জীবন বোধের লেখক-হাসানুজ্জামান’র সমকালীন ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “পরিমনি”

322
সমকালীন ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “পরিমনি”

পরিমনি
হাসানুজ্জামান

সারা দেশে এখন আলোচনা চলছে পরিমনিকে নিয়ে। শহর থেকে গ্রামাজ্ঞলে এমনকি হাটবাজারে, চায়ের দোকানে কোথায় নেই এই আলোচনা। অনেকে পরিমনিকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে গান, কবিতা রচনা করেছে। বাবা-মা বিহীন এতিম একটি মেয়ে মফঃস্বল থেকে উঠে এসে ঢাকায় চলচিত্রে নাম লিখিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে আবার র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে দেশবাসির করুনার পাত্রী হয়েছে।
নড়াইলে জন্মগ্রহণ করা শামসুননাহার স্মৃতি নামের এই মেয়েটির বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার এবং মা ছিলেন গৃহিণী। স্মৃতি ছোটবেলা থাকতেই তার বাবা মা মারা যায়। পরবর্তীতে পিরোজপুরে নানা সামসুল হক গাজীর কাছে থেকে বড় হতে থাকে। বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পরবর্র্তীতে সাতক্ষিরা সরকারী কলেজে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হয়। সেখানে পড়াশোনা শেষ না করেই সে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় এসে নৃত্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। টিভি নাটকে অভিনয় করার মধ্যদিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে সোলায়মান মন্ডলের হাত ধরে বড় পর্দায় অর্থ্যাৎ ঢাকায় সিনেমায় নাম লেখায়। সেখান থেকে সামসুন নাহার স্মৃতি সিনেমায় হয়ে উঠে পরিমনি।
২০১৫ সালে ‘ ভালোবাসা সীমাহীন’ চলচিত্রের মাধ্যমে তার সিনেমায় অভিষেক হয়। কিন্তু এই সিনেমাটি ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও পরবর্তীতে ‘ রানা প্লাজা’ নামের চলচিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠে। এভাবে পর পর পঁচিশ’টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকায় সিনেমায় আলোচনার শীর্ষে চলে আসে এই পরিমনি। তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঢাকায় সিনেমায় এমন কথা চাউর হয়ে আছে স্বাধীনতার পরে পরিমনির মত আর কোন নায়িকা এতো অল্প সময়ে এতো অধিক সংখ্যক সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়নি।
ঢাকা বোর্ট ক্লাবে নাসিরউদ্দীন ইউসুফের বিরুদ্ধে একটি ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আসে পরিমনি। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করে । তারপরই নাসিরউদ্দিন ইউসুফ গ্রেফতার হয়। বিষয়টি মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলতে থাকে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। এ সময় অনেকেই মনে করেছিলেন নারী নির্যাতন বিশেষ করে পরিমনির ঘটনায় পার্টি নাসিরউদ্দিন ইউসুফকে দল থেকে বহিঃস্কার করবে। অন্ততপক্ষে বহিঃস্কার না করলেও তার প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দিলে দলের ভাবমূর্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেতো। সচেতন মানুষ তেমনটি আশা করেছিল কিন্তু পার্টি সেই পথে হাঁটেনি। এদিকে পরিমনির মফঃস্বল থেকে অভিভাবক বিহীনভাবে উঠে আসতে চলার পথে নানা ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। বিশেষ করে বার বার স্মামী বদল করার ঘটনাগুলি এদেশের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। উচ্ছৃন্খল জীবন যাপনও এদেশের সংস্কৃতির সাথে মেলে না। যদিও এসব বিষয়গুলো পরিমনির একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করা বা বেশি আলোচনা করা সমীচিন নয়। পরিমনির ঘটনায় পার্টি নাসিরউদ্দিন ইউসুফের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি বরং সংসদে পার্টির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান রাঙা পরিমনির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। এ ঘটনায় মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে , বিস্মিত হয়েছে পার্টির নেতার এমন বক্তব্যে। কয়েকদিন পরেই নাসিরউদ্দিন ইউসুফ জেল থেকে জামিন নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এসেছেন। এতো সহজে জামিন কিভাবে হলো তা নিয়েও জনমনে নানা রকম প্রশ্নের উদ্রেগ হয়েছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীর,মরিয়ম আক্তার মৌ, পিয়াসার পরপরই গেল ৪ আগষ্ট পরিমনিকে যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যে জনমনে নানা জল্পনা কল্পনা তৈরী হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজের শক্তি প্রদর্শন করতেই কি এমন গ্রেফতার? তারা কি রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে নাকি জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই যদি না হবে তবে এমন করে ঢাকঢোল পিটিয়ে গ্রেফতার করে সেটা আবার মিডিয়ায় লাইভ প্রচার করার উদ্দেশ্য কি ? দু’বোতল খালি মদের বোতল ঢাকার শহরের কোন বাসায় পাওয়া যায় না? এ সব ঘটনার পিছনে কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটাও দেখবার বিষয় ? পরিমনি একজন জনপ্রিয় নায়িকা হওয়া স্বওেঔ এই সময়ে চলচিত্র সমিতি তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। বরং বিচারের রায় ঘোষনার আগেই সমিতির সদস্য পদ থেকে পরিমনিকে বহিঃস্কার করেছে। শোনা যায় স্বল্প সময়ে পরিমনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠায় তার শত্রুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। বিপদের সময়ে তার পাশে এসে না দাঁড়ানো এবং সমিতির পদ থেকে পরিমনিকে বহিঃস্কার এসব তারই আলামত? নাসিরউদ্দিন ইউসুফের হঠাৎ করেই জামিন এবং হঠাৎ করেই পরিমনিকে গ্রেফতারে তার পার্টির নেতাদের কোন ভ’মিকা রয়েছে কিনা তা নিয়েও জল্পনা কল্পনা রয়েছে। ফেসবুকে সাধারণ পাবলিকের মধ্যে অনেকেই আবার মন্তব্য করতে গিয়ে সরকারকে দোষারোপ করে বলেছেন “ করোনা পরিস্তিতি মোকাবেলায় সরকারের নাজুক অবস্থা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই বড় কোন অভিযোগ ছাড়াই পরিমনিকে গ্রেফতার করেছে।” সাধারণ পাবলিকের মন্তব্য যায় হোক না কেন পরিমনির গ্রেফতারের বিষয়ে পরিমনির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে লন্ডন প্রবাসী লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জামাল উদ্দিন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন করেছেন পরিমনির জামিনের জন্য।
পরিমনি অভিভাবক বিহীন মফঃস্বল থেকে উঠে আসা একজন প্রতিভাময় নারী শিল্পী। তার জীবনের ছোট ছোট ত্রুটিগুলোকে মার্জনার দৃষ্ঠিতে দেখা যেতে পারে। সে যাতে নিজেকে সুধরে নিয়ে আবারও চলচিত্র জগতে প্রবেশ করতে পারে।
লেখকঃ গবেষক ও প্রাবন্ধিক। ০১৭১১-১০৮৭৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here