ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে ভারত থেকে কলমযোদ্ধা-মেরী খাতুনের বাস্তব ধর্মী লেখা “”ভ্যালেন্টাইন্স ডে””

355
কলমযোদ্ধা- মেরী খাতুনের বাস্তব ধর্মী লেখা “"ভ্যালেন্টাইন্স ডে"”

“ভ্যালেন্টাইন্স ডে”

          কলমে-:: মেরী খাতুন।
               ১৪/০২/২০২২

যুগে যুগে কালে কালে ভালোবাসার টানে আকুল হয়েছে মানব-মানবী।অনাদিকাল থেকে হৃদয়ের প্রগাঢ় আকাঙ্খা আর মমতা দিয়ে পরস্পরকে কাছে টেনেছে।ভালোবাসা নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য কালজয়ী কবিতা,গান,উপন্যাস,গল্প, নাটক, সিনেমা।
আজ নাকি ভালোবাসা দিবস।তাহলে বাকি দিন কি ভালোবাসার নয়?সব দিনই তো ভালোবাসার সেটাই জানি।আজকে শুধু বিশেষ দিন “ভ্যালেন্টাইন্স” ডে।
খ্রিস্টান জগতে পাদ্রি-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য সাধারণত এই দিবস পালন করা হয়।

১। ঐতিহাসিক সূত্রে ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ছিলেন।তিনি খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করতেন।ধর্ম প্রচার অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রডিয়াস তাকে বন্দি করেন।কারণ তখন রোমন সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।ভ্যালেন্টাইনে যখন কারাগারে বন্দি ছিলেন তখন কারারক্ষী তার অসুস্থ ও দৃষ্টিহীন মেয়ে জুলিয়াকে তার কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন ।বন্দি অবস্থায় তিনি কারারক্ষী র দৃষ্টিহীন মেয়ে জুলিয়াকে সুস্থ করে তোলেন।এবং জুলিয়া ধীরে ধীরে তার দৃষ্টি ফিরে পায়।এই ঘটনার পর সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায় ।ভ্যালেন্টাইনের এই জনপ্রিয়তা ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্রাট ক্রডিয়াস তাঁকে মৃত্যু দন্ড দেন।সেই দিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারী।মৃত্যুর আগের দিন ভ্যালেন্টাইন জুলিয়াকে একটি চিঠি লেখেন।চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিল ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন্স।(From your valentine)।এই দিনটিকে স্মরণ করে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই
ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেন্টাইন্স দিবস ঘোষণা করেন ।

২। আরো ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় ২৭০খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী,রক্তলোলুপ রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রডিয়াসের দরকার ছিলো এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর।কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজী নয়।সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে,অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যাধিক ধৈর্যশীল।তাঁর ধারণা ছিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয় ।তখন তিনি নারী-পুরুষের-বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হাওয়ায় ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।সে সময় রোমের খ্রিষ্টান ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রাজার এই আদেশ অমান্য করে গোপনে নারী-পুরুষেরর বিবাহ-বাঁধনের কাজ সম্পন্ন করতেন ।এই খবর জানাজানি হতেই সম্রাট তাঁকে তার কাছে ধরে নিয়ে আসার আদেশ দিলেন।ভ্যালেন্টাইনকে সম্রাটের কাছে ধরে নিয়ে আসলে ভ্যালেন্টাইন সম্রাটকে জানালেন,খ্রিস্টধর্মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে তিনি কাউকে বারন করতে পারেন না।সম্রাট তখন তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং মৃত্যু দন্ড দেন।একসময় সম্রাট মৃত্যু দন্ড বাতিলের শর্ত হিসাবে তাঁকে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে রোমান দেবতার প্রতি অনুরক্ত হবার প্রস্তাব দেন।কিন্তু ভ্যালেন্টাইন রাজি হন নি,বরং সম্রাটকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান।পরিনীতিতে সম্রাটের নির্দেশে ২৭০খ্রিস্টাব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয় ।

              সুতরাং এখানে দেখা যাচ্ছে ধর্ম ও সাম্রাজ্যের প্রতি গভীরে ভালোবাসায় ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু দন্ডের মূল কারণ ।

          যাইহোক, প্রচলিত এই কাহিনী কতটুকু সঠিক সেটা আমরা জানি না।তবে এটুকু জানি যে ভালোবাসার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন হয় না।প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত ভালোবাসার।

               ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না,শুধুমাত্র অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয়।এটি একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগ কেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা।এর রং-রুপ-গন্ধ কিছুই নেই আছে শুধু অনুভূতি।বিশেষ কোন মানুষের জন্য ভালোবাসা স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ ।জীব জগতের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক হল ভালোবাসা।যার শক্তি তে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা যায়।পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসা।

               ভালোবাসার আর এক নাম আবেগ।একটি শিশু পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে ভালোবাসার পরিমণ্ডলে সে বেড়ে ওঠে।পৃথিবীর আলোতে চোখ রেখে তার কান্নার সূচনালগ্নে তার স্থান হয় ভালোবাসার শীতল ছায়া মায়ের কোলে।এ ভালোবাসার নাম স্নেহ।মা-বাবা,ভাই-বোন,আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর সাথে তার গড়ে ওঠে ভালোবাসার অটুট বন্ধন।শিশু থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে,কিশোর (কিশোরী)যুবক (যুবতী)প্রবীন এর  সীমা ছাড়িয়ে অগ্রগামী হতে থাকে।সেও ভালোবাসার আকর্ষণ সৃষ্টি করে তার নিজের মাঝে।মায়ের ভালোবাসা স্নেহের প্রতিদানে সেও মাকে ভালোবাসে।এ ভালোবাসার নাম শ্রদ্ধা।বুদ্ধি বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে তার ভালোবাসার পরিধি ও বাড়ে।শুধু শ্রেণী বিন্যাস অনুযায়ী পরিবর্তন হয় ভালোবাসার প্রকারভেদ।শ্রদ্ধা,স্নেহ আর কোথাও বা প্রেম নামে।ভালবাসাকে কেন্দ্র করেই মানুষের জন্ম ও বেড়ে ওঠা।ভালোবাসা হয়ে ওঠে সমস্ত সুখের উৎস ও বেঁচে থাকার প্রয়াস ।

জীবনের গতি নির্ধারণ করে ভালোবাসা।পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে যা দেখা যায় না,শুধু অনুভব করা যায়।যেমন মহাকর্ষ ও মাধ্যাকর্ষণ বল আমরা কেউ দেখি না।কিন্তু এই বলের অস্তিত্ব আছে বলেই টিকে আছে মহাবিশ্ব। মানব-মানবী ও প্রাণী জগতের মধ্যে মহাকর্ষ ও মাধ্যাকর্ষণ বলের মতোই ক্রিয়াশীল ভালোবাসার নাম বল বা শক্তি ।

          তাই-আজকের ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রমিকার নয়,শুধু স্বামী-স্ত্রীর নয়,তা প্রসারিত হোক বন্ধু-বান্ধব,পরিচিতজন সহ সবার মাঝে ।প্রসারিত হোক সমাজের প্রতিটি মানুষের মাঝে।এই ভালোবাসা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়, কিংবা শুধু তরুণ মনেই এর সীমাবদ্ধতা নয়।সব বয়সের সব মানুষের জন্য এই ভালোবাসা প্রসারিত হোক।

       আজ আমাদের নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতি উদাসীনতার কারণে সমাজের অশান্তি,অরাজকতা,ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে।ভেঙে পড়েছে সামাজিক বন্ধন,পারস্পরিক সহানুভূতি,সৌহার্দ্যতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোধ। 
                ভারতের এই গভীরে সঙ্কটের ও দুর্দিনের জন্য আমরা কি পারি না ধর্ম,বর্ণ,জাতি নির্বিশেষে সকলে একসাথে ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে ভারতকে সঙ্কট মুক্ত করতে?ভারতের বীর যোদ্ধারা জাতি-ভেদ নির্বিশেষে রক্তের বিনিময়ে  ইংরেজদের হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করেছিল।সেই রেক্তের ধারা আজও বয়ে চলেছে আমাদের শরীরে।তাহলে কেন CAA,NPR,NRC।?'মেরা ভারত মহান হ্যায়'।আমরা গর্বিত যে আমরা ভারতবাসী। তাই আসুন আমাদের মাঝে কোন কাঁটাতার কোন সীমারেখা না রেখে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে অন্তহীন ভালোবাসা দিয়ে দেশের সকল প্রান্তের সকল মানুষকে ভালোবাসায় আবদ্ধ করি।

             সবাইকেই ভ্যালেন্টাইন্স ডের শুভেচ্ছা।প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকুন।এই কামনা করি ।

—————– —————-
@copyright মেরী খাতুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here