ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণ ধর্মী লেখা “ঈদুল _আজহা _স্মৃতিময় _শৈশব” লিখেছেন লন্ডন থেকে কলমযোদ্ধা নূরজাহান শিল্পী

510
ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণ ধর্মী লেখা “ঈদুল _আজহা _স্মৃতিময় _শৈশব” লিখেছেন লন্ডন থেকে কলমযোদ্ধা নূরজাহান শিল্পী

ঈদুল _আজহা _স্মৃতিময় _শৈশব

নূরজাহান শিল্পী

“তাকাব্বালল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা “
আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন |

ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গেলে শৈশবের ঈদগুলোই স্মৃতির আকাশে নক্ষত্রের মতো আজও জোত্যিময় ||
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া বড় মেয়ে আমি |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদগুলোই মনে হয় আমার কাছে অন্য রকম এক আবেদন ভালোলাগার |

ঈদের আর ক’দিন বাকি এই হিসাব করে দিন গোনাটাই ছিল সবচে বেশী আনন্দের |
তখন আমরা ঈদ কার্ড কিনতাম বন্ধু বান্ধব আত্মীয়দের পোস্টে পাঠাতাম ,ওদের কাছ থেকেও পেতাম কত যে কালেকশন ছিলো ঈদ কার্ড দিয়েই যেনো ঈদের আমেজটা শুরু হতো |
আজকাল যুগ বদলেছে এক সাথে একশো জনকে ঈদমুবারাক এসএমএস দেয়া হয় কিন্তূ সেই আবেদন আনন্দ নেই সব মেকি মনে হয় |

তারপর ঈদের কাপড় কেনার ধুম , আব্বার জমানো টাকা খরচের পালা বাজেট দিয়ে দিতেন , আমি বরাবরই একটু বাজেটের উপর চলে যেতাম এই একটা জায়গায় ছুটো ভাই বোনেরা আমার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে প্রতিটি ঈদে |
ঈদের কাপড় মন মতো না হলে ঈদের আনন্দটাই মাটি মনে হতো তারপর সেই কাপড় লুকিয়ে রাখার সীমাহীন প্রচেষ্টা ,কেউ দেখে ফেললে ঈদের আনন্দটাই শেষ |

আর ঈদের আগের রাত ছিল স্বপ্নময়। সেই ছোটবেলা চোখ কচলে কচলে বসে থাকতাম আম্মুর কোল ঘেঁসে, কয়েক রকমের পিঠা বানানো দেখতাম, বড়দের গল্পকথা কিছু বুঝে, কিছু না বুঝে শুনেই যেতাম।

ঈদের সকালের রূপটাই ছিল অন্যরকমের… ঈদ উপলক্ষে আম্মা নতুন সাবান শ্যাম্পু বের করে রাখতেন সবকিছু চকচকে পরিষ্কার ,ফজরের নামাজ পড়ে এসে আব্বা তাঁর স্নেহময় ডাকে ঘুম ভাঙ্গাতেন।
আম্মা সেমাই পায়েস রান্না করতেন |

ঈদ সেলামিটা ছিলো অন্যরকম এক আনন্দের |আব্বা চকচকে পাচ /দশ টাকার নোট দিতেন ,সারাদিন সেই নোট নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রান শুকতাম |
কে কত সেলামি পেয়েছে এই নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে ছিলো প্রতিযোগিতা|

তারপর শুরু হতো পশু জবাই এর মাধ্যমে কুরবানিকে আল্লাহর কাছে হালাল করা | আমি অবশ্য কখনো জবাই করার মুহূর্ত দেখিনি ,ভীষণ কষ্ট লাগে যখন আগের রাত দেখি গরু, খাসি ,খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় আর ওদের চোখে অশ্রু গড়ায় , আম্মা বলতেন ওরা জানে আগামীকাল কি হতে যাচ্ছে সেই ভয়ে .আমিও গভীর মমতা অনুভব করি সেই মমতায় এই দৃশ্য দেখা সম্বব হয়ে উঠেনি কখনো |

কিছু ভালোলাগা পুরানো হয়না ,
কিছু স্মৃতির কাছে ফিরতে ইচ্ছে করে বারবার |
দুপুরের খাবার এক সাথে যে যেখানেই থাকি এক হতেই হতো ,কুরবানীর মাংস বিতরণ শেষে মগজ ভোনা আর খাসির রেজালা আম্মার হাতে এই রান্নার স্বাধ আর সেই ছয় জনের টেবিল আজও আমায় নস্টালজিক করে দেয় |

তারপর ঘুরাঘুরি আর সমস্ত দিন শেষে সবাই মিলে রাতে ঈদের নাটক ..বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে নিজের সংসারে ছেলেমেয়ে শশুড়বাড়ির সবার সাথে সেই ঈদের আমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করেছি করছি তবে ..

ঈদের স্মৃতিচারণ জীবন্ত হয়ে ঊঠে শৈশবের অনুভুতিগুলোর সাথেই এ এক বহুমাত্রিক আনন্দের ফল্গুধারা |
স্মৃতির খাতায় পিছুডাকা সেই শৈশব আজ খুঁজে পাই, বস্ত্রহীন শিশুদের ঈদ বস্ত্র বিতরণের নির্মল হাসির ঝিলিকে , অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ঈদের স্বার্থকতা খুঁজে নেয়ার প্রয়াসে |

আমাদের মুক্তি কেবল আলোতেই সম্ভব ,
আর আলো কেবলই মহান রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমেই আসবে|

ঈদ উল আজহা মুসলমানদের জীবনে শুধু মাত্র আনন্দ উৎসব নয় ,ত্যাগের এক ঊজ্জল দৃষ্টান্ত , পশু কুরবানীর মধ্য দিয়ে আমরা যেনো আমাদের মনের পশুকে কুরবানী দিতে পারি|

লেখক লন্ডনের বাংলাভাষী পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনায় আছেন 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here