সাহিত্যের অন্যতম সারথি-শাহিদা ইসলামের ভিন্নধর্মী গল্প“অনিশ্চয়তা”

320
সাহিত্যের অন্যতম সারথি- শাহিদা ইসলামের ভিন্নধর্মী গল্প “অনিশ্চয়তা”

অনিশ্চয়তা
শাহিদা ইসলাম

এক ঝলক বিদ্যুৎ, তার পরেই কড় কড়া করে মেঘের গর্জন হলো।এর মধ্যে কখন রোদ মিলিয়ে গেছে খেয়াল করি নাই,আকাশ ঢেকে গেছে মেঘে।
একটা বিশাল কালো মেঘ দুলতে দুলতে আসছে দক্ষিণ দিক থেকে,মেঘ যখন নিচু হয়ে আসে তখন ঠেলে আসে বাতাস,ঠিক কড়া না,হাল্কা বাতাস এসে লাগছে গায়ে।
ঘামে শরীর ভিজে গিয়েছিল। শরীর এখন চাইছে বৃষ্টি, ভিজতে পারলেই শান্তি হতো।

মায়া জানতে চাইল,দীপ্তির আসার কি হল।
আমাদের হেম কাকু বলল,নাহ আজ আর ওরা আসবে না,ওদের শুভ কাজেই যত বাধা।

মা চেঁচিয়ে বলল, আরে মানুষের বিপদ দেখবি না তোরা। রাহুলের বাবার অসুখ হাসপাতালে নিয়ে গেছে , মায়া দেখে এসেছে,তার পরেও কেন এত কথা বলিস তোরা।

মায়াকে তারা খুব পছন্দ করেছে,রাহুল মায়াকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে।বাবার অসুখ এই কথাটা কেউ মানতে চায় না।তাই মায়াকেই নিয়ে দেখিয়ে এসেছে।

ওহ আপনাদের পরিচয় বলি নাই মায়া আমার বোন।আমি ওর বড়,আমার বিয়ে হয় নাই,না থুক্কু আমি করি নাই,ছেলের বাড়ির লোক যৌতুক চায়।
আমার বাবার সামান্য আয়,সেই আয়ে সংসার চলাই দায়,পণের টাকা দেবে কিভাবে?

মায়া এবার অনার্স-মাস্টার্স শেষ করল,রাহুল আসা যাওয়ার পথে দেখে পছন্দ করেছে,প্রস্তাব এলেও বাবা মায়ের মনে আতংক, ছেলেকে কিছু না হলেও একটা আংটি, গলার চেন,ঘড়ি দিতে হবে,পোশাক দিতে হবে।

বাবা সারাক্ষণ হিসাব নিকাশ নিয়ে খাতা কলমের কাটাকুটি করে, বাবার লিষ্টে একটা করে আইটেম বাড়ে,বাবা অন্য জায়গা থেকে কমায়,কাটছাঁট করে কত কমানো বাড়ানো যায়?

মায়া বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্ট পায়,একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মুখের দিকে তাকানো যায় না,চোখ কুঠোরের মধ্যে চলে গেছে।
ওদিকে রাহুলের বাবা আই সি ইউতে।

বাবার কষ্টআর্জিত টাকা দিয়ে সমস্ত জিনিস টুকটুক করে কিনছে, তার মধ্যে বাবার এজমা,শ্বাস কষ্ট বেড়েছে। বাড়ির সবার মনের কোনে কু চিন্তা উঁকি দিচ্ছে।

বাবার সাথে আমি মার্কেটিং করতে বের হয়েছিলাম,বাবা এক টাকা গুনে দেয়,দেবার স্টাইল যেন হাজার টাকার একটা নোট বেশি চলে গেল।
আমার বিয়ে হয় নাই যে কারণে, মায়ার বিয়ে দিতেই হবে,মায়া কেন আমার মত সেক্রিফাইজ করবে? সংসারের বড়রা বলদ হয়।

আজ কয়দিন রাহুলের কোন খবর নেই,সেলফোন বন্ধ।সারা বাড়ি ঘুরে মায়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,মনু চাচি অর্ধেক বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বলছে, কি রে,মা য়া ক ই? তাই তো আমাদের সবার টনক নড়ল,ভাড়াটিয়ার ঘরে নেই,বাড়ির মেইন গেট বন্ধ, আমি পিছন দরজা দেখতে গেলাম,যেই দরজা দিয়ে শুধু সুইপার ঢোকে,দরজা বাইরে থেকে দুই আংটা ধরে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে গেছে।

তাহলে মায়া কি রাহুলের সাথে? নাহ এমন মেয়ে মায়া না, আমার বোন বলে বলছি না,মায়া নাম সার্থক, মনে খুব মায়া,অল্পতেই চোখে জল আসে।

