আমি যাযাবর নই
শারমিন সিদ্দিকী
পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। সময়ের আবর্তনে অনেক কিছু করতেওশেখায়। তাই বলে ইসলামের অনুশাসনের বাইরে নয়।
কিন্তু সমাজ কি সেটা কখনো বুঝে? আসলে সমাজ বলে কিছু নেই। সমাজ মানুষেরই তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র। যেখানে অনেকগুলো পরিবার মিলে একটি গোত্র তৈরি হয়, সৃষ্টি হয় একটি বৃহত্তর পরিবার। যার নাম সমাজ। আর এই সমাজের সদস্য কিন্তু আমাদের পরিবারের মতো সব সদস্যরা।
তাহলে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে, যদি পরিবারের সদস্যদের মানুসিকতা বা চিন্তাধারা সুন্দর হয়,তবেই একটি সুন্দর সমাজ তৈরি হবে।
কথা হচ্ছে, আমাদের ভাল-মন্দ কিছু হলেই আমরা পরিবারের সদস্যরা সমাজের দোহায় দেই।সমাজ এটাকে কিভাবে দেখবে, কিভাবে নিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন আমরা ভুলে যাই যে এই সমাজের সদস্যতো আমরাও। তাহলে শুধু শুধু সমাজের দোষ দিয়ে কি লাভ? নিন্দাতো করি আমরা। আমরা মানুষেরা, যাদের বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতি আছে। সমাজ তো মানুষের তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র। তার কি কখনও বিবেক, বুদ্ধি বা অনুভূতি থাকতে পারে?
না পারে না। সমাজের সদস্যদের বিবেক, বুদ্ধি দিয়েই সমাজ পরিচালিত হয়। প্রতিটি পরিবারে যেমন একজন কর্তা থাকে পরিবার পরিচালনার জন্য, ঠিক তেমনি সমাজেরও একজন কর্তা থাকে সমাজকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য। যাকে আমরা সাধারণত নেতা, মোড়ল,মাতাব্বর বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করে থাকি। কোন কোন পরিবারে কর্তার অনুপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু তাই বলে সেই পরিবারের কর্তা সমাজের মোড়ল বা অন্য কেউ হতে পারে না। ওই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যদি জ্ঞান – বুদ্ধি থাকে তাহলে মনে হয় তা হতে দেয়া যায় না।
আমাদের দেশের সমাজের দৃশ্যপট অঞ্চল ভেদে কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু কিছু সাধারণ বিষয় আছে যা কিনা সব সমাজেই বিদ্যমান।
যেমন ধরা যাক, কোন এক পরিবারের কর্তা অনুপস্থিত।তাহলে বুঝে নিতে হবে সেই পরিবারের সন্তান পিতৃহীন। কিন্তু বৃহত্তর পরিবারের মোড়ল বলেন বা মাতাব্বরই বলেন, উনারা যদি এসে বলেন, চিন্তা কর না আজ থেকে আমি তোমাদের বাবা। তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন আমাকে বলবে। তাহলে কি সেই মোড়লকে পরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিৎ? উত্তরটা আমি দিব না, কারণ উত্তরটা আপনাদের কাছেই আছে। হ্যাঁ সে হয়তো বলতে পারতো তোমরা মনোবল নিয়ে ধৈর্যের সাথে এগিয়ে চলো। আমরা সবাই তোমাদের সাথে আছি।
কোন নারী হয়তো অসময়ে স্বামী হারিয়েছে– তখন কথা আসে “তুমি বোরকা পড়, সমাজের মানুষ কি ভাববে? প্রশ্ন হচ্ছে কারা এই সমাজের মানুষগুলো? পর্দাপ্রথাতো ইসলামেই আছে। প্রত্যেক নর ও নারীর জন্য পর্দা ফরজ। তাহলে পর্দা করার কথাটা আগে না এসে স্বামীর অনুপস্থিতিতে আসলো কেন? এটাই কি আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য?
কোন , উচ্চবিত্তের মেয়ে স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে গেলে ওই মেয়ের অনেক ডিমান্ড।আর মধ্যবিত্তের কোন মেয়ে সন্তান মানুষ করার জন্য শহরের ফ্ল্যাট বাসায় থাকলে সেটা হবে গর্হিত। এটাই কি আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য? তাহলে আমরা কি আমাদের প্রশ্ন করতে পারি না, আমরা আসলে কী? মানুষ নাকি যাযাবর? আমার নিজেকে এই বৃহত্তর সমাজের সদস্য ভাবতে খুব ঘেন্যা হয়। কারণ আমি মানুষ, যাযাবর নই।