢ় ও অভয়ে থেকে সফলতার জন্য এগিয়ে যায়। তবে প্রভাব ফেলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা যেমন- দারিদ্র্যতা, নিরক্ষরতা ,মানসিক স্বাস্থ্য , হতাহত ও হিস্রতা,দুর্ঘটনা, ভারসাম্যহীনতা , মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও এইচ আইভিসহ বিভিন্ন জটিলতা । দীপু নামে একটি মেয়ে বিভিন্ন সমস্যার জন্য স্কুলের পরিবর্তে নির্বাচিত হয় শ্বশুরবাড়িতে। শুরু হয় নতুন জীবনের সংস্পর্শ । পরিবার,বন্ধু- বান্ধব, বই ও মিডিয়া জগত তাকে সাহায্য করতে পারে তা বুঝতে পারেনি। বাল্য বিবাহিত দম্পতির জন্য জন্মনিয়ন্ত্রন এর উপদেশ খুবই প্রয়োজন। কেননা অভিযোগ শোনা যায়- ঠিকমতো বড়ি খেতে মনে থাকে না , ভুল করে ফেলি, ভয় লাগে , শরীর খারাপ লাগে , খাওয়া লাগবে না বা না খেলে চলে ,এক দুদিন না খেলে কিছু হয় না ,প্রতিবেশীর সমস্যা হচ্ছে, সেও নিষেধ করছে ,বড়ি খেলে তালাক দিমু ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যার কথা বলতে থাকে। সময় চলে যায় দ্বন্দ্বের মাঝে। অন্যদিকে কৈশোর ফার্টিলিটি রেট ৮৩%(১৫থেকে ১৯ বছর — ২০১৯) । অপরিকল্পিত গর্ভধারণ,গর্ভপাত নারীদের সঠিক সময়ের পূর্বে চলতে থাকে। গ্লোবালি প্রতি বছর ৫.৬ মিলিয়ন গর্ভপাত হয় ও ৩.৯ মিলিয়ন অনিরাপদ গর্ভপাত হয় আর ১.৫ মিলিয়ন এর বেশি ( ১০ থেকে ২৪বছর )মৃত্যু বরণ করে ২০১৯ সালে।
উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ে অনেক সময়ে অসুবিধা হয়। দীপুর অল্প বয়সে বিবাহিত দশ -বারো বছরের মধ্যে পাঁচ -ছয় বার মা হতে গিয়ে ঝড়ের তাণ্ডব সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।পরপর গর্ভপাত , মৃত্যু বাচ্চা প্রসব, তিনবার সিজার , ষোল ব্যাগ রক্ত ,সাথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় সাতাশ বছরে হারাতে হলো জরায়ু।প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সে সার্জিক্যাল মেনোপজ যাবে।
কৈশোরে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বা সমস্যা কমানোর জন্য —সবার সুশিক্ষার পাশাপাশি জাতীয় ভাবে উন্নত কৌশল নীতিমালা প্রণয়ন মেনে চলা ,বন্ধুসুলভ স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে সহায়তা করা, হস্তক্ষেপ করা সুবিধা অনুযায়ী,স্কুল অনুযায়ী,সম্প্রদায় ভিত্তিক,সামাজিক ও আচরণ অনুযায়ী যেন কখনো কারো সমস্যা না হয়।আরো থাকা উচিত
সবার বন্ধুসুলভ মানসিকথা,উপস্থিতি ,উপযুক্ত তথ্য, পর্যাপ্ত ইকুপমেন্ট,চাহিদা তৈরি নিয়মিত উপদেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে গতিশীল রাখা উচিত শারিরীক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তার সুব্যবস্থা , নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার, প্রতিহত করা ক্ষতিকর দ্রব্য ও যৌন ব্যাবস্থা। ইচ্ছা থাকলে ও চেষ্টা করে গেলে সমস্যায় পড়বে না কারো জীবন।