জীবন-১
খাতুনে জান্নাত
জীবন আমার পাশে এসে চুপটি করে বস
এলোখোপার উদাস বাতাস হাতের মুঠোয় রাখ
ছুমনতরে দুঃখগুলো উড়িয়ে নিয়ে যা
পদ্মপাতার শিশির যেমন রোদের হাসি হাসে-
বিকেল বেলায় শিউলি তলে উড়নি পাতার ঘা
জীবন হাতে-হাতটি রেখে একটু গুনগুনা
এখানে নয় ওখানে নয় অন্য কোনখানে
একটু বসি আবার বসি আবার উঠে দৌড়
জীবন ওরে কোথায় এলি এ কোন সোনার গাঁ!
এখানেই তো ঘুমিয়ে আছে কাতর চেতনা।
জীবন একটু দাঁড়া ওরে ঘুম ভাঙিয়ে যা….
জীবন-২
আলোক পাখি অরুণ পাখি হাতের মুঠোয় বস
জীবন কত কিছুই দিল ধোকা কিংবা যশ–
তোকে ধরা হলো না যে বেলা ব’য়ে যায়
বৈঠা বাওয়া উজান মুখে–কত যাওয়া যায়!
তুই ধরা দে–উড়নী হাওয়ায় ঘূর্ণী খেয়ে আয়
ডাকছে দূরের নিপবন ও বাপ-মা মমতায়
হিরক রঙের দিনগুলোকে নিয়েছি ওড়নায়
হারিয়ে যাব রঙের মেলায় মিশে আমার গাঁয়
আলোক পাখি অরূণ পাখি তোর রাঙা ঠোঁটে
বেঁধে দেব স্বপ্ন আমার ছুটিস লোকে লোকে…
পাথর সময় পেরিয়ে যারা দাঁড়ায় অটুট
তাদের চোখের মুগ্ধ আলোয় পৃথিবী গড়ুক।
জীবন-৩
জীবন এখন মাথার উপর দাঁড়ায় হ’য়ে ভার
সাপুড়ে সে কানের কাছে বাজায় জোরে বীণ
সাপগুলো সব বুকের খাঁচায় নাচে তাধিন ধিন
কষ্টগুলো মুষলধারে অশ্রু ঢালে গালে
ইচ্ছেগুলো ঘাইহরিণী ছোটে পালে পালে
জীবন সিংহ-বাঘিনী হয় একলাফে সাবাড়।
জীবন ওরে জীবন
তোকে পেতে পেরিয়ে এলাম কাল-মহাকাল-
মহাসাগর-বন
মেঘের ডানায় ভাবনাগুলো গর্জে ওঠে ঝড়ে
ভয়ালতর কালবৈশাখী, ছেঁড়াঘুড়ি
নাটাই সটান পড়ে –ছাদনা তলায়–
জীবন ফাঁসের রশি হয়ে চড়তে যে চায় গলায়…
জীবন নামের রূপকাহিনী বাস্তবতার খড়ে
জ্বলেপুড়ে খাক হয় যে একটু ভুলের প’রে
গুটি-গুটি তন্তুগুটি, ঘরবাঁধা ঘর নড়ে
শক্ত হাতে ধরতে গেলে হাতদুটো নড়বড়ে
প্রিয়-অতিপ্রিয়জনে ভুলতে থাকে নাম
জীবন তোকে লিখতে গেলে ছুটতে থাকে ঘাম..
প্রত্যেকটা লাইন অসাধারণ।
কবি খাতুনে জান্নাতের প্রতিটি কবিতাই অসাধারণ। পাঠকের মনে বিমুগ্ধতার রেশ রয়ে যায় ।