বিশিষ্ট কবি-রীতা ধরের কবিতা“বেলা বয়ে যায়”

431
বিশিষ্ট কবি-রীতা ধরের কবিতা “বেলা বয়ে যায়”

“বেলা বয়ে যায় “
রীতা ধর

তুমি অথবা তোমরা যদি ভালো থাকো,,,
যদি তোমাদের হাসির শব্দ তীরের ফলার মতো নিশান উড়িয়ে আমার বুকে এসে বাজে,
অন্তরাত্মার অতল অন্ধকার আর দুঃখ যন্ত্রণার অশান্ত উর্মিমালা ভেদ করে
এই ভুবনডাঙার পথে পথে যদি
ছড়িয়ে দেয় সূর্যের প্রতিভাস ;
আকন্দের ঝোপ অথবা ঢোলকলমির পাঁপড়ি থেকে ঝলকে ঝলকে গড়িয়ে পড়ে যদি
একেক ফোঁটা আনন্দ জল,

অস্থির দাবদাহেও কালের অসীম বিন্দু থেকে স্ফুরিত হয় যদি বেদনাহীন দুঃখহীন মূর্ছনা,
জ্যোতিষ্ক আলোর বলয়ে ধন্য হয়
দয়িত আকাশ,
তোমাদের নিরন্ন উঠোনের
অবাধ ভাতের গন্ধ
হঠাৎ হৃদয় আন্দোলিত করে যদি,,,

আমার দুয়ারভাঙ্গা পথ যেখানে
মাটির ধুলোয় একাকার,
সেই মাটি থেকে, সূর্যের প্রতিভা থেকে
মুঠোভরে এনে দেব প্রগতির নতুন দিগন্ত।
আরক্ত চিত্তের বেদনা ভুলে শব্দকুহকের থরথর কাকলিতে সাজাব ধরিত্রীর বুক।

তোমাদের হাসির শব্দ নিয়ে,
বিন্দু বিন্দু আনন্দ জল নিয়ে, ভালোবাসার মনিহারে সাজিয়ে দুর্বার প্রতাপে
হৃদয় বিভা ছড়িয়ে দেব মেঘের নীলে,
আকাশের গায়ে সাদা মেঘ যেভাবে স্তরে স্তরে লিখে রাখে সহস্র না বলা কথার মহাকাব্য,,,

সে কবিতা আমার প্রাণ
সে কবিতা আমার সুখ,
সে কবিতা আমার ঐশ্বর্য
সে কবিতা আমাদের মহান জীবনের জয়গান।

তোমাদের হাভাতে মুখের মৃণালবিহীন সংলাপ,
তোমাদের করুনাবসন কঠিন বিলাপ যদি কেঁপে কেঁপে ওঠে মানবিক শিরা-উপশিরায়,
মনের ডালায় প্রসার হয় যদি তোমাদের
প্রশান্ত মন, তখন প্রতিটি কবিতা
এমনিই মহাকাব্য।

এই বাংলার মাটি সে কবিতার অহংকার
চিরায়ত সবুজ কবিতার অলংকার;
এই রুদ্রপলাশ, কৃষ্ণচূড়া, মুক্তোর দানার মতো ঘাস ফুল কবিতার নিরেট জ্যোতি আর
ফল ফুলন্ত মুখরতা সে কবিতার
প্রাণ।

আমি এমনি এক কবিতার জন্য খুঁজে ফিরি
তোমাদের ঠোঁট থেকে খসে পড়া পুলক হাসি,
খুঁজে খুঁজে আমার তৃষিত চোখের মনি হতে ঝরে যায় অবিনাশী অশ্রু, দীর্ঘশ্বাস চেপে
তবুও অতল তৃষ্ণায় তাকিয়ে রই
ভিখারির মতো;
যেভাবে বর্বর ক্ষুদা নিয়ে
খসখসে হাত দু’খানি মেলে আছো
শতাব্দীর দিকে।
তেমনি বেলা বয়ে যায় আমার, শুধু বয়ে যায় শেষবেলার অন্ধকারে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here