করোনা ক্রান্তি কালের বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “করোনা করেছে কামিলা ”লিখেছেন কলমযোদ্ধা ডাক্তার রীতা ওঝা

668
করোনা ক্রান্তি কালের বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “করোনা করেছে কামিলা ”লিখেছেন কলমযোদ্ধা ডাক্তার রীতা ওঝা

করোনা করেছে কামিলা——

                                            ডাক্তার রীতা ওঝা

.
কামিলা শব্দটি কিছুটা আঞ্চলিক। এর অর্থ কেজো বা কাজের লোক। নিজের কাজ নিজে করার জন্য অনেকটাই বাধ্য করছে করোনা। তবে নিজের কাজ অনেকে আগে থেকেই নিয়মিত করে আসছে।
ভোরবেলা থেকে রাতে ঘুমানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চলছে নিরন্তর ছুটে চলা আমাদের ছোট্ট গন্ডীর মাঝে। এর মাঝেই চলছে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা।আরও চলছে জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর বিভিন্ন প্রচেষ্টা। তবে করোনা বারবার মনে করিয়ে দেয়– ‘স্বকর্ম ছোট হলেও নিন্দনীয় নয়’।
আর এটাও ভাবায়..
‘দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ’।
তাছাড়া নিজেদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করার আনন্দই আলাদা।

একঘেয়েমি কাজ কারো ভালো লাগার কথা নয়। আর এটাও আমরা জানি… ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার আয়োজন চলছে নিয়মিত।
ভিন্নতা যেমন থাকে খাবারে তেমন থাকে আনন্দে। সময় কাটানোর জন্য সংস্কৃতির চর্চা, আঁকা, পড়ালেখা, খেলাধুলা, মুভি দেখা, টেলি চিকিৎসা, টেলিফোনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কমবেশি খোঁজ-খবর নেওয়া চলছে নিয়মিত।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি জুমে ক্লাস নেওয়ার চেয়ে ছেলের সাথে জুমে ক্লাস করার সময়টি খুব উপভোগ করি। ছোটদের ক্লাস করার উত্তেজনা, দুষ্টুমি, খুনসুটি খুব ভালো লাগে আমার।
কিছু নমুনা এমন… ‘মিস কেমন আছেন, আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না, হোম ওয়ার্কটা একটু আবার বলেন, আপনার ফোন নম্বারটা একটু দেন, এই দাগ দেয় কে, যে দুষ্ট সে করে, যার এত ইচ্ছা খাতায় কর, এই চিৎকার করো না’। ছোটদের এসব মিষ্টিমাখা আচরণ, সুন্দর হাসি আর চিৎকার-চেঁচামেচি কার না ভালো লাগে! অসাধারণ এক মূহুর্ত। একসাথে টিচার ,স্টুডেন্ট, নিজের সন্তান সম্পর্কে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়। সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টির মাঝে ভাল-মন্দ দুটোই থাকে। তার থেকে আমরা সবসময় আশা করি ভালোটাই গ্রহণ করবো।

কী অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা করি আমরা সময় কাটানোর জন্য। অথচ সময়ের মূল্য পড়েছি সময়ের গুরুত্ব বোঝার জন্য।এখন করোনার সময় যেন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় তা নিয়ে ভাবছি। আকাশে যেমন মেঘ না থাকলে সৌন্দর্য বোঝা যায় না, দুঃখ না থাকলে সুখের অনুভূতি বোঝা যায় না, তেমনি আমাদের অবহেলা নয়, কাজের মধ্য দিয়ে সময় কাটানোর কথা সব সময় মনে রাখতে হবে।
আরও একটা কথা মনে পড়ে গেল এ-প্রসঙ্গে..
‘দিব্যতা যত অধিক হয়
পতনও ততটাই ত্বরাণ্বিত হয়’। আশা করি করোনার ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে।

সর্বোপরি… ‘We are all created from enjoyable moment, so let’s enjoy our life with limitation’. অর্থাৎ আনন্দ থেকে আমাদের সৃষ্টি তাই জীবনকে আনন্দের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেই। আর কাজের মধ্যেই আনন্দ লুকিয়ে আছে। যদিও করোনা কাজ করিয়েই যাচ্ছে কিন্তু।
সবশেষে সবার জন্য অন্তরের গভীর থেকে আমার সাবলীল প্রার্থনা….
“কাজে ও আনন্দে যাক কেটে যাক
দুঃসময়ের ক্ষণ,
কষ্টের সাথে পাঞ্জা লড়ে
শক্ত থাকুক মন।”

লেখকঃ – প্রভাষক ,ফিজিওলজি ও বায়োকেমিষ্ট্রী ডিপার্টমেন্ট , ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মিরপুর,ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here