সন্ধ্যায় মায়া ফিরে এলো,হা রাহুলের বাবাকে দেখতে গিয়েছিল,উনাকে বাড়িতে আনা হয়েছে, এখন ভালোর দিকে।

রাহুল আজকাল বাড়িতে আসে,বাবার অসুখ ভালোর দিকে,কিন্তু বিয়ের কথা বলে না,মায়াও নিজে থেকে বলে হাল্কা হতে চায় না,

ইদানিং পাশের বাড়ির রিনা আমাদের ছাদে আসে,রাহুল ওর সাথে খুব ভাব দেখায়,মায়া যেন ভাসমান কচুরিপানা।
একদিন লোডশেডিং হলো, রিনাকে কে পৌছে দেবে,রাহুল আগ বাড়িয়ে বলে উঠলো,চলো আমি এগিয়ে দেই। রিনা হেহে হেসে বলল,চলেন রাহুল ভাই,
রাস্তায় নেমে রাহুল রিনার হাত ধরে এগুচ্ছে, মায়া ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে দেখছে, বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব করছে,
একটু দূরে যেতেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। মায়া ছাদ থেকে নেমে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়ল।

সব শুনে শান্তনা দিয়ে বললাম,আরে চোখে ভুল দেখেছিস,অন্ধকারে তুই ছায়া দেখেছিস। মানুষের ছায়া জড়িয়ে গিয়েছিল।
মনে মনে বললাম সাধে কি আমি এই বিয়ে নামক একটা ঠুনকো সম্পর্কে জড়াই নাই।
মায়া ভাবছে এই বিয়ে আমি করব না,বাবাকেও বলতে পারব না,এই নোংরামির কথা,

বিয়ের আগেই এই নোংরামি, বিয়ের পর এই স্বভাব পাল্টাবে না, রাহুলের দিদি এলো,বিয়ের আলাপ করতে,রাহুলের গুনগান শুনে বাবার মুখ উজ্জ্বল আলোর মত জ্বল জ্বল করছে,ছেলে কবিতা লেখে,গল্প লেখে,তাছাড়া বিজনেসে এওয়ার্ড পেয়েছে। রাহুলের পছন্দ যেখানে, সেখানে আমরা রাজি।

মায়া সত সাহস নিয়ে এগিয়ে গেল, বাবা আমার কিছু বলার ছিল,বাবা স্পষ্ট ভাষায় বলল,নাহ মা, বিয়ের কনে কিছু বলতে হয় না,এমন আদব কায়দায় তোমাদের গড়ে তুলি নাই। মায়া চোখে মুখে সর্ষে ফুল দেখল।ছুটে এল আমার ঘরে,দিদি আমাকে বাঁচা।

আমি ছেলেদের সাথে কোন রকম বন্ধুত্ব করি নাই তুই দেখেছিস মায়া,কারণ আমিও তোর মত ধোকা খেয়েছিলাম মিলনের কাছে,ক্লাসমেট যদি ধোকা দিতে পারে,আর রাহুল তো পথে দেখা ছেলে।

এখন বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যা।জীবনকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দে,
বিকালে রাহুল এলো,মায়ার মুখ বিষন্ন দেখে জানতে চাইল কি হয়েছে?

কিছু না,তোমার দিদি এসেছিল,বিয়ের দিন ঠিক করতে,বাবা এখন সুস্থ হয়েছে তাই
রাহুলের চোখে মুখে হতাশার ছাপ,বিয়ে? আমি বাবাকে নিয়ে চিন্তিত, এখন বিয়ে প্রসংগ বাদ।জীবনে বেঁচে থাকলে শুভ কাজ হবে।

মায়ার মনে প্রশান্তি লাগলেও রাহুলের উপর ক্ষোভ হচ্ছিল,বেঈমান পুরুষ।
ভালোবাসা মানেই আস্থার জায়গা,কার উপর এই আস্থা আনবে? ভালোবাসা মানেই বিশ্বাস শ্রদ্ধা বোধ।যাকে নিয়ে ঘর বাঁধবো তাকে বিশ্বাস করবো না তাই কি হয়? বাবা মায়ের ভালোবাসা এখনো তাজা গোলাপ।বাবা মাকে খুব সন্মান করে,মা বাবাকে শ্রদ্ধা করে।
বাবার এজমা,শ্বাস কষ্ট, কখন কি হয়, বাবা দিন গুনছে,অথচ বিয়ে দিন তারিখ নিয়ে ভুগছে মায়া, আমাদের সব কিছু এখন অনিশ্চয়তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here