সহেলি ও কি বাড়ি( सहेली कि वाड़ी)
কলমে_ অগ্নিমিতা দাস
উদয়পুরের রাজা সংগ্রাম সিং বিশাল সবুজ উদ্যান নিয়ে ” সহেলী কি বাড়ি” তৈরি করেন। তাজমহল যেমন শাহাজাহান মুমতাজ মহলের জন্য তৈরি করেন তেমনি মেবারের রাজা তার রাজমহিষীর আটচল্লিশ দাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য তপ্ত দাবাদহে শ্যামল সবুজ বাগানের সৃষ্টি করেন। এই বাগান (১৭১০_ ১৭৩৪) মধ্যে তৈরি করেন। ফতে সাগর লেকের ধারে তৈরি এই মনোরম উদ্যোনটা অতি উৎকৃষ্ট স্থাপত্যকলার নিদর্শন তার সাথে সুপরিকল্পিত ভাবে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার মিশেল। এই স্থাপত্যকলার প্রতীক হলো নারী। নারীদের আনন্দের জন্য তৈরি এই মহল। শ্বেতপাথরের এই মহলের হাতি, পাখির মুখ দিয়ে ঝর্ণা, চারদিকে শ্বেতপাথরের স্তম্ভ তখনকার সময়ের স্থাপত্যকলাকে কুর্নিশ জানাতে হয়।পদ্মের পুকুর, রঙিন বোগেনভেলিয়া অপূর্ব কৃত্রিম ঝর্ণা উদ্যোনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
আশ্চর্যের বিষয় তপ্ত গ্রীষ্মের দাবদাহে ও ওই উদ্যোনে সবসময় যেন শীতল শ্রাবনের ধারা বয়ে চলে। সেই সময় কৃত্রিম জলোচ্ছ্বাস যে হতো তখন কিন্তু বিদ্যুৎ ছিলো না। পুরোটাই চালিত হতো মানুষের যন্ত্রকৌশলের দ্বারা( লিভারে দ্বারা)

বিন বাদল বারসাত__ এই বাগানে চারিদিকের সবুজ প্রকৃতির মধ্যে এমনভাবে ঝর্নার সৃষ্টি করা হয়। যেখানে চোখ বন্ধ করলে মনে হবে বুঝি শ্রাবণের ধারা চারিদিক ভাসিয়ে দিচ্ছে।রাণী এবং তার সখীরা জয়পুরের তপ্ত আবহাওয়াতে যেন শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিমুখর দিন অনুভব করতো।
শাওন ভাদো__ সবুজে সবুজে বনানীর মধ্যে কৃত্রিম জলোচ্ছ্বাস পরিবেশকে সবসময় শস্য শ্যামলা করে তোলে। এই বাগানের মধ্যে যতো হাঁটা হবে তত মনে হবে সবুজ অরন্যে বৃষ্টি চারিপাশকে মুখরিত করছে এবং ঝর্ণা থেকে ছিটিয়ে আসা জল দেহমনকে শান্ত করবে। মনে হবে এই শ্বেতপাথরের বিশাল বিশাল সবুজের গাছের ছায়ায় আর ঝর্নার জলে মনকে ভিজিয়ে নিই।

কমলতালাই__ এই বাগানের মাঝখানে বিশাল শ্বেতপাথরের পুকুর যেখানে সবসময় সদ্যপ্রস্ফুটিত পদ্ম থাকে। পাশে সারি সারি রঙিন ফুলের গাছ। রাণীদের স্নানাগারের পাশেই রয়েছে চেন্জিংরুম।শ্বেতপাথরের হাতির মুখ থেকে কৃত্রিম জলোচ্ছ্বাস এই উদ্যোনের অন্যতম আকর্ষণ। মাঝখানে থাকা কারুকার্য করা স্তম্ভ এবং চারটে সিংহের মুখ রয়েছে। প্রতিটি সিংহের মুখ একটা করে মার্বেল দিয়ে তৈরি। এখানে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনায় ওই ফোয়ারা উর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী হয়। সামান্য তালি বাজালেই ঝর্ণা যেন হাতের ইশারায় নাচতে থাকে। এই ফোয়ারার নৃত্য অদূরে বসে চালনা করে একজন লিভারম্যান। যার দক্ষ চালনায় এই ফোয়ার তার জাদুতে মানুষের মন ভরিয়ে দেয়।
রাসলীলা__ সেই সময় রাজা ও রাজমহিষী একসাথে বসে দখিনা বাতাস গায়ে মেখে সখীদের নৃত্য দেখতো। ঝর্নার নীচে থাকতো কাঁসার কলসী যার ফলে গড়িয়ে পড়া জল কলসীর ওপর পড়ে একটা অদ্ভুত মায়াময় সুরের মূর্ছনায় ভরিয়ে দিতো। অনেক সময় রাজমহিষী স্বয়ং এই উদ্যোনে ফোয়ারার জলে গায়ে মেখে নৃত্যরত থাকতো।
এই ” সহেলী কি বাড়ি” বিশাল শ্বেতপাথরের প্রাসাদে কান পাতলেই শোনা যায় নারীকন্ঠের উচ্চকিত হাসি। রাজস্থানী চুড়ির ঝনঝনানি বা হঠাৎ ধেয়ে আসা মেঘ আর বৃষ্টির মিলনে রাজমহিষীর নিজের প্রিয়কে পাওয়ার ব্যাকুলতা। ক্ষনিকের মিলনে রাজাকে পেয়ে রাজমহিষীর পরম পরিতৃপ্তি। রাজস্থানের তপ্ত দুপুরে সখীপরিবৃতা হয়ে রাণীর যৌবনচ্ছল দেহকে সুবাসিত ফোয়ারার জলে ভিজিয়ে দিও ও মনে থেকে যেতো হয়তো প্রিয়তমের অপেক্ষায়।