তারুণ্যের বিশ্লেষক- ডাক্তার রীতা ওঝা এর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের অসাধারণ লেখা “গতিশীল মা-বাবা ”

457
ডাক্তার রীতা ওঝা এর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের অসাধারণ লেখা “গতিশীল মা-বাবা ”

গতিশীল মা-বাবা

                             রীতা ওঝা

পৃথিবী গতিশীল, সেই সাথে গতিশীল বাবা-মা। জীবন মানেই সংগ্রাম, আর সংগ্রাম মানেই ছুটে চলা। আমরা সবাই শুধু ছুটছি আর ছুটছি।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা, সমস্ত কাজও পড়ে আছে। কিন্তু করতেই হবে। সাহায্য করার কেউ নেই। আর থাকলেও করবে না। ছুটে চলা কাজ। সবাই পেটের ক্ষুধার জন্য অবশ্যই ছুটতে থাকে। কারণ কানে বাজতে থাকে এটা আনো, ওটা আনো, এটা নেই, ওটা নেই। না আনলে সমস্যা, না দিলে রাগ করবে। ওটা ওর কেনাই লাগবে, আজ এটার বিল দিতে হবে, আগামীদিন বিয়ের দাওয়াত আছে, কয়েক দিন পর জন্মদিন। মাথায় ঘুরতে থাকে স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা। বাজার থেকে এটা-ওটা আনতে হবে ইত্যাদি বিষয় শুনতে শুনতে একজন নয়, দুজনেরই কষ্ট। বলতে দুঃখ, ভাবতে চিন্তিত, শুনতে ও কিনতে কষ্ট।
তবে এক এক জনের গতির ধরণ এক এক রকম। নারীদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, যারা বেশি ছোটে, তাদেরকে সারা জীবনই ছুটতে হয়। আর এর মাঝেই খুঁজে নিতে হয় আনন্দ। সব কাজের মধ্যেই রাখতে হয় স্বপ্ন, উদ্দেশ্য, বিশ্বাস, চেষ্টা, সততা ও বিশুদ্ধ ভালোবাসা। নারীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর (ভালো শিক্ষা, চাকরি, স্ত্রী ও মা হওয়া) মধ্যে মা হওয়ার স্বপ্ন বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়।কারও স্বপ্ন পূর্ণ হয়, কারও অধরাই রয়ে যায়। সহনশীল সাধারণত মা হওয়ার সময় থেকেই সৃষ্টিকর্তা করে দেয় হয়তো। অপূর্ব সৃষ্টির রহস্যে একদিকে যেমন চলতে থাকে বাবা-মায়ের স্বপ্ন, অন্যদিকে চলে একটা জীবন থেকে আর একটা জীবনের সৃষ্টির প্রক্রিয়া।তার জন্য নারীকে ভাস্বর হতে হয় ত্যাগের মহিমায়। ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম ছাড়াও চালিয়ে যেতে হয় পরিবারের, নিজের, আত্মীয় স্বজন,বন্ধু-বান্ধবের কমবেশি কাজ। কী করে সৃষ্টিকে সুস্থ রাখতে হবে, তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় সারাক্ষণ। নতুন পৃথিবী দেখার পরে শুরু হয় অন্তহীন ছুটে চলা। একজন বাইরে, অন্যজন ঘরে বাইরে দুই জায়গায় শ্রম দেয়।একটা কথা মনে পড়ে গেল, আমরা কখনো হরিণীকে বাঘের পিছনে ছুটতে দেখি না, কিন্তু সন্তান যখন বিপদে পড়ে তখন হরিণ-হরিণী বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মা -বাবা এমনই। তবে পা ফসকে পড়লে বা যেকোনো বিপদে পড়লে, মায়ের কথাই মুখে চলে আসে। কারণ জীবনের শুরু থেকেই বাবার চেয়ে মা হাঁটতে, পড়ে যাওয়া থেকে উঠতে, বড় হতে, শিখতে, সম্মান-শ্রদ্ধা করতে, ভালবাসতে, অন্যায় থেকে বিরত থাকতে, সৎ পথে চলতে, সত্য কথা বলতে ইত্যাদি শিখিয়ে থাকে বেশি। বাবার গতিশীলতা থেকে মায়ের গতিশীলতায় ভিন্নতা রয়েছে। এজন্যই বাবার চেয়ে মা সন্তানের মনের কথা, হৃদয়ের কথা বুঝতে ও বলতে পারে। এমনকি অনুপস্থিতির সময় ও বুঝতে পারে। এজন্যই হয়তো মাকে করুণার সাগরও বলা হয়ে থাকে।

মিতব্যায়ীতার কথা নিয়ে সবারই দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক রাখাই ভালো। গতিশীল ধনী-গরিব সব বাবা-মা থাকেন। কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের ভেতর, আবার কেউ কাঁধে লাঙল নিয়ে। সুখ আর স্বপ্ন সব বাবা-মা আশা করে। আপনি প্রকৃত সুখ তখনই পাবেন, যখন আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সবাই ভালো আছে। কেউ দুঃখে থাকলে তার জন্য অন্যজন শান্তিতে থাকতে পারে না। তাই সৎ উদ্দেশ্যে, উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রয়াস করলে সম্মানের সাথে শীর্ষে ওঠা যায়। এর প্রতিটি পদক্ষেপে মা-বাবা সন্তানকে দেয় সাহস, শক্তি, ধৈর্য্য, চেষ্টা, আশা ,আশীর্বাদ আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তাই বলে স্বপ্নের চূড়ায় উঠে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ কমবেশি সবাই শাপলা ফুলের গল্প জানি। যতই জল বাড়তে থাকে, ততই সে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করে এবং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে যশস্বী হয়। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে জল কমে গেলে তার সম্মানের ভার বহন করতে পারবে কিনা। তাই শাপলা ফুলের মতো বড় হতে হবে। কিন্তু বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার কথাও যেন ভুলে যেতে না হয়। সাধারণভাবে চলতে শেখাই সর্বোত্তম। মা-বাবা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সন্তানের জন্য শরীর, মন আর আশীর্বাদের ডালি নিয়ে নিরন্তর ছুটতে থাকে।

সবশেষে বলতে চাই, গতিশীলতা বাবা-মায়ের সহজাত প্রবণতা। পৃথিবীর সব বাবা-মা নিজেদের মতো করে গতিশীল থাকে। বাবা-মায়ের গতিশীলতা নিয়ে আসুক শুদ্ধতা ও শান্তি।
” গতিশীল থেকে বাবা-মা আনুক
সঠিক সুখের খোঁজ,
সন্তান গড়ুক ফুলের জীবন
সুরভী ছড়াক রোজ।”
লেখকঃ – প্রভাষক ,ফিজিওলজি ও বায়োকেমিষ্ট্রী ডিপার্টমেন্ট , ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মিরপুর,ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here