জীবন বোধের লেখক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “মৌলবাদের সংজ্ঞা ও উৎপত্তি ”

463
জীবন বোধের লেখক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “মৌলবাদের সংজ্ঞা ও উৎপত্তি ”

“মৌলবাদের সংজ্ঞা ও উৎপত্তি”

                   মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস

বাংলাদেশে মৌলবাদ একটি আতংকের নাম, সহিংসতার নাম। মৌলবাদ বললে ভুল হবে বলতে হবে ইসলামি মৌলবাদ। দাঁড়ি টুপি এবং আলখেল্লা পরিহিত মানুষ দেখলেই আমরা তাকে মৌলবাদী হিসাবে চিহ্নিত করি। আমাদের ধারনা ইসলাম ধর্মের গোঁড়ামী থেকেই মৌলবাদের সৃষ্টি। আসলে ইসলাম নয় বা শুধু ধর্মই নয় যে কোন আদর্শিক জায়গা হতে পারে মৌলবাদের উৎস স্থল।
এই শব্দটির জন্ম দেয় আমেরিকা মুডি বাইবেল ইনষ্টিটিউট এবং নায়াগ্রা বাইবেল কনফারেন্স। তাদের মুল কথা ছিল বাইবেলকে অভ্রান্ত ধরতে হবে এবং তার কোন কিছুইতেই সন্দেহ প্রকাশ করা যাবে না। পরবর্তী সময় ১৮৯৫ সালে নায়াগ্রা বাইবেল কনফারেন্স বাইবেলের পাঁচটি মুল সুত্র ( বাইবেল অভ্রান্ত, খ্রিষ্ট দিব্য রুপে পুজ্য, মাতা মেরীর কৌমার্য ধ্রুব সত্য, খ্রিষ্টের অপসারন বিকল্পমুলক, খ্রিষ্টের সশরীর পুনরাবির্ভাব আসন্ন) খ্রিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসের ফান্ডামেন্টাল বলে ঘোষনা করেন। এই পাঁচটি সুত্র ব্যাখ্যা করে ১৯০৯ সালে আমেরিকার বিখ্যাত দার্শনিক ডিকসন এবং টোরের সম্পাদিত ” ফান্ডামেন্টালসঃ এ টেস্টিমনি টু দ্য ট্রুথ ” নামক বইতে এই ধারার খ্রিষ্টবাদীদের ফান্ডামেন্টালিষ্ট এবং তাদের মতবাদকে ফান্ডামেন্টালিজম বলা হয়েছে। আবার তাদেরকে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানিজমও বলা হয়েছে। ” ফান্ডামেন্টালিজম এন্ড আমেরিকান কালচার” বইতে মৌলবাদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ” আধুনিক ধর্মতত্বের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় নির্দ্দিষ্ট আধ্যাত্মিক তত্বগুলির প্রতি কঠোর আনুগত্যের জন্য দাবী”। এই সংজ্ঞার পর্যালোচনায় বলতে হয়, ” মৌলবাদের সংগ্রাম ধর্মের আভ্যান্তরিন সংগ্রাম, কোন ভাবেই আধুনিক সমাজ, রাষ্ট্র বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সংগে নয়। যদিও মৌলবাদ এই জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে নিজ ধর্মের বিরদ্ধবাদী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হত্যা সহ আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় আঘাত হানছে।
সম্ভবত ১৯০৫ সালে হিন্দু মহাসভা প্রধান সাভারকরের উক্তি,” হিন্দু প্রাচীন ও অভ্রান্ত ধর্ম এবং হিন্দুস্থান হিন্দুদের পৈত্রিক এবং পুত পবিত্র ভুমি ” হিন্দু মৌলবাদের উন্মাদনা সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় তার এই বক্তব্য এবং তার ধারাবাহিকতা ভারত এবং বাংলা ভাগের মুল ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। যদিও এটা নিয়ে বিশদ আলোচনার দাবী রাখে কিন্তু এত অল্প পরিসরে তা সম্ভব নয়। তবে হিন্দু মহাসভার উত্তরসুরী আরএসএস এর কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলেই অনেকটা সত্যতা পাওয়া যাবে। মৌলবাদ ও সহিংসতার উত্থানের উৎস হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মও মুক্ত নয় তবে সবচেয়ে কট্টর অবস্থানে ইহুদি ধর্ম।
বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ইসলামী মৌলবাদের নামে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তবে তা মৌলবাদী নাকি জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী ঘটনা তা বিচার্য বিষয়। কারন পবিত্র কোরআনে আল্লাহর ঘোষনা, “যার যার ধর্ম তার তার কাছে ” আবার বিদায় হজ্বের ভাষনে রাসুল সাঃ এর ঘোষনা,” তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করিও না”। অন্যদিকে আত্মহত্যা যে ধর্মে মহাপাপ সে ধর্ম নিশ্চয়ই আত্মঘাতী হামলা সমর্থন করে না।তাই যদি হয় তাহলে মুসলমানদের অন্যের ধর্মকে ছোট এবং নিজ ধর্মকে বড় করে দেখার সুযোগ কোথায়। যারা এর সংগে সম্পর্কিত তারা অবশ্যই ইসলামের মৌলিকত্ব লালন করে না বিধায় তাদেরকে মৌলবাদী বলার সুযোগ নাই। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের নামে যে সহিংস ঘটনা ঘটছে তা আত্মরক্ষা, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা বা অন্য কোন কারনে জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী ঘটনা।
মৌলবাদ বা সহিংস ঘটনা যে শুধু মাত্র ধর্মগত কারনে হয় তা নয়, রাজনৈতিক এবং জাতিগত কারনে ঘটতে পারে। হিটলার মানুষ হত্যা করেছিল মানুষকে ছোট করে নিজ জাতিকে বড় করে দেখার কারনে। সমাজতন্ত্রীগন যদি নিজ মতাদর্শকে অভ্রান্ত মনে করে ভিন্ন মতালম্বীকে আঘাত বা হত্যা করে তাও মৌলবাদী সহিংসতা। যেমন কমরেড স্তালিনের শাসনামলে রাশিয়ায় বিরুদ্ধবাদীদের হত্যা, কম্বোডিয়ার পলপট সরকারের গনহত্যা, ভারত এবং বাংলাদেশের শ্রেনী শত্রু খতমের রাজনীতিও মৌলবাদী সহিংসতার পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয় কোন দল যদি দলীয় নেতার অনুসৃত নীতি ও কর্মকান্ড অভ্রান্ত দাবী করে তার সমালোচনা রহিত করার চেষ্টা করে তবে তাও মৌলবাদী দৃষ্টি ভংগীর পর্যায়ে পড়ে বলেই আমার ধারনা। সুতরাং বিশ্বের যে কোন জায়গায় মুসলমানের নামে সংঘঠিত সন্ত্রাসী ঘটনাকেই ইসলামী মৌলবাদ কর্তৃক সংগঠিত বলে পশ্চিমা বিশ্ব বা সম্রাজ্যবাদীদের প্রচারনা কেবল মাত্র ইসলাম ধর্মকে ছোট করার অসৎ উদ্দেশ্যেই করা হয় এবং ইসলাম বিরোধী এ ধরনের প্রচারনা ইসলাম প্রবর্তনের শুরু থেকেই চলে আসছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here