নন্দিত প্রকাশ
ড. হোসনেয়ারা বেগম
একটা বৃক্ষ ছিল যার প্রাতিস্বিকতা ছিল,
বলতে পার মহীরুহের মতো ছিল তাঁর বিস্তার;
পত্র পল্লবে শাখা প্রশাখায় অবস্থানে গৌরবে
বৃক্ষটি ছিল বাঙালির একান্ত দরকারী
ফুলে-ফলে সৌন্দর্যে কঠিন-কোমল ব্যক্তিত্বে
বৃক্ষটি ছিল অপার মহিমায় ভাস্বর
একদিন হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড় এল
প্রাকৃতিক ঝড় নয়, কৃত্রিম সৃষ্টি এ ঝড়,
এক ঘৃণ্য মানসিকতার ফসল এ ঝড়।
১৫ আগস্টের কালোরাতে তাণ্ডব ঘটাল,
কতিপয় কর্দম কালো হাত উদ্ধত হোল
পৈশাচিক উল্লাস সাধনে মাতল ওরা,
ওরা তো আর কেউ নয়! ওরা ছিল—
স্বগৃহে লালিত স্বদেশেরই ঘৃণ্য চক্র।
সে ঝড়ো তাণ্ডবে সতেজ বৃক্ষটির
পত্র-পল্লব-ফুল-ফল-শাখা-প্রশাখা
ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ল দিগ্বিদিক,
কচি নধর সম্ভাবনাময় সজীব পুষ্পটিকেও
ওরা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললো,
বৃক্ষটির ছাঁয়া ও দানে সতেজ হয়েছিল যারা
হীনলিপ্সায় কৃতঘ্ন হল সেই নরপিশাচেরা,
অবশেষে মূলসহবৃক্ষটি উপড়ে ফেললো ওরা।
সে ঘৃণ্য জঘন্য কালো ছায়ার আড়ালে
সে দিন মানবতা কেঁদেছিল গভীর বেদনায়
ঝড়ো তাণ্ডবের সে যামিনীতে
বেদনার কালো মেঘের ঝড় উঠেছিল
তারকা খচিত বিস্তৃত আকাশটিতেও।
অন্ধকারের সে তাণ্ডবে উপড়ানো
বৃক্ষ হতে ছিটকে পড়েছিল-দুটি প্রসূন;
প্রসূনদ্বয়ের ধমনিতে যে রুধির প্রবাহিত
তাতে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধুর নাম।
অচিরেই পুষ্প দুটি সতেজ হল,
পুষ্পিত হলো, পাপড়ি মেলল-
সুবিসিত হল- সুবাস ছড়াল চারিদিকে।
স্রোতসম সময় গড়িয়ে গেলেও
ঘৃন্য-হীন-জঘন্য হাতগুলো
পর্যদুস্ত হলো পথ পেল না পালাবার।
প্রতি বছর গভীর বেদনা মেখে
১৫ আগস্টের সূর্য ওঠে পূব আকাশে,
বেদনা ভারাক্রান্ত হয় প্রসূনদ্বয়,
তবু সে প্রসূন, ছড়ায় যে সুবাস
তারই আড়ালে ব্যপ্ত হয় বৃক্ষটির
বিশাল সত্তার নন্দিত প্রকাশ।