মননে একুশ
নাসরিন জাহান মাধুরী
জন্মের পর যখন ডাকতে শিখেছি
মাকে মা বাবাকে বাবা বলেছি
ভাষা মানে কি তখনো জানা হয়নি..
তবুও মায়ের মুখে ছড়া শুনেছি
ঘুম পাড়ানি গান শুনেছি
বাবা যখন গলা ছেড়ে গাইতেন-
ডাকাত যেন ছুড়ি হেন মাছ রাঙার ঠোঁট
হায় হায়রে মাছটা এবার যাবে মরে!
শুধু অবাক হয়ে শুনতাম
মুগ্ধ চোখে বাবাকে দেখতাম—
তারপর হাঁটি হাঁটি পা পা করে
যেদিন ভাইয়ের সাথে স্কুলে গেলাম!
ঢং ঢং ঢং বেল পড়লো যখন!
সবাই স্কুলের মঠে লাইনে দাঁলালাম
ওরা কি গাইছে? কিছুই বুঝিনা…
মাকে এসে বলেছি ঐ দুর্বোধ্য গানের কথা
মা বললেন এটা আমাদের জাতীয় সংগীত
বললাম মা আমি কিছুই বুঝিনি কেন?
মা বললেন এটা উর্দু ভাষা…
ভাবছি এ আবার কি?
ভাষা কি? জানিনা তো!
তারপর! একাত্তরের সেই রক্তক্ষয়ী বিজয়ের পর
স্কুলের প্রথম দিনে আবার ঘন্টা বাজলো
আবার সবাই স্কুলের মাঠে
সবাই গাইছে…
“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি “
আমি চমকে ওঠি!
এ শব্দগুলো আমার খুব চেনা!
মায়ের মুখে বাবার মুখে শোনা!
তারপর সময়ের সাথে সাথে জেনেছি
কেনো ওরা আমার মায়ের ভাষা আমার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো
কেন শেকল পড়াতে চেয়েছিলো..
সেই শিকল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো
সেইদিন রফিক,শফিক, আসাদ, বরকত-
আসাদের রক্তাক্ত শার্ট
এই বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস আগলে রাখার এক অবিস্মরণীয় প্রতিবাদ..
৫২র সেই ২১ ফেব্রুয়ারি ! আমি কি ভুলিতে পারি!
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি”…