আমাদের নজরুল (নজরুল স্মরণে)
অনিক উদ্দিন
(প্রতিভা সন্ধান কাব্য পরিষদে আজকের( ২৭/০৮/১৯ ইং) কবিতাগুলোর মাঝে সেরাদের সেরা নির্বাচিত হয়।)
বিদ্রোহী কবি পৃথিবীর বুকে বারবার সেকি আসে
আসে তার খালি প্রয়াণ দিবস অনাহুত উচ্ছ্বাসে,
যার প্রয়াণের বিষাদ বাস্প ধূসর অশ্রু চোখে
পৃথিবীর সুখ দুঃখের পাথারে বারেবারে পড়ে ধুঁকে।
হে বিদ্রোহী বীর
কর নি কো ভয় রক্ত আঁখিকে সত্যের অপমানে
ধূমকেতু সম এসেছিলে তুমি মুক্ত রনাঙ্গণে,
তুমি ছিলে যেন ধু্র্জটি শিব প্রলয় নৃত্যে রত
তোমার নৃত্য দাপটের সাথে ধূলি গেছে উড়ে কত।
ধূলিতে আকাশ ছেয়েছিল যেন বৈশাখী কালো মেঘে
তোমার ঝাকরা অলক দোলায় লুটিয়েছে তা বেগে,
তুমি ছিলে যেন উন্মাদ তাজি দুরন্ত পথচলা
লু হাওয়া পেত না নাগাল তোমার তুমি তাই আত্নভোলা।
ছুটেছিলে যেন অবিশ্রাম কোন অজানা লক্ষ্য পানে
ছুটেছিলে তুমি, পেয়েছিলে কোন অজানা ভাষার মানে,
পেয়েছিলে যেন আবে হায়াত তোমার লেখনী শীর্ষ দিয়া
যে সুধা সিক্ত আজো করে মোর রিক্ত বুকের হিয়া।
শার্দুল সম সে চলার গতিকে কদাচ করেছে ক্ষান্ত
নিপীড়নের নীল কারাগার, হওনি উদভ্রান্ত,
অবিচল থেকেছ শৌর্য সমেত হৃদয়ে রেখেছ গেঁথে
সত্যের শিখা অনির্বান চির অন্ধ কুটিল রাতে।
হে মুক্ত প্রানের চির বিদ্রোহী বীর
পারেনি পরাতে তোমারে কখনো ত্রাসনের জিঞ্জির,
অলিম্পাসের চূড়ায় বসে অত্যাচারী যে জিউস
চেয়েছে করতে রুদ্ধ তোমাকে, তুমি সেই প্রমিথিউস।
শৃঙ্খলগত সিংহের মত দিয়েছ হুংকার সত্যের
তোমাকে বিচার করতে এসে পলায়েছে বানী বিচারের,
পারেনি রুদ্ধ করতে তোমার প্রানের বুলবুলি
শ্বাশত গান গেয়েছিলে তুমি অগ্নিবীনায় সুর তুলি।
ঝঞ্ঝা ক্ষুব্ধ সিন্ধুর মাঝে তুমি ছিলে নির্ভীক
অঙ্গুলী তুলি দেখিয়েছ তুমি সত্য পথের দিক,
সত্যেরে তুমি বেসেছিলে ভাল, সত্যে দিয়েছ প্রাণ
পরাধীন জাতি পেয়েছিল তোমার পরশে পরিত্রান।
গেয়েছিলে তুমি সাম্যের গান মানুষেরে ভালবেসে
কুলি ও মজুর ভাই হয়ে তোমার থেকেছিল পাশে পাশে,
নিপীড়িত প্রানে যে ব্যথা ছিল তুমি ছিলে তার ভাগি
ফির নি কো কভু একা তুমি তাই সুখের পাপিয়া লাগি।
তোমার বিপুল বক্ষে ছিল যে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া
বিলায়েছ শেষ কনাটুকু তার রিক্ত করে সে হিয়া,
চির নিঃস্বের কাতারে দাঁড়ায়ে তুমি ছিলে বড় দাতা
করে নি লুব্ধ কখনো তোমাকে না পাওয়ার আকুলতা।
যে দারিদ্র্য ছিল তোমার চির জীবনের সহচরী
কর নি আজাদ তারে তুমি রেখেছ আঁচলে ধরি,
কর নি ছিন্ন পরশ তার বিধাতার দান বলি
লাস্য অধরে করেছ বরন দারিদ্র্যের অঞ্জলি।
হও নি ক্ষুন্ন তুমি তাতে কোন না পাওয়ার বেদনায়
শত গঞ্জনা একা সহেছিলে নিভৃতে স্বেচ্ছায়,
সহিলে না শুধু স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপরাধ
দ্বীপ্ত দম্ভে করেছিলে তাই মসী হাতে প্রতিবাদ।
তোমার তীক্ষ্ণ বাক্যবানের পাশুপত সম আঘাতে
জালিম রাজার অশুভ কুটিল ভিত্তি টুটেছে তাতে,
জুলুমের মাঝে তুমি ছিলে যেন ধ্বংস লীলার ধূমকেতু
তোমার জাগরনে উড়েছিল নতুন করে সে রনকেতু।
সকলের দেওয়া হেমলক তুমি করেছ গ্রহণ নির্দ্বিধায়
কূট সমাজের হলাহল রাশি করেছিলে পান সর্বদাই,
করেছ ধারন কন্ঠে গরল রাখতে মুক্ত স্বাধীন দ্বীপ
অসুরের মাঝে দেবতার সম তুমি ছিলে নব বিপ্রতীপ।
বহু মহারথী সাথে মরন সমরে তুমি ছিলে বীর অভিমুন্য
রথীগন যবে ত্যাজিল তোমারে, হও নি কো তাতে ক্ষুন্ন,
একাকী হে বীর দারুণ দাপটে করেছিলে মহা যুদ্ধ
জান তুমি পিছনে ফেরার পথ চিরতরে রুদ্ধ।
হওনি তাতে হতাশ সমরে লড়েছিলে বীর অকুতোভয়ে
অবাক ধরনী দেখেছে তোমাকে নিদারুন নব বিস্ময়ে।
তুমি ছিলে বীর, হে উদার প্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক কবি
ধর্মের কূপমুন্ডক সম ছিলে না কখনো দ্রবী,
মানুষকে তুমি রেখেছ উর্দ্ধে, ধর্ম রেখেছ পরে
সকল ধর্ম লীন হয়ে যায় এক মানুষের তরে।
করেছিলে এই সত্য ভাষন মরমের বানী নিয়া
কর নি আড়াল মানুষেরে তুমি ধর্মের বেড়া দিয়া,
নিখিল মানব সকলের তরে একই কল্যাণ সুর
বেজেছিল তোমার অগ্নিবীনায় শ্বাসত্ব সুমধুর।
খুঁজে ফিরেছ সকল ধর্মে যা আছে যত মিল
অমিল নিহারি কর নি কো সিয়া তোমার শুভ্র দিল।
অচেতন প্রানে চেতন এসেছে জাগরণী সুর বেজে
শ্যামা সংগীতে যাঞ্চা চাহে দেবতা স্বয়ং নিজে,
তাওহীদ তুমি অটুট রেখেছ গজলের সুর থেকে
হামদ ও নাতে শ্রদ্ধা ঝরত অবনত মস্তকে।
তোমার কোরাসে তরুনের বুক উদ্বেল হয়ে ওঠে
শোনিত ধারায় শিরায় শিরায় অগ্নি ফুলকি ছোটে,
বুকের পাঁজর ঝারা দিয়ে ওঠে তপ্ত তোমার ডাকে
শোনিতের গতি দ্রুত হয় প্রতি শিরা ধমনির বাকে।
ব্যবধানহীন নর ও নারীর যে পৃথিবী দেখেছ চোখে
তুমি ছিলে যার অগ্র নায়ক, তোমার কবিতা থেকে
উঠেছিল জেগে বিভেদ আকাশে সাম্যের অরুনিমা,
ব্যপ্ত করেছে নিখিল মানব হৃদয়ের শেষ সীমা।
তুমি হে বীর, সকল মানব সকল জাতির কবি
তোমার মাঝে খুঁজে পাই মোরা সাম্য সরল ছবি,
তোমার বজ্র শিখার মশালে পথ হেরি মোরা
তুমি হে বীর একাকী আকাশে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা।
সত্য পথের দিশারী স্বরুপ তোমার অমিয় বানী
যুগে যুগে সব মানুষের মনে কল্যাণ সুর আনি
গেঁথেছ এক মিলনের মালা,একই সুতোয় বেঁধে
যা আছে সত্য দীপ্ত বানীতে কোরান, বাইবেল ও বেদে।
তুমি নাই, তোমার ক্ষেতের ফসল আজো ঘরে তুলি
তোমার ফসল লুট করে খায় আমারই প্রানের বুলবুলি,
ধরনী ত্যজিয়া ঘরনি পেতেছ যে মহান সুরালোকে
পাও কি দেখতে মর্ত্য কাঁদছে তোমারি বিরহ শোকে।
তুমি নাই শুন্যতা সেই ধরনীর মহাপ্রাঙ্গন মাঝে
ব্যথিত কাতর হৃদয়ে নিশিদিন শুধু বিরাজে।
তুমি চলে গেছ সপ্ত সিন্ধু সেতু পার
রেখে গেছ বেঁধে বেদনার নীল কারাগার
আমার বুকের সাথে বড় নির্মম হেম জিঞ্জিরে,
পারিনি আজাদ করতে আমি কখনো যে তারে।
বিষাদের ঘন নিদাঘের ঝড় হৃদয়ের অতি মাঝে
লভিছে জন্ম তীব্র পুনঃ উষর মরুর সাজে,
যেটুকু দিয়াছ আরো চাই বলে বাড়াব কোথায় হাত
শুন্য সকলি শুন্য কামনা শুন্য রহে যে পাত।
এই দোয়া করো, হে মহান চির বিদ্রোহী কবি
আমাদের মাঝে খুঁজে পাই যেন তোমারই প্রতিচ্ছবি।