নারীকথন
আমি ফুল কিংবা পাহাড়ি ঝর্ণা
আনজানা ডালিয়া
আমি ফুল কিংবা কোন এক পাহাড়ের বয়ে চলা ঝর্ণা কিংবা পাখি ডাকা কোন এক বিকেলের রংছুট অথবা রাতের স্নিগ্ধ মায়াবী চাঁদ কিংবা আমি সন্তানের জন্মদাত্রী।আমার ভাবনা ঠিক এরকম।আমি একজন নারী,মুক্ত নারী।কিন্তু আমার ভাবনা আর সবার ভাবনা যে এক তা মনে হয়না কারন আমি যা ভাবি আমাকে নিয়ে আমার সমাজ সেটা মানেনা।নারী জীবন খুবই জটিল।না পাওয়া যায় মনের কাছে না পাওয়া যায় কারো কাছ থেকে।নারী জীবন মানে চার দেয়ালের গন্ডির মাঝে সময় কাটানো,সঙ্গে অন্যের কথামত চলাফেরা করা।কিন্তু না আমি এমন জীবন চাইনা এবং আমি চার দেয়ালের গন্ডির মধ্যে বন্দিও থাকতে চাইনা।আমার স্বপ্ন,শখ,আশা-আখাঙ্খা একান্তই আমার।
নারী পুরুষ নিয়ে সমাজ।সভ্যতার বিভিন্ন বাঁকে একদল মানুষ সামগ্রীক বিবেচনা থেকে নারীকে আলাদা করে ভাবতে চেয়েছে।বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর মুল্যায়নকে অর্থহীন ভেবেছে কিন্তু নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে যারা তাদেরকে ভিনগ্রহের মানুষ ভাবেন তাদের নিয়ে দ্বিমত পোষন করছি।পরিচয় প্রথমত মানুষ হিসেবে।তারপর নারী/পুরুষ ভেদে নাহয় খানিকটা বিভাজন হতে পারে।পাশ্চাত্য সমাজ নারীকে আলাদা ভাবতে চায় পণ্য বিবেচনায়।যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বেশ বাগাড়ম্বর করেন তারাও নারীকে আসলে সম্মানিত করেননা।এক ধরনের চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে করুণা করতে চান।বাংলাদেশে ধর্ষণের হার বেড়েই চলেছে।ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছয় বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বয়স্কা নারী পর্যন্ত।এমনকি পথের ভিখারিনীটিও রেহাই পাচ্ছেনা পুরুষ নামের কিছু হায়েনার হাত থেকে।এমন কোন দিন নেই যেদিন পত্রিকার পাতায় কোন না কোন ধর্ষণের খবর না থাকে।ঘরে-বাইরে শারিরিকভাবে,মানসিকভাবে চলছে নির্যাতন।সমাজের চাকায় পিষ্ট হও,নাহয় ট্রেনের নীচে জীবন দাও- এই কি নারীর জীবন?
অনেক সভ্যতার শ্রষ্টা এই নারীরা।একবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে দাড়িয়েও তারা কেবল মাত্র নারী।মানুষের মর্যাদা এখনও পেলেননা।ঐতিহ্যগতভাবেই সব স্বার্থের কাছে ছোট ও উপেক্ষার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হলো নারী স্বার্থ।অথচ সৃষ্টির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তার ভূমিকা অপরিহার্য কেবল নয় প্রধানও বটে।একজন মানুষের মনুষ্যত্বের মৃত্যু ঘটে যখন একজন শিশু,নারী ধর্ষিত হন অথবা অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।তখন শুধু একজন মানুষের মৃত্যু ঘটেনা,মৃত্যু ঘটে মানবিক মূল্যবোধেরও।নারীকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করে তার সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্টিত করতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন,রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রভাবমুক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা জরুরী।তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবী।