সমাজ বিশ্লেষক-হাসানুজ্জামান এর বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “যুক্তরাজ্যের চমক ৩০ লক্ষ হংকংবাসীকে নাগরিকতা দিবে ”

519
সমাজ বিশ্লেষক-হাসানুজ্জামান এর বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “যুক্তরাজ্যের চমক ৩০ লক্ষ হংকংবাসীকে নাগরিকতা দিবে ”

যুক্তরাজ্যের চমক
৩০ লক্ষ হংকংবাসীকে নাগরিকতা দিবে

                       হাসানুজ্জামান

‘হংকং নিরাপত্তা আইন’ পাশ হওয়ার পর গণচীন হংকং এর উপর পূর্ণনিয়ণÍ্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খুব তড়িঘড়ি করে এই আইনটি পাশ করেছে চীন। এই আইনটি পাশের মধ্যদিয়ে হংকং-এর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন খর্বের আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে হংকং-এ গণতন্ত্রপন্থিরা আন্দোলনে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে সেখানে। এই ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ,ফ্রান্স , জার্মান সহ ২৭ টি দেশ ইতোমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

১৯৯৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত হংকং-এ উপর নিয়ণÍ্রণ ছিল বৃটিশদের। যুক্তি অনুযায়ী তারপরের সময়ে চীনের নিয়ণÍ্রণে আসে হংকং। শি চিনফিং চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে হংকং এর উপর নজর আসে। চীনের দাবী- হংকং এ বিচ্ছিন্নতাবাদ ,বৈধ সরকার পতনে অর্ন্তঘাতমূলক কার্যক্রম ,সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশী হস্তক্ষেপ রুখতেই নতুন এই নিরাপত্তা আইনটি করেছে। কিন্তু গণতন্ত্রপন্থিদের দাবী এই আইন এই অজ্ঞলটির রাজনৈতিক স্বাধীনতার টুটি চেপে ধরবে। হংকংবাসী দীর্ঘদিন ধরে যে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছে এই আইন তাকে খর্ব করবে। ১৯৯৭ সাল থেকে বৃটিশদের উপনিবেশ থেকে চীনের অর্ন্তভুক্ত হয় হংকং। তখন থেকে হংকং ‘একদেশে দুইনীতি পদ্ধতির’ আওতায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। হংকং চীনের স্বায়ত্তশাসন অজ্ঞল হলেও নিজস্ব বিচার বিভাগ ,আইনসভা ও সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্রের আন্দোলন চলছে হংকং-এ। হংকং নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে গেল সপ্তাহে কাইলুন শহরের জরডান থেকে মংকক পর্যন্ত মৌন মিছিল করে কয়েক হাজার গণতন্ত্রপন্থি মানুষ। এদিনের মিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও ৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে চীনা পুলিশ। লংকার গুড়া স্প্রে করেছে মিছিলের উপর। গত বুধবার বৃটিশ উপনিবেশ থেকে ২৩ বছর পূর্তি উৎসব ছিল হংকং এর। সেই উৎসব উপলক্ষে গণতন্ত্রপন্থিরা মিছিল করতে চাইলে বাধা দেয় চীনা পুলিশ। গ্রেতার করে কয়েক শত মানুষকে।

বিশ্বের এখন আলোচিত ঘটনার মধ্যে হংকং অন্যতম। হংকং এর উপর চীনের দমনপীড়নের প্রতিবাদ করেছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার সংসদে জানালেন- ৩০ লক্ষ হংকংবাসীকে নাগরিকতা দিবে তারা। বিদেশমন্ত্রী ডমিকি র্যাব জানান, প্রথমে পাঁচ বছরের ব্রিটিশ ন্যাশনাল ( ওভারসিজ) বা বিএনএ পাসপোর্ট দেওয়া হবে। তারপরে ১২ মাসের জন্য দেওয়া হবে ‘ সেটলড’ স্ট্যাটার্স’। এর পরের ধাপে দেওয়া হবে নাগরিকতা। বর্তমানে সাড়ে তিন লক্ষ হংকং বাসীর বিএনএ পাসপোর্ট রয়েছে। সেই সংখ্যা ৩০ লক্ষ করা হবে। ডমিনিক সংসদে আরো বলেন- বিএনএ পাসপোর্ট ধারীরা কোন ব্রিটিশ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আমন্ত্রণ না পেলেও কোন সংস্থার কাছ থেকে চাকুরির আশ্বাস না পেলেও ব্রিটেনে এসে বসবাস করতে পারবে। নূন্যতম বার্ষিক আয় ৩০ হাজার পাউন্ড হলেই ব্রিটেনে আসার সূযোগ পায় অভিবসীরা। কিন্তু বিএনএ পাসপোর্টধারীদের জন্য এই নিয়মের প্রয়োজন নেই। শ্ধুু তাদের প্রমাণ দিতে হবে যে, কোন সরকারী অনুদান ছাড়াই ব্রিটেনে বসবাস করার মত আর্থিক সঙ্গতি তাদের রয়েছে। অনেকেই অবশ্য বলছেন- বরিসের এই সিদ্ধান্তে উচ্চবিত্ত হংকংবাসীরাই শুধু লাভবান হতে পারবে।

এদিকে হংকংবাসীকে ‘ স্যাভ হ্যাভেন’ বা সাময়িক আশ্রয় সুবিধা দিতে চাইছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানান। এদিকে নতুন আইনের সমালোচনা করে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি বিলের প্রস্তাব পাশ হয়েছে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে। হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন- এই আইন আসলে চীনের ‘এক রাষ্ট্র দুই নীতি’ খর্ব করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টর সইয়ের আগে বিলটি যাবে মার্কিন সিনেটের কাছে। ‘ হংকং নিরাপত্তা আইন’ এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র হংকং এর কাছে প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সরজ্ঞাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা ঝুকির জন্য চীনের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পরমাণু শক্তিধর চীন অর্থনৈতিক দিয়ে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। একদিকে বিশাল সাম্রাজ্য অপরদিকে ১’শ ৩০ কোটি জনগণকে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুতই উন্নতির শিখরে উঠে গিয়েছে চীন। সম্প্রতি করোনা মোকাবেলায় তাদের সাফল্য চোখে পড়ার মত। এই সব ঘটনাগুলোই চীনকে আগ্রাসী করে তুলেছে বলে অনেকেই মনে করেন। একদিকে ভারতের সাথে সীমান্ত নিয়ে মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে অপরদিকে হংকং এর গণতন্ত্রপন্থি মানুষের গ্রেফতার ও ধরপাকড়ের মধ্যদিয়ে তাদের মধ্যে একটি আগ্রাসী মনোভাব তৈরী হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্র চীনের এই আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও চীন তার অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে মনে হয় না।

লেখক ঃ সহকারী অধ্যাপক ও সদস্য, খেলাঘর কেন্দ্রিয় কমিটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here