এক কাপ চা
সাহানুকা হাসান শিখা
লতিফা,এক কাপ চা নিয়ে আয় তো
ফোন কলের ওপার থেকে কথাটি
আমার হৃদয় চমকে দিলো।
আমার হৃদয়ে স্পন্দন হলো!!
আমি স্মৃতির পাতায় ফিরে গেলাম।
কোন এক দিন সকাল বিকাল আমিও
বলতাম বুয়া এক কাপ চা।
মনে থেকে মুছেই গিয়েছিল সেই হুকুমজারি
আজ কত যোগ হলো পড়ে আছি দারুচিনির দ্বীপে।
আমি আর রাত জাগতে পারবো না
ভোর চারটায় কাজে বের হতে হবে।
আমার আর লেখার সময় নেই,
খাতা কলম সব মুখ থুবরে।
ইস, নাস্তার প্লেটটা সরাতে পারলাম না
ফিরে এসে পাবো এখানেই আছে।
মাম্মি,মাম্মি,মাম্মি অবুজ মেয়েটির
চিৎকার আমার কান ভেদ করতে
পারে না,
আমি ইচ্ছে করে কানে নেই হেড ফোন
তার বাবার গাড়ির জানালা দিয়ে তাঁকিয়ে
আছে অশ্রু ভরা চোখে।
তার এই আত্মচিৎকার, আর কান্না
মাখা মুখ আমার হৃদয় কে গলাতে পারে না।
কারণ আমার মন এখন অফিসের টেবিলে
বসের হুকুমের অপেক্ষায়।
কাজের মাঝে ডুবে আছি, কখন চলে গেছে
লান্চের সময়, থাক আর টাকা খরচ করে
লাভ নেই, বাসায় গিয়ে খাবো,
সাবওয়েতে বসে ঘুম ঘুম চোখে এসে
পৌঁছাই গন্তব্যে,যাহ ,
টুক টুকের ক্লাশ শেষ হয়েছে, ওকে আনতে
হবে। ছুটি গাড়ি নিয়ে, মেয়েকে আদর দিচ্ছি, ক্ষিদায় পেট জ্বলছে, চিন্তা করছি
কি খাবো, বাসায় গিয়ে কিচেনে ঢুকতেই
মনে পড়লো গত রাতের লেফ্ট অভার তো
কিছুই ছিলো না।
এখন কি করি, ফ্রীজ খুলে দেখি দুটো ডিম
আছে, ভাগ্য ভালো বাচাঁ গেলো।
ব্রেড আর ডিম দিয়ে মা মেয়ের কাজ সারলো, বেচারা বাবা কি খাবে !
অটমিল আর কি বা আছে।
টুক টুক কে গোসল দিয়ে হোম ওয়ার্ক
করাতে করাতে রাত দশ টা।
নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ি। স্বপ্নের
মাঝেই রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া করে
আবার সকালে সেই কাজে আর মেয়ের
কান্নার আওয়াজে হারিয়ে যাই অফিসের
টেবিলে।
ছোট অবুঝ মেয়ে কে রেখে যাই ডে কেয়ারে। সে আমার সাথে থাকতে চায়।
বাবা নিয়ে ডে কেয়ারে রেখে কাজে চলে
যায় এই তার অভিযোগ।
এভাবে আরও কত কষ্টে কাটে বিদেশে
কর্মজিবী মায়ের জীবন।
একদিন আমার মেয়েটিও হয়ে যাবে আমার মত যান্ত্রিক এক মানবী।